প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাস মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অর্থবহ কৌশল উদ্ভাবনসহ পাঁচ দফা প্রমÍাব পেশ করেছেন। এ প্রস্তাবের ভিত্তিতে সম্মিলিত বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব এবং বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কোভিট-১৯ বিষয়ে আয়োজিত ভার্চুয়াল আঞ্চলিক কনফারেন্সে দেয়া ভাষণে তিনি এ আহবান জানান। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) ‘দক্ষিণ এশিয়ায় করোনাভাইরাস এবং অর্থনীতিতে এ সংক্রান্ত প্রভাব মোকাবিলায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল সম্মেলনের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে সম্মেলনে অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জানি না এই মহামারী কতদিন থাকবে। এটা ইতোমধ্যেই অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। আমাদের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সমাজকে সঠিক পথে আনতে হবে, এই ক্ষত এবং ভয় থেকে জনগণকে বেরিয়ে আসায় সহযোগিতা করতে হবে এবং সকল গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোর পুনরুজ্জীবন ঘটাতে হবে।

করোনাভাইরাস আমাদের অস্তিত্বের প্রতিই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। বিশ্বায়নের এই যুগে বিশ্বের কোন একটি দেশকে অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয় এবং বিচ্ছিন্নকরণ নীতিও আর কাজে আসবে না।

শেখ হাসিনা তার প্রস্তাবে বলেন, বিশ্বের মানবকল্যাণের জন্য নতুন চিন্তার প্রয়োজন পড়বে, অসমতা মোকাবেলা, গরিবদের সহযোগিতা এবং আমাদের অর্থনীতিকে কোভিড-১৯ পূববর্তী অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া, কেননা এই মহামারীর দরুন সমাজগুলোতে দারিদ্র এবং অসমতা দ্রুতলয়ে বেড়ে চলেছে। গত এক দশকে আমরা আমাদের অর্ধেক দারিদ্রকে কমিয়ে এনেছি, যাদের অনেককেই আবার পেছনে ফিরে যেতে হতে পারে। কাজেই বিশ্বকে নতুনভাবেই মানব কল্যাণের জন্য চিন্তা করতে হবে, অসমতা মোকাবিলা, দরিদ্রদের সহযোগিতা এবং অর্থনীতিকে কোভিড-১৯ পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া।

দ্বিতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের জি-৭, জি-২০ এবং ওইসিডি থেকেও শক্তিশালী বৈশ্বিক নেতৃত্ব প্রয়োজন। জাতিসংঘের নেতৃত্বে বহুমুখী ব্যবস্থাটিকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি ২০২০ সালের গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্টে ‘সংক্রামক রোগ’ কে একটি মূল ঝুঁকি হিসাবে চিহ্নিত করার জন্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী চেয়ারম্যান অধ্যাপক ক্লাউস সোয়াবে প্রশংসা করেন।

তৃতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বর্তমান কৌশল ও কৌশলগত সহায়তা ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন,আমরা ইতিমধ্যে প্রত্যক্ষ করেছি সরবরাহ চেইনের মধ্যে থাকা অনেক বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করছে না। কাজেই আমাদের কৌশল এবং ব্যবহারিক সমর্থন ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার যাতে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো মানিয়ে নিতে পারে।
চতুর্থ প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, অভিবাসী শ্রমিকদের বোঝা ও দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার জন্য একটি অর্থবহ বৈশ্বিক কৌশল অবলম্বন করা উচিত।

তিনি বলেন, ‘অভিবাসী শ্রমিকরা খুব কঠিন সময় পার করছেন, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চাকরী হীনতা যেটা দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিকেও ঝুঁকির মুখে ফেলছে। কাজেই আমাদের একটি অর্থবহ বৈশ্বিক কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন যাতে করে এই বোঝা এবং দায়িত্বকে ভাগ করে নেওয়া যায়। পঞ্চম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যতে আরো ভাল প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী সমাধান প্রণয়নের আহবান জানান।

প্রাণঘাতি ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন যে, ৪১ দিনের ছুটি কার্যকর করার ফলে দেশের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ লকডাউন অবস্থায় রয়েছে। আমাদের এসব পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে গত ৪৭ দিনের মধ্যে ১২৭ জন মারা যাওয়ার সংখ্যা কম রয়েছে এবং আক্রান্ত লোকের সংখ্যা হচ্ছে ৪,১৮৬ জন। এই মহামারীর কারণে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরবরাহ ও চাহিদা উভয় ধরনের চাপ মোকাবেলা করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আঘাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সরকার বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমি ইতোমধ্যে আমাদের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের জন্য ১১.৬০ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ ঘোষণা করেছি যা আমাদের জিডিপির ৩.৫% এর সমান। তিনি বলেন, এই প্যাকেজের প্রাথমিক লক্ষ্য হবে উৎপাদন ও পরিষেবা খাত, কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের বিভিন্ন সুবিধা। খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়টিকে একটি আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত রয়েছে। ‘তবে দীর্ঘায়িত সঙ্কটের ক্ষেত্রে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবার জন্য, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরবরাহ বিঘিœত হওয়ার কারণে বাংলাদেশের কৃষিখাতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় কৃষির জন্য প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। সরকার প্রায় ৫ কোটি লোককে সরাসরি নগদ অর্থ প্রদান করতে চলেছে এবং ছয় লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য এখন পর্যন্ত দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষদের সহায়তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ড. পুনম ক্ষেত্রপাল সিং পরে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি এবং মহামারী থেকে উদ্ভূত সংকট মোকাবিলার জন্য কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।  স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যসেবার ভবিষ্যৎ রূপদান বিষয়ক ডব্লিউইএফ’র প্রধান আর্নড বার্নার্ট ফোরামের স্বাস্থ্যসেবা কমিউনিটির পক্ষ থেকে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031