আমরা সংবাদমাধ্যমে খবর দেখছি, প্রায় দেশেই প্রতিদিন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে কোনও না কোনওভাবে মানসিক চাপ তৈরি হয়। যে কোনও পরিস্থিতি বা অবস্থার কারণে আমাদের মধ্যে স্ট্রেস বা চাপ হতে পারে। যেমন করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ক্রমেই চেপে বসছে মাথায়। সবসময় আতঙ্ক লাগছে, ভয়ে ঠিকমতো অনেকে ঘুমাতেও পারছে না। শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেরও একই অবস্থা। এরকমভাবেই করোনার আতঙ্কে আর মানসিক চাপে ভুগছেন আরও অনেকেই।

করোনাভাইরাসের আক্রান্ত রোগী বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেকের মধ্যেই ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই বাইরে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। আবার যারা বাসায় থাকছেন, তারাও সারাক্ষণ চিন্তায় থাকছেন প্রয়োজনে কাজের জন্য বাইরে যাওয়া পরিবারের সদস্যদের নিয়ে।

একাকিত্ব ও বিষাদ ছেয়ে গেছে। মানুষ সিনেমা ভুলেছে, খেলা ভুলেছে, রাজনীতিও ভুলেছে। ভুলেছে তার নিজস্ব পরিসর। একমুখী করোনা-চিন্তায় জীবন কাটাতে কাটাতে ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী মানসিক চাপ। করোনাভাইরাসের অজানা শঙ্কাই মূলত এর জন্য দায়ী।

আমি ও পরিজনেরা নিজে সেই অসুখের শিকার হব কি না, এর কোনও ওষুধ বেরল কি না, মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা কত, এগুলোই মূল ভাবনা। যা চাপ ফেলছে মনে। সব মিলিয়ে শরীরের স্ট্রেস হরমোনগুলো অহরহ ক্ষরিত হচ্ছে। তাই রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া বা হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তার বশে চেনা ফেসবুক, জানা হোয়াটসঅ্যাপেও মানুষ শুধুই করোনা সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই কথা বলছেন।

চাপিয়ে দেওয়া ঘরবন্দি মানুষের অবস্থায় অভ্যস্ত নয় মানুষ। আগে এমন অভিজ্ঞতা না থাকাও শরীরের স্ট্রেস হরমোনগুলিকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলছে। ফলে টেনশন, চাপা উদ্বেগ, ভয়, আতঙ্ক এগুলোই মাথার মধ্যে দপদপ করছে। অন্য কোনও ভাবনা স্থায়ী হচ্ছে না।

মন কিছুতেই বসছে না। এই সময়ও চারপাশে এটাই ঘটছে। তার সঙ্গে বাড়িতে বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থ মানুষ থাকলে তাঁদের নিয়েও বাড়তি চিন্তা দানা বাঁধছে। উত্তেজিত হচ্ছে মোটর নিউরোন। এ সব থেকেই মনের চাপ বেড়ে চলেছে।

মানসিক চাপ কতটা ক্ষতি করতে পারে। কী কী রোগ হতে পারে। মানসিক চাপ বেড়ে গেলে, শরীরে ক্ষতিকর রাসায়নিকের রমরমা এতই হয় যে তার দাপটে প্রতিরোধ যোদ্ধাটি চলে যায় ব্যাকফুটে। তার উপর দুশ্চিন্তায় ঘুম কমে, খাদ্যাখাদ্য বিচার থাকে না, আগ্রহ থাকে না ব্যায়ামে। সবে মিলে প্রতিরোধ ক্ষমতার অবনতি হয়। এ ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের রোগীদের বেলায় অসুখ বেড়ে যাওয়ার ভয়ও বাড়ে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, আরও অস্থিরতা ও বিরক্তি বাড়ে।’

কীভাবে ভাল থাকবেন দুশ্চিন্তার দিনেও, কী ভাবেই বা নিয়ন্ত্রণে রাখবেন উদ্বেগ? উদ্বেগ থাকলেও তাকে নিয়ন্ত্রণ করার পাঠ জানতে হবে। আমাদের মন ভালো রাখতে হলে যেসব কাজ করতে হবে যেমন:

মন ভাল রাখে এমন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। ছবি আঁকতে ভাল লাগলে, তাই করুন। গান গাইতে ভাল লাগলে তা-ই। রান্না করতে চাইলে সেটাই করুন। যার যে কাজে আনন্দ, তিনি তাতে কিছুটা সময় দিন। মন ভাল থাকবে। বাড়িতে থাকার সময় ভাল সিনেমা দেখুন, গান শুনুন, প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা বলুন, দেখতে দেখতে দিন কেটে যাবে।

মন বসাতে সমস্যা হলে রোজ সকালে একটু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ, বাড়িতে বসে করা যায় এমন কিছু ব্যায়াম, বিশেষ করে মন ভাল রাখার যোগা, ডিপ ব্রিদিং, মেডিটেশন করুন। এতে রক্তচাপ কমবে, শরীর ফুরফুরে হবে, সঙ্গে মনও আনন্দ পাবে। মনে রাখুন, যা জানি না, যা আমার হাতে নেই, তা নিয়ে অকারণ দুশ্চিন্তার কোনও মানেই নেই। ভাবলেই কেউ বিপদ এড়াতে পারবেন না। তাই অহতুক ভেবে মাথার উপর চাপ বাড়ানো থেকে দূরে থাকুন। করোনা হওয়ার আগেও মানুষ মারা যেতেন, এর পরেও মানুষ মরণশীলই থাকবেন, রাস্তাঘাটে যে কোনও দুর্ঘটনাও অকালে প্রাণ কাড়তে পারে। তাই অযথা মৃত্যুভয় পাবেন না।

সব চিন্তা ফেলে রেখে পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে নিন ৷ ক্লান্তি ও চিন্তা দূর করার জন্য ঘুম অত্যন্ত দরকার৷

অপরাধবোধ চিন্তা দূরে রাখুন৷ মানুষ মাত্রই ভুল করে৷ তাই অতীত নিয়ে বেশি ভেবে নিজের ভালো সময় নষ্ট করবেন না। বুকভরে শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে ছেড়ে দিন। এটা চাপ কমাতে ও মন শান্ত করতে সাহায্য করে।

ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করুন, ফলমূল ও শাকসবজি বেশি করে খান। টেনশন কমাতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

স্ট্রেস কমাতে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া নিজের ইচ্ছেমতো ওষুধেরও কোনও প্রয়োজন নেই। ঘরে থাকাকে উপভোগ্য করে তুলতে নিজেরই মনের মতো কাজে যুক্ত থাকুন। তা হলেই অনেকটা আরাম পাবেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031