গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত অদৃশ্য শত্রু করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) । বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ অচল হয়ে পড়েছে। ঘরবন্দি রয়েছে কয়েকশ কোটি মানুষ। স্বাভাবিক জীবন যাপন বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও করোনার ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪১৮৬ জনের, মৃত্যু হয়েছে ১২৭ জনের।

গোটা বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২৭ লাখের দিকে এগোচ্ছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা দুই লাখ ছুঁই ছুঁই করছে। এর প্রাদুর্ভাব খুব দ্রুত ভয়ংকর আকার নিলেও এটি দূর হতে অনেক দেরি হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই সংস্থা জানিয়েছে, করোনার দূর হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পথটি অত্যন্ত কঠিন হবে। বিভিন্ন দেশ যে লকডাউন অবস্থায় রয়েছে সেটি চালু রাখতে হবে এবং ছয়টি শর্ত পূরণ করলেই স্বাভাবিক জীবনে ফেরা সম্ভব হবে।

স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে ছয়টি পরামর্শ দিয়েছে, চলুন সেগুলো জেনে নিই-

১. লকডাউন জারি রাখা ও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা

স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে বিশ্ব যে ছয় শর্ত দিয়েছে তার প্রথম শর্ত হলো লকডাউন দ্রুত উঠিয়ে নেয়া যাবে না। এছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যাতে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় সেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সংক্রামিত ব্যক্তি ও এলাকা শক্তভাবে তদারকি করতে হবে। যাতে তার থেকে বা ওই এলাকা থেকে অন্য এলাকায় এটি ছড়িয়ে না পড়ে।

দেশগুলো আস্তে আস্তে কম সংক্রামিত এলাকাগুলো বাছাই করে কয়েকটি ধাপে লকডাউন তুলতে পারে। তা হতে হবে ধীরেসুস্থে এবং সম্পূর্ণ তথ্য বিশ্লেষণের পর।

২. পরীক্ষা, শনাক্ত এবং বিচ্ছিন্ন করে চিকিৎসা

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দ্বিতীয় পরামর্শ এটি। যতটা সম্ভব পরীক্ষা করতে হবে। করোনা রোগী শনাক্ত হলে তার এবং তার সংশ্লিষ্টতায় আসা ব্যক্তিদের তদারকি ও কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। যথাসম্ভব চিকিৎসা দিতে হবে। কারণ বেশিরভাগ দেশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, করোনার সংক্রমণ শুরু হতেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

৩. হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে হবে

বৃহত্তরভাবে ছাড়াও স্থানীয় সকল হাসপাতাল ও স্বাস্থকর্মীদের করোনা ঝুঁকি কমাতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট স্থান ও কর্মীদের ঝুঁকি যতটা কম হবে তত ভালো চিকিৎসকা দেয়া সম্ভব হবে এবং সেই গতিতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে। বিশেষ করে যেসব হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা হচ্ছে, সেটি হলো সংক্রমণের হটস্পট। এখানে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয় এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থায় করোনার সংক্রমণ ঘটে তবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে উঠবে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে উঠবে।\

৪. কর্মক্ষেত্র, স্কুল ও অন্যান্য জায়গায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

করোনার প্রাদুর্ভাবের আগে যেমন স্বাভাবিক অবস্থা ছিল তেমনটি আর কখনো ফিরে আসবে কি না তার বলা মুশকিল। কিন্তু নিরাপত্তা ও প্রতিরোধমূলকব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন ঘটবে। কর্মক্ষেত্র, স্কুল ও অন্যান্য জায়গায় অনেক নিয়ম বদল হবে। সম্ভবত মাস্ক, স্যানিটাইজার এবং আরও অনেককিছু জীবনে অন্তর্ভুক্ত হবে।

৫. অন্য জায়গা থেকে আসা ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি

লকডাউন তুলতে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে দেশগুলোকে ভ্রমণের ওপর কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কারণ ভাইরাসের সংক্রমণ কমে গেলেও বাইরে থেকে কারো শরীরের মাধ্যমে এসে তা আবার পুনরায় হানা দিতে পারে। কারণ এই অদৃশ্য শত্রু সহজে ধরা দেবে না। এজন্য ভ্রমণ চালুর আগে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৬. বাস্তবতার শিক্ষা নিতে হবে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে লকডাউন তোলা হলেও বা স্বাভাবিক জীবন ফিরে আসলেও তা সম্পূর্ণ আগের মতো হবে না। এর গতিশীলতা অনেকাংশেই সীমাবদ্ধ থাকবে। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত এমনভাবেই হয়তো জীবন পরিচালনা করতে হবে। এজন্য এই অবস্থা থেকে শিক্ষা নিয়ে সে অনুযায়ী জীবন যাপনে অভ্যস্ত হতে হবে। করোনার হানা শেষ হলেও একটি নতুন জীবন পরিচালনার জন্য শিক্ষা ও প্রস্তুতি নিতে হবে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031