লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দেশে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্ত । কোন উদ্যোগই কাজে আসছে না। সুস্থের চেয়ে মৃত্যুর সংখ্যাই বেশি। বিশ্বের গড় সুস্থতার চেয়েও বাংলাদেশ পিছিয়ে। দেশে সুস্থতার হার ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ৫৮ জন। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৮৩৮ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৭৫ জন।
দেশে করোনার রোগী কম সুস্থ হওয়ার কারণ সম্পর্কে আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, সাধারণ লক্ষণ বা উপসর্গ চলে গেলে ২৪ ঘণ্টা পরপর দুইটি পরীক্ষায় নেগেটিভ আসলে তাকে সুস্থ হিসেবে ধরা হয়। এতে তিন থেকে ছয় সপ্তাহ সময় লাগে। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকলে রয়েছে।
অন্যদিকে সারা বিশ্বের আক্রান্তের ২৩ দশমিক ২৭ শতাংশ গড়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখের ওপরে। বিশ্বে মোট আক্রান্ত ২১ লাখ ৮৪ হাজারেরও বেশি। মৃতের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। ভাইরাসটির উৎপত্তি স্থল সেই চীনে সুস্থতার হার প্রায় ৯০ শতাংশ।
সাধারণত
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সময় থেকে প্রকাশ পাওয়ার পর পুরোপুরি সুস্থ
হতে ৩০ দিন সময় লাগে। যদিও মানুষের আতঙ্ক বেড়েই চলেছে করোনাকে ঘিরে। তবে
একটু হিসাব দেখলেই বোঝা যাবে করোনা মারণ ফাঁদ হলেও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার
পর বেশিরভাগ মানুষ সুস্থও হয়ে উঠছেন।
মানুষের দেহে ছয় ধরনের
করোনাভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে, যথা- আলফা করোনা ভাইরাস, বিটা করোনা ভাইরাস
এবং বাকি দুটি সার্স ও মার্স তাদের প্রাণঘাতী লক্ষণগুলোর জন্য পরিচিত।
হিউম্যান
করোনা ভাইরাস ছড়ানোর কারণ হিউম্যান করোনা ভাইরাস সাধারণত একজন ব্যক্তির
শ্বাসনালীকে প্রভাবিত করে। শ্বাসনালীতে সংক্রমিত তরল কাশি বা হাঁচির সময়
এক ব্যক্তির থেকে আরেক ব্যক্তির মধ্যে চলে যায়। করোনাভাইরাসের পূর্ববর্তী
লক্ষণগুলো সর্দি, গলা ব্যথা, কাশি, মাথা ব্যাথা, জ্বর, হাঁচি, অবসাদ, শ্বাস
নিতে কষ্ট হওয়া।
চীনে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ এই
ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। কিছু গবেষণা বলছে যে,
করোনায় আক্রান্ত কারো অসুস্থবোধ করা শুরু হওয়ার ১০ দিনের মধ্যে এই ভাইরাসের
সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি খুব কম।
তবে চীনের সেন্টার ফর ডিজেজ কন্ট্রোল
অ্যান্ড প্রিভেনশন টিম সতর্ক করে বলেছে, অধিকাংশ লোকজনের শরীরে সামান্য
লক্ষণ দেখা দেয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই রোগ ধরা পড়ে না।
যদি কেউ করোনায়
আক্রান্ত হয়ে যায়, তবে তা কতদিনে বোঝা যাবে তা নিয়ে বিভ্রান্তে অনেকেই।
নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পাঁচদিনের মধ্যেই
আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে অসুস্থতার লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে। অনেক
ক্ষেত্রে এতে ১২ দিনের মতো সময় লাগে।
অ্যানালস অব ইন্টারনাল মেডিসিন জার্নালে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এ গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ করোনা রোগীর শরীরে ১২ দিনের মধ্যে উপসর্গ প্রকাশ পেয়েছে। তবে, গড়ে এ সময়সীমা ছিল মাত্র পাঁচদিন। অর্থাৎ, ভাইরাস সংক্রমণের পাঁচদিনের মধ্যেই বেশিরভাগ রোগীর শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা গেছে।
আমেরিকান কলেজ অব ফিজিশিয়ান জানিয়েছে, নতুন এ গবেষণা প্রতিবেদনের সঙ্গে আগের ধারণাকৃত ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন সময়সীমার মিল রয়েছে।
গত
ডিসেম্বরে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কিছুদিনের মধ্যেই চিকিৎসকরা
জানিয়েছিলেন, কারো শরীরে করোনা সংক্রমণের সন্দেহ থাকলে তাকে দুই সপ্তাহ
আলাদা রাখা উচিত। কারণ, শরীরে করোনাভাইরাস থাকলে এই সময়ের মধ্যেই তার লক্ষণ
প্রকাশ পাবে। বয়স্ক এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যায় ভোগা মানুষকে বেশি
আক্রান্ত করছে করোনা ভাইরাস। তবে উহানের ১০০ বছর বয়সী আক্রান্ত এক ব্যক্তি
সেরে ওঠেছেন এই রোগ থেকে। গত ৭ই মার্চ তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়াও
হয়েছে। দেশে প্রথমে ৮ই মার্চ আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশও ৮০ বছর
বয়সের একজন সুস্থ হওয়ার খবর দিয়েছে আইইডিসিআর।
এদিকে দেশে ৬৮ শতাংশ
করোনা রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং ৩২ শতাংশ রোগীকে হাসপাতালে
নিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। ৮০ ভাগ রোগীর চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না
বলো জানায় সংস্থাটি।