বিস্তীর্ণ ফসলি জমিতে এখন ধান পেকে মাটিতে লুটিয়ে যাচ্ছে হাওরাঞ্চলের । ধান কাটার জন্য কৃষকের সংকট শ্রমিক ও কৃষিযন্ত্রের। হাওরাঞ্চলের কৃষিক্ষেত্র থেকে যাতে দ্রুত ফসল কাটা যায় সেজন্য সেখানকার কৃষকদের মাঝে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় কৃষিযন্ত্র পাঠাচ্ছে সরকার।

এপ্রিল-মে দুই মাসকে দেশের কৃষিক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় বলে ধরা হয়। বোরো ধান, পাটসহ নানা ফসলাদি এই সময় মাঠ থেকে তোলা হয়। এর মধ্যে বোরো ধান দেশের চালের জোগানে অন্যতম। বোরো ধান ঠিক মতো তুলতে না পারলে দেশের জোগানে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে সতর্ক করছেন বিশ্লেষকরা।

বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে করণীয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ নিয়ে ব্রিফিংকালে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক হাওরের কৃষকদের কৃষিযন্ত্র দেওয়াসহ আরো কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘রোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখা, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ এবং কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণ ও বিপণনে গুরুত্ব দিয়ে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এরইমধ্যে কৃষকদের স্বার্থে সার, সেচ, ইক্ষুচাষসহ কৃষিখাতে ভর্তুকি বাবদ নয় হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।’

‘ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের কারণে বোরো ধান কাটার শ্রমিকের সংকটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে হাওর অঞ্চলে ধান কাটার জন্য জরুরি ভিত্তিতে নতুন ১৮০টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ১৩৭টি রিপার সরবরাহ করা হচ্ছে।’

এছাড়া হাওরে গমনেচ্ছু শ্রমিকদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা, সাবান, স্যানিটাইজার, মাস্ক প্রভৃতি উপকরণ প্রদানে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা যেন নিরাপদ যাতায়াতের জন্য আলাদা গাড়ি, নির্বিঘ্ন গমনাগমন এবং ধান কাটা স্থলে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে রাখার ব্যবস্থা হয় সেসব বিষয়েও কার্যক্রম চলছে।’

এরইমধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষি-শ্রমিকগণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাওরে যাওয়া শুরু করেছেন জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। হাওরে ধান কাটায় কোনো সমস্যা হবে না বলেই আমরা আশা করছি।’

কৃষিমন্ত্রী মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী কৃষিখাতে যে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা দিয়েছেন তার সুদ ৪ শতাংশ হলেও কৃষিখাতে নয় হাজার কোটি টাকার ভর্তুকিসহ অন্যান্য প্রণোদনা বিবেচনায় এটি অত্যন্ত ভালো। এ প্রণোদনার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করে কৃষির সকল সেক্টরে (মৎস্য ও প্রাণি খাতসহ) সহায়তা প্রদান করা সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ওই প্রণোদনার বাইরেও কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষি পুনর্বাসনে ১২০ কোটি টাকা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের ক্ষতিপূরণ ও সমবায়ভিত্তিক (সমলয়ে) চাষাবাদের জন্য ৫০ কোটি টাকা এবং ফসলে নতুন জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণের জন্য প্রদর্শনী স্থাপন ও গ্রহণকরণ বাবদ ৭৫ কোটি টাকা, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও বীজ, সেচ ইত্যাদিসহ সহায়তা বাবদ ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করেছে বলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

করোনাকালীন সাধারণ ছুটির সময় কৃষি কার্যক্রম সক্রিয় রাখতে সকল কর্মকর্তাদের স্ব-স্ব কর্মস্থলে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘তাদেরকে নিয়মিতভাবে মাঠে গিয়ে এই দুর্যোগময় অবস্থায় কৃষকের পাশে থাকতে বলা হয়েছে। নির্দেশের পরও যারা কর্মস্থলে থাকবেন না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা হবে।’

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. আরিফুর রহমান অপু, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল এবং বিএডিসির চেয়ারম্যান মো. সায়েদুল ইসলাম এসময় উপস্থিত ছিলেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031