পৃথিবীতে বসবাসের উপযোগী পরিবেশকে ভয়াবহ করে তোলে ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান থেকে নিউমোনিয়া রোগের উপসর্গ নিয়ে করোনাভাইরাস । অনিশ্চয়তার পথে ঠেলে দেয়। সাধারণত প্যাথোজেন পরিবারের করোনাভাইরাস মানুষের ফুসফুসকে সংক্রমিত করে। প্রথমত এ রোগের উপসর্গ হলো শ্বাসকষ্ট হওয়া। সঙ্গে জ্বর, সর্দি, কাশি। করোনা সংক্রমণে দেখা দিচ্ছে নতুন নতুন উপসর্গ। ডায়রিয়া, ঘ্রানশক্তি চলে যাওয়া, খাবারের স্বাদ বুঝতে না পারা, চোখ গোলাপী হয়ে যাওয়া, হজম শক্তি কমে যাওয়া এরকম নতুন নতুন উপসর্গ জেগে উঠছে করোনা সংক্রমণে। এমনই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার আগে রোগীদের যেসব উপসর্গ হয় সেগুলো সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে হবে। শ্বাসকষ্ট না হলেও সর্দি, কাশি, জ্বরের সঙ্গে নতুন নতুন উপসর্গগুলো রোগীদের কাছ থেকে চিকিৎসক-গবেষকরা পাচ্ছেন।

করোনাভাইরাসের নতুন উপসর্গ স্বাদ এবং ঘ্রানশক্তি হারিয়ে ফেলে। এই উপসর্গ নিয়ে একাধিক করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি হতে শুরু করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। বিশেষ করে আমেরিকায় তো এই উপসর্গ অধিকাংশ করোনা আক্রান্ত রোগীর দেখা যাচ্ছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যু হয়েছে আমেরিকাতেই। মৃত্যু হারে চীনকে ছাড়িয়ে গিয়েছে আমেরিকা।

করোনা সংক্রমণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ হল চোখ গোলাপী হয়ে যাওয়া। তবে এই উপসর্গ খুব কম রোগীর শরীরেই দেখা দিয়েছে। ১ থেকে ৩ শতাংশ করোনা আক্রান্ত রোগীর চোখ গোলাপী হওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। তার সঙ্গে চোখ ফুলে যাওয়ার মত ঘটনাও ঘটছে।

করোনা আক্রান্ত রোগীদের আবার সাধারণ সর্দি কাশির মত মাথা ধরাও দেখা দিচ্ছে। কাজেই অনেক সময় পার্থক্য করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন সর্দি-কাশি-জ্বরের সঙ্গে যদি অন্য কোনও একটি উপসর্গও দেখা দেয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে রক্ত পরীক্ষা করান এবং চিকিৎসকরে পরামর্শ নিন। এই মাথা ব্যাথা বা মাথা ধরার সঙ্গে শরীরে একটা অদ্ভুত অস্বস্তি তৈরি হচ্ছে করোনা আক্রান্ত রোগীদের।

করোনাভাইরাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ হল হজম শক্তি কমে যাওয়া। যার কারণে ডায়রিয়ার উপসর্গ দেখা দিচ্ছে আক্রান্তদের শরীরে। ফলে শরীরে পানি কমে যাচ্ছে। চিনের উহান প্রদেশের করোনা আক্রান্ত রোগীদের এই উপসর্গ বেশি দেখা গিয়েছিল। বিভিন্ন দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীদের যে উপসর্গ দেখা দিচ্ছে তার মধ্যে ডায়রিয়া প্রায় সব দেশেই করোনা রোগীদের দেখা দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

করোনা ভাইরাসের পরীক্ষায় রক্ত, মল বা মূত্রের নমুনা সংগ্রহের দরকার হয় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) নিয়ম হল, এ পরীক্ষার জন্য রোগীর লালা, শ্লেষ্মা বা কফ সংগ্রহ করতে হবে।

মুখের লালা বা নাকের শ্লেষ্মার আরটি-পিসিআর (রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ পলিমেরেজ চেইন রিঅ্যাকশন) টেস্ট করলেই বোঝা যায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আছে কি না?

