ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধারা সিলেটে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। ক্রমেই বেড়ে চলেছে এ সংখ্যা। শ’র কাছাকাছি। এই সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। অপরদিকে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীরা যেভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন, এতে করে চিকিৎসায় সংকট দেখা দিতে পারে। তবে- স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন- এখন পর্যন্ত যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা কেউই করোনা রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হননি। তারা সাধারন রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়েই আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে সংক্রমনের বিষয়টি রোগী দ্বারাই হচ্ছে।

সিলেটে গরিবের ডাক্তার বলে খ্যাত মঈন উদ্দিন ছিলেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক। পাশাপাশি ইবনে সিনায় ছিলো তার চেম্বার। করোনা আতঙ্কের মধ্যে পুরো মার্চ মাস জুড়ে তিনি স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে গেছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- তিনিও আক্রান্ত হন ‘সাধারন’ রোগী দ্বারা। কোন রোগী দ্বারা তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন সেটি নির্নয় করা যায়নি। এরই মধ্যে মৃত্যু বরন করলেন ডা. মঈন উদ্দিন। তার মৃত্যু  দেশের চিকিৎসক সমাজকে শিক্ষা দিয়ে গেছে। সচেতন হন চিকিৎসকরা। এরপরও চিকিৎসাকর্মীরা সবচেয়ে বেশিই আক্রান্ত হচ্ছেন। এখনো মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন সিলেটের একজন চিকিৎসক। তিনি আইসিইউতে রয়েছেন। সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে- সিলেট বিভাগে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩১৬ জন। এর মধ্যে ৯৮ জনই হচ্ছেন চিকিৎসা কর্মী। তারা বিভিন্ন সময় করোনায় আক্রান্ত হন। সিলেট জেলায় বুধবার পর্যন্ত ৩৮ জন স্বাস্থ্য কর্মী আক্রান্ত হন। দ্বিতীয় পর্যায়ে আছে হবিগঞ্জ। ওই জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ জন। সিলেটে এক সঙ্গে ১৬ জন ইন্টার্ন ডাক্তার আক্রান্ত হন। তাদের নিয়েও ঘটছে নানা নাটকীয়তা। আক্রান্ত হওয়ার অন্তত দুই সপ্তাহ পর তারা জানলেন তাদের করোনা আক্রান্ত। গতকাল সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ১৬ জন ইন্টার্ন ডাক্তার এখন সুস্থ। পরপর দুই বার নমুনা পরীক্ষার পর ধরা পড়ে তারা করোনা নেগেটিভ। এ কারনে বুধবার অনেকেই কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। বাকীরা আজ কাজে যোগ দেবেন। তিনি জানান- তাদের করোনা পজেটিভ হয়েছিলো। খুব বেশি আক্রান্ত হননি। এ কারনে কোয়ারেন্টিনের মাধ্যমে তারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান জানিয়েছেন- সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল হচ্ছে করোনার আইসোলেশন সেন্টার। কিন্তু ওই হাসপাতালের কোনো ডাক্তার এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হননি। তারা যথাযথ নিয়ম মেনেই করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিয়ে চলছেন। কিন্তু সিলেটের ওসমানী সহ হবিগঞ্জের যেসব স্বাস্থ্য কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন তারা সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়েই আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে ফ্রন্টলাইনের যারা তারা সংক্রমণের হার কমছে। এখনো প্রতিদিনই দু’একজন করে আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি জানান- অনেকেই চা বাগানে, হাওড় জনপদে কিংবা প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা দিচ্ছেন। অজান্তেই তারা আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে- যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের দ্বারা নতুন করে যাতে কেউ আক্রান্ত না হয় সে বিষয়টি লক্ষা রাখা হচ্ছে। ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধারের করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে- সিলেট জেলায়ও নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মন্ডল জানিয়েছেন- নতুন করে ২৭ জন চিকিৎসক সিলেটে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের ইতিমধ্যে পোস্টিং দিয়ে কাজে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ শুরু করেছেন। করোনার আক্রান্ত ৩১৬ জন : সিলেটে করোনার থ্রিপল সেঞ্চুরি হলো। সিলেটে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হলেন ৩১৬ জন রোগী। এর মধ্যে হবিগঞ্জেও করোনা পুর্ণ করলো সেঞ্চুরি। মঙ্গলবার সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য বুলেটিনের সর্বশেষ তথ্যে এ খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে- এই করোনাকালে সিলেটবাসীকে হারিয়েছেন ৬ জন। এর মধ্য চিকিৎসকদের মধ্যে প্রথম মৃত্যু ডা. মঈনউদ্দিনও রয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৭ জন। স্বাস্থ্য বুলেটিন সূত্রে জানা গেছে- সিলেট বিভাগে ৩০১ করোনা আক্রান্তের মধ্যে সিলেট জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা  ৮৮ জন, সুনামগঞ্জ- ৬৩ জন, হবিগঞ্জ- ১১৭ জন, মৌলভীবাজার- ৪৮জন। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন- ৬ জন, সুস্থ ৩৫ জন। সিলেট বিভাগে মোট কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন- ১৫২১ জন। এর মধ্যে সিলেটে ৩০৬ জন, সুনামগঞ্জে ৬২৯ জন, হবিগঞ্জে ২২১ জন, মৌলভীবাজারে ৩৬৪ জন। ২৪ ঘন্টায় কোয়ারেন্টিন রয়েছেন ৭৭ জন। কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড় পেয়েছেন ১৪৭ জন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031