কখনও আতঙ্কিত হননি, ভয় পাননি। দীর্ঘ সময় ধরেই লাশ কাটেন তপন কুমার। তবে এবার তপন আতঙ্কিত। কারণ, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতেও তাকে লাশ কাটতে হচ্ছে সুরক্ষা পোশাক ছাড়াই। নেই গ্লাভস, স্যানিটাইজারের মতো সহজপ্রাপ্য জিনিসগুলোও। এমন নিরাপত্তাহীন অবস্থায় কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন তপন।

শুধু তপন কুমার একা নন, তার মতো রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) লাশকাটা ঘরের প্রত্যেক ডোমই এখন আতঙ্কিত। তারা বলছেন, কোনো লাশ যে করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত নয়, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তারা ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য কিছুই পাননি। ফলে তারা নিজেরাই এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

এদিকে করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য রামেকে স্থাপিত ল্যাব থেকে সব ধরনের বর্জ্য নিয়ে ফেলা হচ্ছে লাশকাটা ঘরের পাশে। সেখানে একটু গর্ত করা হয়েছে। গর্তের পানির ভেতরেই বর্জ্যগুলো ফেলা হচ্ছে। এই গর্তের পাশ দিয়েই সব সময় চলাচল করেন ডোমরা। তাই এখান থেকেও ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। ডোমরা বিষয়গুলোর প্রতিবাদও জানিয়েছেন।

রবিবার সকালে কীটনাশক পানে মারা যাওয়া এক তরুণীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে গেলে ডোমরা লাশটি কাটা-সেলাইয়ে ভয় পান। লাশটি কাটা বাদ দিয়ে ছয়জন ডোম রামেক ক্যাম্পাসে গিয়ে ভাইরাসবিদ্যা বিভাগের প্রধান সাবেরা গুলনাহারের কাছে যান। তারা লাশ কাটা-সেলাইয়ের সময় তাদের ব্যবহারের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক (পিপিই), গ্লাভস এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার দাবি করেন। এছাড়া করোনার ল্যাবের বর্জ্যগুলো মর্গের পাশে না ফেলে পুড়িয়ে ফেলার অনুরোধ করেন। সাবেরা গুলনাহার ডোমদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে কাজে পাঠান।

ডোম তপন কুমার বলেন, যুগ যুগ ধরে তাদের বেতন ২০ টাকা। এই বেতন তারা নেন না। লাশের স্বজনদের কাছেই টাকা নিয়ে তাদের সংসার চালাতে হয়। হাতে কোনো টাকা-পয়সা নেই। এ অবস্থায় তারা যদি কোনো রোগে আক্রান্ত হন, তাহলে তাদের পরিবারের সদস্যরা বিপদে পড়বে। তাই তারা তাদের সুরক্ষার দাবি জানাচ্ছেন। তা নাহলে তাদের কাজ করা সম্ভব হবে না।

আরেক ডোম বিপন কুমার বলেন, লাশ মর্গে ঢোকানো, কাটা, সেলাই আবার লাশ গাড়িতে তুলে দেয়ার সব কাজই তাদের। ফরেনসিক বিভাগের একজন চিকিৎসক শুধু নমুনা সংগ্রহ করেন। দেহে কোনো আঘাত আছে কিনা তা যখন চিকিৎসক দেখেন, তখনও ডোমদেরই লাশ ধরে কাজ করতে হয়। তাই মৃত কোনো ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত থাকলে তাদেরই সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি। কিন্তু পিপিই তো দূরের কথা, তাদের জন্য গ্লাভস কিংবা স্যানিটাইজার পর্যন্ত নেই।

জানতে চাইলে রামেক অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, ডোমদের জন্য ১০টি পিপিই আছে। সেগুলো ফরেনসিক বিভাগের প্রধানকে দেয়া হয়েছে। তবে সেগুলো এখনও ডোমদের দেয়া হয়নি। কারণ, সব লাশ কাটার সময় ডোমরা পিপিই ব্যবহার করতে পারবেন না। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিংবা চিকিৎসকদের সন্দেহজনক কোনো লাশ কাটার সময়ই সেগুলো ডোমদের দেয়া হবে।

লাশকাটা ঘরের পাশেই করোনার ল্যাবের বর্জ্য ফেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্জ্যগুলো বিশেষ ধরনের একটা পলিথিন ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলা হয়। তাই সেখান থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা নেই। তারপরেও বিষয়টি নিয়ে ডোমদের আপত্তি উঠার কারণে তারা বিকল্প কিছু চিন্তা করছেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031