দখিন থেকে হিম হাওয়া এসে তপ্ত শহর জুড়িয়ে দেয়। ভোরের ঢাকা বরাবরই শান্ত থাকে। থাকে পাখিদের ডাক। হঠাৎ হঠাৎ একটু কোমল বাতাসে তিরতির করে কাঁপে গাছের পাতা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শহরের ভোর যেন একটু বেশিই থমথমে। শান্ত-স্নিগ্ধতা দিনের শুরুটাতেও লেপ্টে থাকে হাহাকার।

সোমবার সকালের ঢাকা ছিল তেমনই। কোথা থেকে সাঁই করে একটা-দুটো গাড়ি দ্রুত এসে দ্রুতই সরে যাচ্ছে। যেন থামতে মানা। পথের ধারের কুকুরগুলোর পায়েও নেই ব্যস্ততা। তবে ভোরের বাতাস গায়ে না মাখলে যাদের চলে না, এমন মানুষেরা ঠিকই নেমেছিলেন পথে। আর সব দিনের মতো না হলেও গৃহবন্দী সময়ে একটু হাফ ছেড়ে বাঁচার চেষ্টা।

মুখে মাস্ক পরেই রাজধানীর বারিধারা আবাসিক এলাকার ফুটপাত ধরে দৌড়াচ্ছিলেন এহসানুল হক। কথা বলতে চাইলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই দাঁড়ালেন। বললেন, ‘বলুন কী বলবেন?’ জানতে চাইলাম, ‘নীরব ঢাকা কেমন লাগছে?’ বললেন, ‘ভালো-মন্দ দুটোই। সকালটা তো আগেও এমনই ছিল। আলো যত বাড়ে কর্মমুখী মানুষের ভিড় বাড়ে পথে। এখন তেমনটা নেই। কেমন শূন্যতা। মানুষ ঘরবন্দী, এটাই খারাপ লাগে।’ বলেই ফের হালকাচালে দৌড়াতে লাগলেন তিনি।

কাছেই একজন দাঁড়িয়ে হাত-পায়ের ব্যায়াম সারছিলেন। বয়স তার ষাটের ঘরে হবে। আলাপে জানালেন, অবসরে আছেন বছর দুই ধরে। কিন্তু তারপরও ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করেন। শরীর ঠিক রাখতে। কিন্তু এখন বাধ্য হয়ে ঘরে থাকতে হচ্ছে। সকালে কিছুটা সময়ের জন্য বের হন, পরে আবার ঘরে ঢুকে যান। বললেন, ‘কবে যে অবস্থা ঠিক হবে, কেউ বলতে পারে না। করোনা আমাদের অনেক ক্ষতি করে দিলো।’

সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী, সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হওয়া বারণ। তাও সন্ধ্যা ছয়টার আগে। ছয়টার পর থেকে পরদিন ভোর ছয়টা পর্যন্ত বাইরে বের হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানানো হয়েছে। তবে এই বিধিনিষেধের মাঝেও অনেকেই বের হচ্ছেন।

কাঁচাবাজার, নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান খুলছে। মানুষ কেনাকাটাও করছে। ফলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার যে বাধ্যবাধকতা, তা মানা যাচ্ছে না অনেক ক্ষেত্রেই।

ভোর হতেই জোয়ার সাহারা বাজারে এসেছেন জুলফিয়া নাজনীন। মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস পরা। মাছের বাজারে কথা হয় তার সঙ্গে। একটু দূরে দাঁড়িয়েই মাছের দরদাম করছিলেন। খানিক আক্ষেপ নিয়েই বললেন, ‘আমরা কয়েকজন সচেতন হয়ে কী হবে বলেন? অনেকেই তো খোলা মুখে এসেছেন। মাস্ক পরেনি। হাতে গ্লাভস নেই। তাদের দেখলে তো ভয় লাগে। কার মধ্যে করোনার জীবাণু আছে, কে জানে বলুন?’

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। তাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিকল্প নেই।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031