প্রিয় মানুষ-৩
তাকে দেখতাম দুর থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে আমরা ছিলাম সবচেয়ে বেয়াদব গ্রুপ। কিন্তু তার সঙ্গে কোনোদিন একটু মজা করার সাহসও হতো না আমাদের। সুচিত্রা সেনের মতো স্নিগ্ধ সৌন্দর্য, ফার্স্ট ক্লাশ ফাষ্ট। অতি বনেদী পরিবারের মেয়ে শাহনাজ হুদাকে মনে হতো ধরা ছোঁয়ার বাইরের কোনো মানুষ।
আমি যখন তৃতীয় বর্ষে তখন তিনি আমাদের শিক্ষক হলেন। সরাসরি ক্লাশ পাইনি, পরীক্ষা হলে এলেন একদিন গার্ড দিতে। আমার কাছাকাছি এক সহপাঠী (এখন বিশাল ও নামী ব্যাক্তি আইনের ভূবনে) নকল করছে। দেখে চিৎকার করে ডাকলাম তাকে।
তিনি আসতে আসতে সে নকল ছুড়ে মারলো জানালা দিয়ে। কিছু না পেয়ে তিনি উল্টো বকা দিলেন আমাকে। খুব মন খারাপ করে তার থেকে দুরে দুরে থাকলাম।
এটা তো ছিলো, আরো কিছু কারণে আমি নিজে শিক্ষক হিসেবে যো দেওয়ার অনেক বছর পর্যন্ত ঠিকমতো কথা হতো না আমাদের।
আর এখন! মনে হয় কোনো মানুষকে খুন করে ফেললেও যাকে সব বলতে পারব সেটি তিনি। মনে হয় নিজের সব সম্পদ কারো কাছে রেখে মরে যেতে হলে সেটি হবেন তিনি।
আরো কত কিছু মনে হয় আমার, শ্রদ্ধায় আর ভালোবাসায়। কয়েকমাস আগে তার স্বামী আমাদের প্রিয় রাজ্জাক ভাই মারা গেলেন হঠাৎ। পারিবারিক কবরস্থানে স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছেন তিনি।
আমার দুচোখ ভরা পানি। রাজ্জাক ভাইয়ের জন্য, শাহনাজ আপার জন্যও। তাকে শুধু আমি ভালোবাসি না। আমাদের আইন বিভাগে শিক্ষক, কমর্চারী, ছাত্র-ছাত্রী সবার সবচেয়ে প্রিয় তিনি।
অসম্ভব দায়িত্বশীল, দানশীল, স্নেহপ্রবণ আর ন্যায়পরায়ন মানুষ হিসেবে তাকে চিনি আমরা। তিনি কাউকে বলেন না তবু কিভাবে যেন সবাই জেনে যায় কারো বিপদে যদি একজন মানুষও পাশে দাঁড়ায় সেটি তিনি।
লেখক: ড. আসিফ নজরুল, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
