অপরিচ্ছন্নতার কারণেই বেশি ছড়ায় করোনাসহ সংক্রামক যেকোনো রোগ । তাই করোনা প্রতিরোধে সবচেয়ে বড় প্রতিষেধক হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বনের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত থাকা। করোনার দ্রুত সংক্রমণ রোধে আমরা আমাদের বাড়িকে নিয়মিতভাবে পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি।

করোনা থেকে বাঁচতে মানুষ এখন গৃহবন্দী। এই সময়ে অনেকের হাতে কাজও নেই। তাই সময়টাকে কাজে লাগানোর অন্যতম পন্থা হতে পারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভিযান।

বাড়িতে থাকলেও দিনে অন্তত বার দুয়েক জামাকাপড় বদলাতে হবে আমাদের। কারণ, ব্যবহৃত পোশাকে সব সময়েই নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস এসে জমে। এই পরিস্থিতিতে যা খুবই বিপজ্জনক। সারা দিনে একই জামা পড়ে থাকলে সেখান থেকেই সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়। এছাড়া বাড়িতেও বারবার দু’টি হাত সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে ধুয়ে ফেলা উচিত। না হলে দরজা, জানালা, টেবিল, চেয়ার ছোঁয়ার পর সেখান থেকেও গৃহবন্দী হওয়া সত্ত্বেও বাড়ির লোকজন সংক্রমিত হতে পারেন।

ঘরের মেঝে বা দেওয়ালের নিচের দিকের অংশগুলো দিনে অন্তত দু’বার ভাল ভাবে ঝাড়ু দিতে হবে। তারপর ফিনাইলের মতো পদার্থ পানিতে মিশিয়ে সেই সব জায়গা ভাল ভাবে মুছে ফেলতে হবে। যিনি ঘর পরিষ্কার করছেন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে তাঁকে অবশ্যই মুখে মাস্ক পরে থাকতে হবে। না হলে তাঁর থেকেই ছড়াতে পারে সংক্রমণ। কারণ, ঘরের ধুলাবালিতে মিশে থাকা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ায় সবচেয়ে কাছে আসছেন তিনিই।

ঘর পরিষ্কার করার সময় হাতে গ্লাভস পরারও প্রয়োজন। আর ঘর পরিষ্কার করার পর খুব ভাল ভাবে দু’টি হাত সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, বাড়িতে যেন কোনও ভাবেই আবর্জনা না জমে থাকে। তার জন্য যাবতীয় আবর্জনা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হবে।

বাড়িতে যাতে পোকামাকড় বা মশার উপদ্রব না বেড়ে যায়, সেটাও এখন খেয়াল রাখতে হবে। তার জন্য বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় ব্লিচিং পাউডার ছড়াতে হবে। কীটনাশক স্প্রে করতে হবে দিনে-রাতে বেশ কয়েক বার। মশা মারার ওষুধ, ধূপ বা তেলের ব্যবহার করতে হবে।

যারা ক্রনিক হাঁপানির রোগী, মশা মারার ধূপ বা তেলের ব্যবহারে তাঁদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। তাই তাদের ঘরে মশা মারার ধূপ বা তেলের ব্যবহার না হলেই ভাল। তাদের মশারি টাঙিয়ে থাকা উচিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাড়িতে রান্নাবান্না বা খাবার পরিবেশনের ক্ষেত্রেও বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে। হাতে গ্লাভস পরে নিলে ভাল হয়, না হলে রান্নাবান্না ও পরিবেশনের আগে দু’টি হাত সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে খুব ভাল ভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।

যাদের বাড়িতে প্রচুর গাছ রয়েছে, তাদেরও গাছ পরিচর্যার সময় বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে। হাতে পরে নিতে হবে গ্লাভস।

বাড়িতে থাকলেই আমরা এয়ার কন্ডিশনার চালাই খুব। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সেটা উচিত হবে না। কারণ, এয়ার কন্ডিশনারের মধ্যে জমে থাকে প্রচুর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস। আর এয়ার কন্ডিশনার খুলে তার ভিতরটা পরিষ্কার করলে ভাল হয়। কারণ এয়ার কন্ডিশনারের মাধ্যমে বাড়িতে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যায়। এখন না ঠান্ডা, না গরম। এই সময় সব সময় ফ্রিজের পানি খেলে ঠান্ডা লাগতে পারে। সর্দি লাগতে পারে। তার থেকে হাঁচি, কাশি হতে পারে। তাই ফ্রিজের পানি না খাওয়াই উচিত।

পরিচ্ছন্নতা ও জীবাণুমুক্তকরণে দরজার হাতল, মোবাইল, কম্পিউটার, রিমোট, সুইচ, টেবিল-চেয়ারসহ যেসব বস্তু বারবার ব্যবহৃত হয়, সেগুলো নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

প্রতিবার খাবার রান্না বা প্রস্তুতের আগে ও পরে, খাবার খাওয়ার আগে ও পরে, বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে, প্রয়োজনে বাইরে থেকে বাসায় ফেরার সঙ্গে সঙ্গে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। সাবান-পানি তাৎক্ষণিকভাবে না পাওয়া গেলে হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করতে হবে।

বাড়ির প্রতিটি ঘরে টিস্যু বা কিচেন রোল রাখুন, যাতে কাশি বা হাঁচির সময় হাত বাড়ালেই টিস্যু পাওয়া যায়। টিস্যু বা ময়লা ফেলার পাত্রটি ঢাকনাযুক্ত হলে ভালো। কাঁচা মাছ-মাংসের বর্জ্য একটি পলিথিনে মুড়ে মুখ আটকে বিনে ফেলুন। এরপর অবশ্যই হাত সাবান দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করুন। রান্না আর কাটাকুটির কাজে ব্যবহৃত বোর্ড, ছুরি, বঁটি সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে রাখুন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031