ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ প্রায় অর্ধযুগ আগে রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ভিডিও মামলা দেওয়ার উদ্যোগ নেয় । কিন্তু ট্রাফিকের এ ভিডিওতে ধরা পড়ে না বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন গণপরিবহন। অথচ গণপরিবহনের যত্রতত্র অবৈধ পার্কিং আর রাস্তার মাঝখানে থামিয়ে যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানো-নামানোয় সৃষ্টি হয় যানজট। এতে বেসামাল হয়ে পড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। তবু সড়কে অপরাধের চার ভাগের এক ভাগও ভিডিও মামলা এদের বিরুদ্ধে করা হয় না। সুশৃঙ্খল আর নিয়মের মধ্যে থাকার পরও ভিডিও মামলার সংখ্যা বেশি প্রাইভেট কারের বিরুদ্ধে। ঢাকার বিভিন্ন সড়কে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কোনো গাড়ি উল্টো পথে গেলে বা সিগন্যাল না মানলে কিংবা রাস্তার পাশে যত্রতত্র পার্কিং করে রাখলে ভিডিও করে রাখা হয়। ভিডিও ক্যামেরা বেশি দেখা না গেলেও ট্রাফিক সার্জেন্ট বা কনস্টেবলরা তাদের মোবাইল ফোনে ভিডিও বা ছবি তুলে রাখেন। পরে এ ভিডিও ফুটেজ বা স্থিরচিত্র জমা হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদর দফতরের ট্রাফিক বিভাগে। যেসব গাড়ি আইন অমান্য করছে ওইসব গাড়ির মালিকের তথ্য বিআরটিএ থেকে সংগ্রহ করে মালিককে ডাকা হয় ট্রাফিক পুলিশ দফতরে। ভিডিও মামলা দেওয়ার পর ট্রাফিক পুলিশের দফতরে আসা গাড়ির মালিককে ওই ভিডিও দেখানো হয়। এরপর অপরাধের জন্য জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। কেউ জরিমানা দিতে না চাইলে সেই তথ্যও বিআরটিএকে জানিয়ে ফিটনেস সনদ না দেওয়ার সুপারিশ করে ট্রাফিক বিভাগ। এ ছাড়া পথে মামলা-জরিমানা তো আছেই। এভাবেই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে জোরদার করা হয়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। মতিঝিল, গুলিস্তান, পল্টন মোড়, কাকরাইল মোড়, নাইটিঙ্গেল মোড়, মৌচাক মোড়, মগবাজার মোড়, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, মহাখালী, সাতরাস্তা, মালিবাগ রেলগেট, চৌধুরীপাড়া আবুল হোটেল, রামপুরা বাজার, রামপুরা টিভি সেন্টার ও ব্রিজ, মধ্যবাড্ডা, বাড্ডা লিঙ্ক রোড, উত্তর বাড্ডা, নতুন বাজার, নর্দ্দা, বিমানবন্দর ও খিলক্ষেত ফুটওভার ব্রিজের নিচে রাস্তার মাঝখানে বাঁকা করে দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো করে গণপরিবহনগুলো। এসব স্থানে বাসচালকদের বেপরোয়া প্রতিযোগিতা করতেও দেখা যায়। প্রতিটি মোড়ে ট্রাফিকের কর্মকর্তারা দায়িত্বরত থাকলেও ওইসব বাসের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কিন্তু কোনো একটি প্রাইভেট কার ফাঁকা রাস্তার পাশে দাঁড় করালেও ভিডিও মামলা দেওয়া হয়। একাধিক ট্রাফিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশির ভাগ গণপরিবহনের কাগজপত্র ঠিক নেই। তাই এদের বিরুদ্ধে ভিডিও মামলা দিলেও কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। এ কারণে এদের বিরুদ্ধে ভিডিও মামলা দিয়ে কোনো লাভ হয় না। তবে এদের জন্য রয়েছে অন্য ধরনের ব্যবস্থা। এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহাম্মদ জানান, আইন ভেঙে কেউই পার পায় না। আর গণপরিবহনগুলো চলে নির্দিষ্ট রুটে। তাদের সব ধরনের তথ্য বিআরটিএ ছাড়াও তাদের কাছেও রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক সার্জেন্টরা দায়িত্ব পালন করেন, তাই কোনো ধরনের অপরাধ করে কারও পালানোর সুযোগ নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৩ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ভিডিও মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। স্বল্পপরিসরে রাজধানীর দুই বিভাগের দুটি টিম দিয়ে এ কার্যক্রম চলে। ২০১৭ সাল থেকে পুরোদমে মাঠে নামে ট্রাফিক বিভাগ। গত বছর ঢাকা শহরের মধ্যে চারটি টিম বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াত। এখন প্রত্যেক ট্রাফিক সার্জেন্ট নিজ মোবাইলে ভিডিও করে মামলা দেন। আর যেসব এলাকায় সার্জেন্ট থাকেন না, সেসব এলাকায় কাজ করেন ট্রাফিকের মিডিয়া টিমের সদস্যরা। ২০১৬ সালে ভিডিও ফুটেজ থেকে মামলা করা হয়েছিল ৬ হাজার ৭৪৯টি। আর ২০১৭ সালে সেখানে মামলা হয় ২৪ হাজার ৩৬৯টি। গত বছর ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সব ধরনের মামলার সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৩০ হাজার ৭৫৭। তবে গত নভেম্বরে একটিও মামলা কিংবা জরিমানা আদায় করা হয়নি। গত ডিসেম্বরের ট্রাফিক পূর্ব বিভাগের অধীনে কোনো মামলা হয়নি। তবে ট্রাফিক পশ্চিমে মামলা হয় ১৮২টি, ট্রাফিক উত্তরে হয় ৬০৩টি ও ট্রাফিক দক্ষিণে মামলা হয় ১৭৮টি।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031