সরকার সম্প্রতি চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় দেশের উৎপাদিত কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে একদিকে সরকার বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অন্যদিকে কাঁকড়া শিল্পের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার চাষি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সেই সাথে ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকদেরও দুশ্চিন্তার শেষ নেই। রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকলে চাষিরা দারুণভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মনে করছে সরকারের মৎস্য বিভাগ। কবে নাগাদ এই নিষেধাজ্ঞা উঠবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।

সরেজমিনে বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কাঁকড়া চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

গত ২৩ জানুয়ারি থেকে দেশের বাইরে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ করে দেয় সরকার। রপ্তানি আয়ে চিংড়ির পরেই কাঁকড়ার অবস্থান। দক্ষিণাঞ্চলের বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় কাঁকড়ার চাষ হয়ে থাকে। লোনা পানিতে শিলা জাতের কাঁকড়া চাষ করেন চাষিরা। কাঁকড়া চাষে ঝুঁকি কম হওয়ায় গত প্রায় এক দশক ধরে কয়েক হাজার চাষি কাঁকড়া চাষ করে আসছেন। লাভজনক হওয়ায় দিনদিন কাঁকড়া চাষে ঝুঁকছেন এসব জেলার চাষিরা।

কাঁকড়া উৎপাদনের অন্যতম জেলা বাগেরহাট। এই জেলার সাত উপজেলায় এক হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে তিন হাজার ৭৭৮টি কাঁকড়ার খামার রয়েছে। এজেলার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় তিন হাজার মেট্রিক টন।

ফিমেল (নারী) এক কেজি শিলা কাঁকড়া ২২০০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আর মেল (পুরুষ) আটশ টাকা থেকে ১২০০ টাকায় বাজারে বিক্রি করেন এখানকার চাষিরা।

বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের মাঝিডাঙা গ্রামের কাঁকড়া চাষি মো. শেখ সেলিম ঢাকা টাইমসকে বলেন, লাভজনক হওয়ায় সাত আট বছর ধরে কাঁকড়ার চাষ করছি। পাঁচ বিঘা জমিতে এবছর অন্তত ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। বিনিয়োগের অধিকাংশ টাকা ব্যাংক ও এনজিও থেকে নেয়া। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিতে আমরা খামার থেকে কাঁকড়া ধরে বাজারে বিক্রি করি। এসময়ে বিদেশে কাঁকড়ার বিপুল চাহিদা থাকে। কাঁকড়া বিক্রি শুরু হতে না হতেই চায়নায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় গত ২২ জানুয়ারি থেকে স্থানীয় ডিপো মালিকরা কাঁকড়া কেনা বন্ধ করে রেখেছে। বড় হয়ে যাওয়া পূর্ণ বয়সের এই কাঁকড়া কিন্তু বেশিদিন খামারে রাখা যায় না। ভরা মৌসুমে কাঁকড়া ধরে বিক্রি করতে না পারার কারণে খামারে প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে। এতে আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। কবে এই কাঁকড়া ধরে বাজারে বিক্রি করতে পারব তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

স্বপন কুমার সাহা, মনোজিত মন্ডলসহ অনেক চাষি বলেন, চীনে আমাদের এই কাঁকড়া রপ্তানি হয়ে থাকে। মৌসুমের ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চীনে কাঁকড়া বিপুল চাহিদা থাকে। এই সময়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় চীন আমাদের কাঁকড়া নিচ্ছে না। যার কারণে আমরা খামার থেকে কাঁকড়া ধরা বন্ধ করে দিয়েছি। খামার থেকে ধরা বন্ধ থাকায় প্রতিদিনই কাঁকড়া মরছে। আমরা অনেকেই ব্যাংক, এনজিও ও মহাজনদের কাছ থেকে ঝণ নিয়ে এই চাষে বিনিয়োগ করেছি। এই কাঁকড়া বিক্রি করতে না পারলে আমাদের লাখ লাখ টাকার লোকসান হবে। আমাদের কাঁকড়া শিল্প বাঁচাতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান ওই চাষিরা।

বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অমল কান্তি রায় ঢাকা টাইমসকে বলেন, কাঁকড়া উৎপাদনে বাগেরহাট জেলা অন্যতম। দেশের মোট রপ্তানির ত্রিশভাগেরও বেশি কাঁকড়া যায় এজেলা থেকে। ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই তিন মাসে চীনে নানা উৎসব থাকে। এসময় বিপুল পরিমাণ কাঁকড়া তারা আমাদের দেশ থেকে নিয়ে থাকে। মোট রপ্তানির ৭০ থেকে আশি ভাগ কাঁকড়া চীনের বাজারে আমরা দিয়ে থাকি। এই ভরা মৌসুমে চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় তারা কাঁকড়া নিচ্ছে না। তাই গত ২৩ জানুয়ারি থেকে সরকার কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। কাঁকড়া রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে না গেলে এখানকার চাষিদের দারুণভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলে আশংকা করছেন এই মৎস্য কর্মকর্তা।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031