আইইডিসিআর সূত্রে জানা যায়, মুখের লালা ও নাকের শ্লেমা সংগ্রহ করা টিউব অতিমাত্রায় শীতল করে বরফের বাক্সে ভরে পাঠানো হয় ল্যাবরেটরিতে, সেখানে টেস্ট কিট দিয়ে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হয়।

রোগীর নমুনায় যদি করোনাভাইরাস থাকে, তাহলে এ পরীক্ষায় তার সংখ্যা বাড়বে। ফলাফল আসবে ‘পজেটিভ’। এই ফলাফল পেতে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। আরটি-পিসিআরের প্রতিটি পরীক্ষায় খরচ লাগবে পাঁচ হাজার টাকার বেশি। যদিও এ ব্যয় বাংলাদেশ সরকার বহন করছে এখন।

যদিও সর্দি-জ্বরের মতো করোনা ভাইরাসেরও তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। এই রোগটির এখন পর্যন্ত কোন টিকা বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। নিরাপদ থাকার একমাত্র উপায় হল, যারা আক্রান্ত হয়েছেন বা এ ভাইরাস বহন করছেন- তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যায়। কারও মধ্যে যদি নিউমোনিয়ার মতো শ্বাসযন্ত্রে জটিলতা দেখা দেয়, তবে রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শে অক্সিজেন নিতে হবে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের উপসর্গ পরীক্ষা শুরু করেছে ঢাকায় জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে ইনফেকশাস ডিজিজ হাসপাতাল।

করোনার উপসর্গ দেখা দিচ্ছে কিনা তার জন্য গলার ভেতরে, নাকের গোড়ার কাছ থেকে তুলা দিয়ে লালা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। আর যে পরীক্ষাটি করা হয় সেটির নাম হলো রিয়াল টাইম পিসিআর’ বা রিয়াল টাইম পলিমারেস চেইন রিঅ্যাকশন।

লালা ছাড়া শরীর থেকে আর কোনো নমুনায় এই ভাইরাস ধরা পড়ে না। জ্বর বা কাশির জন্য সেসব চিকিৎসা দেয়া হয় সেটিই দেয়া হয়। সমস্যা হলো এই রোগের অ্যান্টিবায়োটিক এখনও তৈরি হয়নি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহবাগের পুরনো বেতার ভবনের দ্বিতীয় তলায় করোনাভাইরাস ল্যাবরেটরিতে করোনাভাইরাসের উপসর্গ পরীক্ষা করা হয়।

জ্বর-সর্দির মত উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের জন্য আলাদা ‘ফিভার ক্লিনিক’ চালু করা হয়েছে। সেখানে আসা কোনো রোগীর উপসর্গ করোনাভাইরাসের মত বলে সন্দেহ হলে তাদের এখানে পরীক্ষা করা হয়। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এ পরীক্ষা করানো যাবে। আপতত তারা পিসিআর টেস্ট করবেন। সেজন্য রোগীর লালা বা কফ নেওয়া হবে নমুনা হিসেবে। এ পরীক্ষার জন্য কোনো টাকা নেওয়া হবে না।

যেসব রোগী যানবাহন স্বল্পতা বা দূরত্বের জন্য বহির্বিভাগে গিয়ে সেবা নিতে পারছেন না, তারা হেল্প লাইনে ফোন করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারবেন। প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়ি থেকেও নমুনা নিয়ে আসা হবে।

টেলিফোনে সেবা দেওয়ার সময় যেসব রোগীর বিষয়ে সন্দেহ হবে, তাদের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হবে। প্রয়োজনে রোগীর বাসায় গিয়ে স্যাম্পল আনার ব্যবস্থা করা হবে।

পুরনো বেতার ভবনে ফিভার ক্লিনিকে জ্বর সর্দি-কাশির রোগীদের পৃথকভাবে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। এছাড়া সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হেল্প লাইনে ফোন করে তথ্য দিয়ে পরামর্শ সেবা নেওয়া যাবে।

ফোন নম্বরগুলো হচ্ছে- মেডিসিন বিভাগ-০১৪০৬৪২৬৪৩৭, ০১৪০৬৪২৬৪৩৮, সার্জারি বিভাগ-০১৪০৬৪২৬৪৩৯, নাক, কান, গলা বিভাগ-০১৪০৬৪২৬৪৪০, বক্ষব্যাধি-০১৪০৬৪২৬৪৪১, অবস অ্যান্ড গাইনি- ০১৪০৬৪২৬৪৪২. শিশু বিভাগ-০১৯৮৪৫১৯৫২৫, ০১৯৫১৮২০৮৪৩।

লকডাউনে ঘরে অবস্থানই হতে পারে একমাত্র প্রতিষেধক, অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের না হওয়াই উত্তম। সচেতনতা ও সামাজিক দূরত্বই করোনাভাইরাস থেকে পরিবার ও দেশেকে রক্ষা করতে পারে। ঘরে অবস্থানকালে করোনাভাইরাস নিত্য নতুন সংক্রমণের উপসর্গ শ্বাসকষ্ট, হাঁচি, কাশি, সর্দি, অথবা অন্য কোনো সমস্যা দেখা দিলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031