সাবেক নির্বাচন কমিশনার। সাবেক সেনা কর্মকর্তা। বিশ্লেষক, গবেষক। ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। করোনার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মানবজমিনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। এই মুহুর্তে করোনা যুদ্ধ জয়ের একমাত্র অস্ত্র হলো ঘরে থাকা। এবং এই সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথ বাহিনীকে যথাযথ কতৃত্ব দেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এটাইতো (ঘরে থাকা) এখন পর্যন্ত একমাত্র ওষুধ বলে জেনেছি।

করোনা প্রতিরোধে হোম কোয়ারেন্টিন এই পর্যন্ত পরীক্ষিত উপায়। যেহেতু এটাই একমাত্র উপায় এখন সে কারণে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে সেটা বিশ্বব্যপী। সংক্রমণটা ঠেকানোই হচ্ছে এখন বড় জিনিস। বাংলাদেশের মত স্থানে যেখানে অত্যন্ত ঘনবসতি। সিংহভাগ মানুষ যেখানে দিন আনে দিন খায়। তাদের জন্য শুধুমাত্র মুখে সামাজিক দূরত্বের কথা বলে তাদেরকে খুব বেশি দিন এভাবে রাখা খুব কঠিন। প্রতিবেশি দেশগুলোতে একই চিত্র। এই ধরনের অপরিচিত একটি মহামারী হ্যান্ডেল করার মতো আমাদের কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছিলো না। সময় পাওয়া স্বত্ত্বেও আমরা ঠিক বুঝঁতে পারিনি কি করতে হবে। এখন দেখা গেছে করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে হেলথ সেক্টরের মিনিমাম যেটা প্রয়োজন ছিলো সেব্যবস্থাও নেই। দু:খজনকভাবে সিলেটের ওসমানি মেডিকেল কলেজের একজন চিকিৎসক মারা গেলেন। হয়তো তার কাছে সুরক্ষা ব্যবস্থা তেমন ছিলো না।  এটাতো একটি দিক। দ্বিতীয় দিক হচ্ছে, ল’ ইনফোর্সমেন্ট এজেন্সি ঠিকই রাস্তায় আছে কিন্ত আমার মনে হয় নানাবিধ কারণে তারা হার্ডলাইনে যেতে পারছে না। হার্ডলাইনে না যাওয়ার কারণে আমাদের এখানে কোয়ারেন্টিন বা লকডাউন মোটেও কার্যকর হচ্ছে না। ফলে সামাজিক সংক্রমণটি হচ্ছে। প্রথম দিকে আমরা  প্রায় ছয় লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশিকে স্ক্রীনিং করতে পারিনি। এখানে রাজনীতির কোনো ব্যাপার নয়। যদি কথায় না মানে তাহলে বেতে মানাতে হবে। বড় ধরনের জরিমানা করতে হবে। এবং সরকারকে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মধ্যে যারা আছে তাদের তালিকা করে তাদের কাছে প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এই সময়েও বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর আসছে চাল আত্মসাতের। কে কাকে ত্রাণ দিচ্ছে, কাকে ডেকে এনে দিচ্ছে এগুলোতো কোনো নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে হয় না। সমন্বয়ের অভাব। এটা যদি না হয় তাহলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আমরা কি দেখবো জানি না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যত দ্রুত সম্ভব যৌথ বাহিনীকে যথাযথ কতৃত্ব দিতে হবে। সেক্ষেত্রে যদি কোনো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাদেরকে নিতে দিতে হবে। সেটা জেল হোক কিংবা জরিমানা। মানুষের ভেতরে যদি ল’ইনফোর্সমেন্টের ভয় না থাকে। আমরা এমনই জাতি সহজে কথা শুনতে চাই না। জরুরী কাজ ব্যতীত বাইরে আড্ডা মারা, বসে থাকা এগুলো নিয়ন্ত্রণে তাদের বিকল্প দেখছি না। তিনি বলেন, সরকার এত প্রণোদনা দিয়েছে সেই টাকাগুলোর ছাড় ইমিডিয়েটলি দেওয়া দরকার। যাতে গার্মেন্টসসহ অন্যান্য শ্রমিকদের বেতন দেয়া যেতে পারে। তাছাড়া  গার্মেন্টস মালিকরা এক মাসের বেতন কেন দিতে পারবেন না এটা আমার বুঝে আসে না।
সেলফ হোম কোয়ারেন্টিন সম্পর্কে তিনি বলেন, মাঝে মধ্যে কিছুটা বোরিং লাগে। যেহেতু আমি লেখালেখির সঙ্গে যু্ক্ত তাই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্টাডি রুমে বসে বই পড়ি। এবং লেখালেখি করছি। ঘরে বসে কিছু শরীর চর্চা করি। ছাদে কিছু গাছপালা আছে, মাঝে মধ্যে উপরে উঠে সেগুলো দেখি। বন্ধুেদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে টেলিফোনে আড্ডা দেই। ধর্মকর্ম করা হয়। বাইরে অনেক দিন হয়েছে যাই নি। যদিও পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে মন ভালো থাকার কথা নয়। এটা কাটিয়ে উঠি বই পড়ে। পুরোনো সিনেমা দেখে। বাসার প্রত্যেকে যে যার মত সুরক্ষা ব্যবস্থা নিচ্ছে। গত এক মাস ধরে বাসায় আছি।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031