দৃশ্যপট হঠাৎ বদলে গেছে । সড়কে বেড়েছে যানবাহন। ফুটপাতে, রাস্তায় অবাধে চলাচল করছে মানুষ। যততত্র বসেছে দোকান। কোনো কোনো রাস্তার মোড়ে যানজটও চোখে পড়েছে। গত কয়েকদিনে রাজধানীর হাতিরপুল, শাহবাগ, মগবাজার, পল্টন, ফকিরাপুল, কাকরাইল, মালিবাগ, রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এরকম দৃশ্য। যদিও আজ সকাল থেকেই ঢাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। এর আগের কয়েকদিনে সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় দেখা গেছে পোশাক শ্রমিকদের ভিড়।
দল বেঁধে পায়ে হেঁটে বিভিন্ন কারখানায় যাচ্ছিলেন তারা। একইভাবে বিকাল ৪টার দিকে মালিবাগ মোড়ে দেখা গেছে কয়েক শ’ পোশাক শ্রমিককে হেঁটে হেঁটে রাস্তা পার হচ্ছেন। এসময় ফরচুন শপিং মলের বিপরীত দিকের রাস্তায় এক ফেরিওয়ালার দোকানে ভিড় করেন তারা। সেখানে নিরাপদ দূরত্ব বজায় না রেখেই লেবু, শসা ইত্যাদি কেনাকাটা করছিলেন। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মৌচাকের সামনে দাঁড়িয়ে দেখা গেছে, একের পর এক প্রাইভেট কার ছুটে যাচ্ছিলো। সেইসঙ্গে রাস্তায় চলছিলো সিএনজি অটোরিকশা, রিকশা, পিকআপ। শান্তিনগর মোড়ে একজন ট্রাফিক পুলিশকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়াও পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে কোথাও ট্রাফিক পুলিশের দেখা মিলেনি। মৌচাক মোড়ে প্রাইভেট কার, রিকশা ও অটোরিকশায় ভিড় জমে গেলে শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে টহল টিমের দুই পুলিশ সদস্যকে। কাকরাইল মোড়, পল্টন মোড় এলাকায় যানবাহনের ভিড় ছিলো। পল্টন মোড় থেকে বিজয় নগরের দিকে যেতেই চোখে পড়ে পুলিশের একটি চেক পোস্ট। সেখানে ফুটপাতে একজন উপ-পরিদর্শককে পিপিই পড়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। তার আশ পাশে কয়েক পুলিশ সদস্য বসে ছিলেন। তাদের মুখে মাস্ক, কারও কারও হাতে ছিলো গ্লাভস। পুুরানাপল্টন, ফকিরাপুল, খিলগাঁও এলাকায় দেখা গেছে অভিন্ন দৃশপট। কাওরান বাজার, হাতিরপুল, যাত্রাবাড়ী, শান্তিনগর, তালতলা, রামপুরাসহ বাজারগুলোতে ছিলো মানুষের উপচেপড়া ভিড়। নিরাপদ দূরত্ব বজায় না রেখেই কেনাকাটা করছিলেন ক্রেতারা। বিকাল ৪টার দিকে দোকান বন্ধ করার নির্দেশনা থাকলে শান্তিনগর কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা গেছে তখনও বিক্রি হচ্ছে। অনেকে শাটার অল্প খোলা রেখে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছেন। রামপুরা এলাকায় বিকাল ৫টা পর্যন্ত পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে। এমনকি রামপুরার কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে উলনের গলি পর্যন্ত মূল সড়কেও বসেছিলো বাজার। বিভিন্ন সবজি, ইফতার সামগ্রী নিয়ে সেখানে বসেছিলেন ফেরিওয়ালারা। মহাখালী ও গুলশান এলাকায় প্রাইভেট কার, ট্রাক-পিকআপ, অটোরিকশা ও রিকশার সরব উপস্থিতি ছিলো। ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে দেখা গেছে অনেককে। মগবাজার মোড়ে কথা হয় মধ্য বয়সী এক পথচারীর সঙ্গে। নিজেকে ফার্নিচার দোকানের কর্মীচারী পরিচয় দিয়ে তিনি জানান, দীর্ঘদিন বাসায় থাকতে থাকতে অসহ্য হয়ে গেছেন। তাই একটু রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়েছেন। সুরক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মুখে লাগানো কাপড়ের মাস্কটি দেখিয়ে বলেন, বাসায় ঢুকার আগেই হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নেব। তবে এভাবে রাস্তায় বের হওয়া ঠিক হয়নি বলেও স্বীকার করেন তিনি। বিকালে তলতলার ফয়জুর রহমান আইডিয়াল স্কুল সংলগ্ন এলাকায় দেখা গেছে নিরাপদ দূরত্বে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছেন প্রায় অর্ধশত নারী-পুরুষ। দেখে মনে হচ্ছে কেউ হয়তো ত্রাণ দেবেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো বয়স্ক এক ব্যক্তি বলেন, ‘প্রায় দিনই এমুন সময় এইখানে কেউ কিছু দেয়। এইজন্য দাঁড়াইছি। আজকে দিবে কি না জানিনা। বুঝেনতো ঘরে খাওন নাই।’ ঘরে খাবার নেই। তাই যদি এখানে কিছু পান সেই আশায় এই বৃদ্ধের মতো অনেকে দাঁড়িয়েছেন। ত্রাণ প্রার্থীরা একদিকে অন্যদিকে ফুটপাতে বসে আড্ডা দিচ্ছেলেন কয়েক যুবক। এরমধ্যেই দ্রুত গতিতে ছুটে যাচ্ছিলো মোটরাসাইকেল, প্রাইভেটকার। কিছু সময় যানজট লাগতেও দেখা গেছে ওই এলাকায়। দায়িত্বরত পুলিশের মাঠ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন অফিস, কারখানা খোলার কারণে মানুষ রাস্তায় বেরিয়েছে। তাছাড়া দোকান খোলার সময় বিকাল ৪টা পর্যন্ত করার কারণে অনেকে কেনাকাটা করতে বেরিয়েছেন।
