মাত্র এক বারের কাশি থেকেই বের হতে পারে এরকম তিন হাজার ড্রপলেট। করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সময় তার নাক ও মুখ দিয়ে যে জলীয় কণা বা ড্রপলেট বাতাসে বের হয়ে আসে তার মাধ্যমে জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ড্রপলেটের এই কণা গিয়ে পড়তে পারে আরেকজনের গায়ে, কাপড়ে এবং আশপাশের জিনিসের উপর। তবে কিছু ক্ষুদ্র কণা থেকে যেতে পারে বাতাসেও। দেখা গেছে এই ভাইরাস মল-মূত্রের মধ্যেও অনেক সময় বেঁচে থাকতে পারে। টয়লেট থেকে ফিরে ভাল করে হাত না ধুলে তার হাতের স্পর্শের সাহায্যে আরো অনেক কিছুতেই এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বলছে, ভাইরাসটি লেগে আছে এরকম কোনো বস্তু স্পর্শ করার পর হাত দিয়ে যদি মুখ স্পর্শ করা হয় তাহলে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। তবে এটিই এই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার প্রধান উপায় নয়।

কোন পৃষ্ঠতলে এই ভাইরাস কতদিন বাঁচে বা সেই পৃষ্ঠদেশের সংস্পর্শে কোনও আক্রান্ত রোগী এলে, কতদিন পর্যন্ত সেই পৃষ্ঠদেশ থেকে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

দেখা গিয়েছে করোনাভাইরাস সবচেয়ে বেশি দিন বাঁচতে পারে পলিপ্রোপিলিনের উপর। পাঁচ দিন পর্যন্ত এর উপর বেঁচে থাকতে পারে করোনাভাইরাস।

পলিপ্রোপিলিন এক ধরনের প্লাস্টিক। এই ধরনের প্লাস্টিক দিয়েই বাচ্চাদের খেলনা থেকে শুরু করে প্লাস্টিকের টিফিন বক্স তৈরি করা হয়।

দ্বিতীয় যে পৃষ্ঠদেশের উপর করোনাভাইরাস বেশি ক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে, তা হল কাগজ। তবে প্রথমেই বলে রাখা দরকার, গবেষকরা জানিয়েছেন, খবরের কাগজ থেকে কোনওভাবেই এই ভাইরাস ছড়াতে পারে না।

কারণ কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক কানাইচন্দ্র পাল বলছেন, ‘‘কাগজের মাধ্যমে এই সংক্রমণ ছড়ানোর কোনও আশঙ্কাই নেই। কাগজ যা দিয়ে তৈরি, বিশেষ করে সংবাদপত্রের প্রক্রিয়াকরণের সময়ে যে সমস্ত রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, তার উপরে ড্রপলেটের বেঁচে থাকা অসম্ভব।’’

তবে গবেষকেরা জানিয়েছেন, খবরের কাগজ ছাড়া অন্যান্য কাগজের উপর ৪-৫ দিন বেঁচে থাকতে পারে করোনাভাইরাস। তৃতীয় যে পৃষ্ঠদেশের উপর করোনাভাইরাস বেশি ক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে, তা হল কাচ। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কাচ জাতীয় কোনও পৃষ্ঠদেশের উপর অন্তত চার দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে করোনাভাইরাস।

ফলে কাচে হাত দিলে, নিয়ম-বিধি মেনে ভাল করে হাত পরিষ্কার করে নেওয়া প্রয়োজন। বাড়ির জানলার কাচগুলো প্রয়োজনে ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করা দরকার।

একই ভাবে কাচের মতো সমান সংক্রমণযোগ্য হল কাঠ। কাঠের বস্তুর উপর এই ভাইরাস চার দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। তাই গবেষকেরা জানাচ্ছেন, কাঠের কোনও বস্তুতে হাত দিলে, তার পরই যেন কোনও ভাবেই হাত মুখে বা নাকে না যায় এবং ভাল করে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলা জরুরি।

এর পর যে পৃষ্ঠদেশের উপর করোনাভাইরাস বেশি ক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে, তা হল স্টেইনলেস স্টিল। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, স্টেইনলেস স্টিলের উপর এই ভাইরাস ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সক্রিয় থাকে।

কোনও আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে যদি করোনাভাইরাসের জীবাণু ড্রপলেটের মাধ্যমে কোনও স্টিলের উপরে পড়ে, তাহলে ৪৮ ঘণ্টা পরও তা থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

সার্জিক্যাল গ্লাভস চিকিৎসকেরা ব্যবহার করে থাকেন। আর হাসপাতালে এখন সমস্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের ভিড়। পাশাপাশি অন্যান্য রোগীরাও সেখানেই রয়েছেন। রয়েছেন তাঁদের বাড়ির লোকজনও।

তাই সার্জিক্যাল গ্লাভস ব্যবহারে ভীষণভাবে সুরক্ষা-বিধি মেনে চলা প্রয়োজন। কারণ সার্জিক্যাল গ্লাভসের উপর এই ভাইরাস অন্তত চার ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। সুরক্ষা-বিধি মেনে না চললে, সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনাও খুব বেশি।

যে কতগুলো ধাতব বস্তু নিয়ে গবেষণা চালানো হয়েছে। তার মধ্যে আর একটি হল অ্যালুমিনিয়াম। গবেষকরা জানাচ্ছেন, অ্যালুমিনিয়ামের উপর এই ভাইরাস দু’ঘণ্টা থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

তবে ‘নেকেড’ ভাইরাস কোনও সারফেসেই বাঁচতে পারে না। এদের টিকে থাকার জন্য ড্রপলেটের প্রয়োজন হয়। অ্যালুমিনিয়াম জাতীয় পদার্থের উপর যদি এই ড্রপলেট পড়ে, তবেই তা সংক্রমণযোগ্য।

এগুলো ছাড়া সম্প্রতি নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে তামার উপর এবং বাতাসে এই ভাইরাস কতদিন বাঁচতে পারে, তা প্রকাশ করা হয়েছে।

সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, তামার উপর চার ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে এই করোনাভাইরাস। এবং বাতাসে মাত্র তিন ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031