বিশ্বের লাখ লাখ শিশু অতিমারী করোনাভাইরাসের আতঙ্কে বড়দের মতো ঘরে বন্দি । সেসব শিশুদের নিয়ে চিন্তিত তাদের লাখ লাখ মা-বাবা। বিশ্বের এই ভয়ানক পরিস্থিতিতে কীভাবে তারা নিজেদের বাচ্চার যত্ন নেবেন, দেখভাল করবেন, আগলে রাখবেন, সেটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে সকল মা-বাবাদের জন্য।
ঠিক এমন সময়ে বিশ্বের সকল মা-বাবাদের উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন হলিউডের অস্কারজয়ী অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। যিনি বর্তমানে সিঙ্গেল মাদার হিসেবে ছয় সন্তান লালন পালন করছেন। জোলির সেই চিঠিটি ছাপা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাপ্তাহিক পত্রিকা টাইম ম্যাগাজিনে। চলুন তবে দেখে আসি চিঠিতে কী লিখেছেন নায়িকা।
প্রিয় মা-বাবারা,
‘আমি আপনাদের কথা ভাবছি। আমি কল্পনা করতে পারি, দিনগুলো পার করার জন্য আপনারা প্রত্যেকে কী কঠিন চেষ্টা করছেন। আপনার ভালোবাসার ধনদের এ সময়টা পাড়ি দেয়ার পথ দেখাতে আপনারা কতটা উদ্গ্রীব, তা আমি বুঝি। আপনাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আমি বুঝি। বুঝি, কীভাবে আপনারা দিন পেরোনোর নানা পরিকল্পনা করছেন। ভেতরে-ভেতরে কখনো যখন আপনারা ভেঙে পড়ছেন, তখনও সন্তানদের জন্য আপনারা কীভাবে হাসিমুখে থাকছেন।’
‘আমি যৌবনে খুব ধীরস্থির ছিলাম না। আসলে আমি কখনো ভাবিনি যে কারও মা হবো। যখন মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম, সেই সময়ের কথা আমার মনে আছে। ভালোবাসাটা কঠিন কিছু ছিল না। কারও প্রতি এবং নিজের জীবনের চেয়ে বড় কোনো কিছুর জন্য নিজেকে উৎসর্গ করাটা কঠিন কিছু ছিল না। কঠিন যেটা ছিল, সেটা হচ্ছে এটা জানা যে, সবকিছু যেন ঠিকঠাক থাকে, তা এখন থেকে আমাকেই নিশ্চিত করতে হবে। সবকিছু সামাল দিতে হবে এবং সচল ও কার্যকর রাখতে হবে। খাওয়াদাওয়া, স্কুল আর চিকিৎসা থেকে শুরু করে যা কিছু সামনে আসবে, সবকিছু। আমার ধৈর্য অটুট রাখতে হবে।’
‘বুঝলাম, আমি নিরন্তর দিবাস্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিয়েছি, বরং যখন যা কিছু করছি বা ভাবছি, নিমেষে তা ছেড়ে উঠে কোনো একটা চাহিদা মেটানোর জন্য আমি সর্বক্ষণ তৈরি থাকছি। এই নতুন গুণটি আমাকে আয়ত্ত করতে হয়েছে। তাই বিশ্বজোড়া এই মহামারির মধ্যে আমি ঘরবন্দী সন্তানদের সব মা ও বাবার কথা ভাবছি। সেই মা-বাবারা, যারা সবাই সবকিছু ঠিকমতো করতে পারবেন বলে আশা করছেন। আশা করছেন, তারা সব প্রয়োজন মেটাতে পারবেন এবং শান্ত ও আশাজাগানিয়া হয়ে থাকতে পারবেন। ইতিবাচক থাকতে পারবেন।’
‘এমনটা যে অসম্ভব, সেই বোধ আমাকে সাহায্য করেছে। এটা বড় চমৎকার একটা অনুধাবন যে সন্তানরা আপনাদের নিখুঁত দেখতে চায় না। তারা শুধু চায়, আপনারা অকপট হবেন, সত্য আচরণ করবেন। আর আপনাদের যথাসাধ্য ভালোটুকু করবেন। আসলে আপনাদের দুর্বল জায়গাগুলোতে নিজেদের সবল করে তোলার যত বেশি সুযোগ তারা পায়, ততই তারা শক্তপোক্ত হয়ে গড়ে ওঠে। তারা আপনাদের ভালোবাসে। তারা আপনার সহায় হতে চায়। সুতরাং শেষ পর্যন্ত বিষয়টা একযোগে একটা দল গড়ার। এক দিক থেকে দেখলে তারাও কিন্তু আপনাদের বড় করে তুলছে। আপনারা একসঙ্গে বেড়ে উঠছেন।’
প্রসঙ্গত, হলিউডের খ্যাতনামা অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি রুপালি পর্দার জগতের বাইরে এসে নিজেকে মানবতার সেবায়ও যুক্ত করেছেন। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে তিনি রোহিঙ্গা শিশুদের প্রতি সমমর্মিতা জানাতে বাংলাদেশেও এসেছিলেন।
