অনেক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেই আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে রাজধানী ঢাকায় একজন ব্যাংক কর্মকর্তার দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর যেই শাখায় তিনি কাজ করতেন, সেই শাখা বন্ধ করা হয়েছে। এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ।

দেশে ২৬ মার্চ থেকে সব গণপরিবহন বন্ধ করার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট বন্ধ ঘোষণা করা হলেও ২৯ মার্চ থেকে সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং সেবা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং সেবা পরিচালনা করা হলেও ব্যাংকে গ্রাহকদের আনাগোনার ফলে সৃষ্টি হয় জনসমাগম এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তৈরি হয় আতঙ্ক। কয়েকটি ব্যাংকে গ্রাহকদের জমায়েতের ছবি আলোচনার জন্ম দেয় সোশ্যাল মিডিয়াতেও।

এরকম পরিপ্রেক্ষিতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে – ব্যাংক কি করোনাভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাব্য জায়গা হতে যাচ্ছে?

আতঙ্ক বাড়ছে কর্মীদের মধ্যে

পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেক মানুষের সংস্পর্শে আসতে হওয়ায় অনেক পেশার মানুষের চেয়ে ব্যাংকের কর্মীরা অপেক্ষাকৃত বেশি সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।

সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং সেবা চালু রাখার পাশাপাশি প্রত্যেকটি ব্যাংকেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া হলেও অনেকক্ষেত্রেই সেগুলোর শতভাগ প্রতিপালন করা সম্ভব হয় না বলে জানান একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ফখরুল আবেদিন।

ফখরুল আবেদিন বলেন, ‘সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে গ্রাহকদের জন্য ব্যাংকের গেটে স্যানিটাইজার, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, মাস্ক ছাড়া ঢুকতে না দেয়া, ভিতরে দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ানোর অনুরোধ করার মতো পদক্ষেপ নিয়েছি আমরা। পাশাপাশি কর্মকর্তাদের জন্য মাস্ক, হাতের গ্লাভসসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং তাদের নিরাপদ যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু গ্রাহকদের অনেকেই সতর্কতামূলক কার্যক্রম মানতে চান না।’

ফখরুল আবেদিন বলেন, গ্রাহকদের অনেকে স্বতস্ফূর্তভাবে হাত ধোয়া, মাস্ক পরা বা দূরত্ব বজায় রাখার মতো কাজগুলো করলেও কেউ কেউ নিয়ম মানার বিষয়ে একেবারেই সচেতন নয়।

‘হাত ধুতে অনুরোধ করলে, দূরত্ব মেনে দাঁড়াতে বললে বা মাস্ক পরে থাকতে বললে অনেকেই বিরক্ত হন। কেউ কেউ আবার তাচ্ছিল্যও করেন’, বলেন ফখরুল আবেদিন।

প্রথমদিকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা কম থাকায় ব্যাংকের কর্মীদের মধ্যে ভীতিও কম ছিল। তবে গত কয়েকদিন শনাক্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ব্যাংকের কর্মীদের মধ্যে আতঙ্কও বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন ফখরুল আবেদিন।

‘শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এখন অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যাচ্ছে।’

তার ওপর ব্যাংক কর্মকর্তাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

ব্যাংকগুলো কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?

কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মাফিক সেবা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের তরফ থেকে। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংক তাদের কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ নিয়েছে।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান তারা তাদের কর্মীদের নিয়মিত অফিসে না এসে কয়েকদিন বিরতিতে আসার সুযোগ তৈরি করেছে, যেন একসাথে বেশিসংখ্যক কর্মীর অফিসে উপস্থিতি এড়ানো সম্ভব হয়।

এছাড়া শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা দৈনিক ভিত্তিতে অফিসের প্রত্যেক কর্মীর স্বাস্থ্যের খোঁজখবর রাখছেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

আর যেসব এলাকা লকডাউন করা হয়েছে, সেসব এলাকায় অবস্থিত সব ব্যাংকের শাখা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক কী বলছে?

সরকার ২৪ মার্চ সাধারণ ছুটির ঘোষণা দেয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ২৯ মার্চ থেকে সব ব্যাংক সীমিত পরিসরে খোলা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত গ্রাহকদের নগদ অর্থ জমা দেয়া ও উত্তোলন করার জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে এবং প্রধান শাখা ও সংশ্লিষ্ট খোলা থাকবে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত।

এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক লেনদেনও করা হবে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

এরপর ২ এপ্রিল আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় ৫ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত গ্রাহকরা অর্থ জমা দিতে ও তুলতে পারবেন এবং ব্যাংক খোলা থাকবে বিকাল ৩টা পর্যন্ত।

ওই নির্দেশনা পরিবর্তন করে ৯ এপ্রিল জারি করা হয় আরেকটি বিজ্ঞপ্তি।

যেখানে আবারো লেনদেনের সময় পরিবর্তন করে ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত করা হয় এবং দুপুর ২টা পর্যন্ত ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। -বিবিসি

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031