ফ্রান্সে করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে না এলেও আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কারণ প্রতিদিনই ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট থেকে কিছু কিছু রোগী সুস্থ হযে ঘরে ফিরেছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পাওয়া গত সাতদিনের তথ্য, উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে(যেখানে ৮ এপ্রিল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রোগী ছিলো ৭হাজার ১৪৮ জন। সেখানে ১৫ এপ্রিল তা কমে রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৫৭ জন।গত বৃহস্পতিবার থেকে এই প্রবণতা দেখা গেছে ।এটাকে ইতিবাচক হিসাবেই দেখছেন ফরাসি স্বাস্থ্যমন্ত্রী অলিভিয়ের ভেরান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন এর ফলে হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ কমবে।

দেশটির ইল-দ্য-ফ্রান্স -এ সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়ছেন। এদিকে এ পর্যন্ত শতাধিক বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও তাদের বেশিরভাগই সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন।তবে আক্রান্ত হয়ে কতজন বাংলদেশি মারা গেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বলা হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মৃত্যুর হারও বাড়ছে ফ্রান্সে। করোনাভাইরাসে ইতিমধ্যেই মৃতের সংখ্যা ১৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, দেশটির তিনভাগের একভাগ বৃদ্ধাশ্রমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে।

করোনা মহামারী শুরুর আগেই বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিনিধিত্বকারী প্রধান সমিতিগুলি ফরাসি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে একটি চিঠিতে সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছিলো যে, ফ্রান্সে করোনায় অনেক বেশি লোকের মৃত্যুর কারণ হতে পারে বৃদ্ধাশ্রম।করোনায় বৃদ্ধাশ্রমের একই চিত্র এর আগে দেখা গেছে ইতালি ও স্পেনে। ওদিকে ১০৪ জন এমপি অনিয়মিত অভিবাসীদের করোনা মহামারী থাকাকানীন সময়ে নিয়মিত করার জন্য ফরাসি প্রধানমন্ত্রী এডুয়ার্ড ফিলিপকে এক চিঠিতে অনুরোধ করেছিলেন।বাংলাদেশ,ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ৫ লাখ অনিয়মিত অভিবাসী রয়েছে ফ্রান্সে।তারা এ খবরে আশান্বিত হয়েছিলেন।তবে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো তার সোমারের ভাষণে এ বিষয় কোনো সিদ্ধিান্ত না দেয়ায় অনিয়মিত অভিবাসীরা অনেকটা আশাহত হয়েছেন।
দেশটিতে বুধবার পর্যন্ত সবমিলিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় দেড়লাখ মানুষ।এরমধ্যে চিকিৎসাধীন প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৬৩জন । আর সবমিলিয়ে মারা গেছেন ১৭ হাজার ১৬৭ জন। এরমধ্যে বৃদ্ধাশ্রমে মারা গেছেন ৬ হাজার ৫২৪ জন।হাসপাতালে মারা গেছেন ১০ হাজার ৬৪৩ জন।দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।২৩ জানুয়ারি প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগি শনাক্ত হয় ফ্রান্সে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোন সোমবার জাতীর উদেশে দেয়া এক ভাষণে বলেছেন যুদ্ধে এখনো জয়ের মুখ দেখা যায় নি।করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও মহামারী এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি ।এ কারণে লকডাউনের মেয়াদ আগামী ১১ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।পাশাপাশি ঘোষণা দিয়েছেন আগামী ১১ মে র পর থেকে স্কুল পর্যায়ক্রমে খুলে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

এক ফরাসি সাংবাদিক বলেছেন ১০০ বছর আগের স্পেনিশ ফ্লুতে ফ্রান্সে ২লাখ ৪০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল।তখন কিছু কিছু জায়গায় জনসমাগম বন্ধ করা হলেও করোনাভাইরাসের কারণে চলমান ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
এদিকে প্রত্যেক রাতেই ফরাসী নাগরিকেরা তাদের বাড়ির জানালা ও ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্য-কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা প্রকাশ করছেন।তারা মনে করছেন, ডাক্তার, নার্স ও কেয়ার হোমের স্টাফ সবাই মিলে একজোট হয়ে এই ভাইরাসকে দ্রুত পরাজিত করা সম্ভব।

বোনসঃ স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মীদের জন্য ১ হজার ৫০০ ইউরো এবং তাঁদের অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার জন্যে প্রতি ঘন্টা হিসাবেও পরিশ্রমিক দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
এছাড়া পরিবার প্রতি ১৫০ ইউরো করে এবং তাদের প্রতি সন্তানের জন্য ১০০ ইউরো করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ফরাসি সরকার ।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031