বিজ্ঞানী-গবেষকদের শত প্রচেষ্টার মধ্যেও এই মারণ ভাইরাসটির ভ্যাকসিন আদৌ তৈরি হবে কি-না তা নিয়ে সংশয় আরও জোরালো হচ্ছে করোনা মহামারিতে । এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে শেষমেশ হার্ড ইমিউনিটি (herd immunity) দিয়েই করোনা মোকাবেলা করতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

শুক্রবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের বিজ্ঞান সম্পাদক ইয়ান স্যাম্পল এক নিবন্ধে শেষ পর্যন্ত হার্ড ইমিউনিটিকেই করোনা ঠেকানোর বাস্তব উপায় বলে উল্লেখ করেছেন।

তিনি লিখেছেন, ভ্যাকসিন তৈরির পদ্ধতি তাত্ত্বিকভাবে সহজ, কিন্তু বাস্তবতায় জটিল। তিন দশকের চেষ্টায়ও এইচআইভির ভ্যাকসিন এখনো আবিষ্কার হয়নি। ১৯৪৩ সালের ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন মাত্র গতবছর অনুমোদন পেয়েছে। সার্স ও মার্স করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনও এখনও আবিষ্কার হয়নি। দ্রুত আবিষ্কার হয়েছে কেবল মামপস রোগের ভ্যাকসিন, তাও চার বছর লেগেছিল।

বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা ভ্যাকসিন তৈরির সর্বোচ্চ চেষ্টার কথা তুলে ধরে ইয়ান বলেন, ‘তারা একটি ভ্যাকসিন তৈরির সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। এজন্য ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দিতে চায় ভ্যাকসিনটির পরীক্ষার জন্য।

ইংল্যান্ডের উপপ্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা জনাথন ভ্যান-টাম সম্প্রতি বলেছেন, তারা নিশ্চিত নন যে করোনার একটা ভ্যাকসিন শেষ পর্যন্ত তৈরি করতে পারবেন কি-না।

নিবন্ধে ইয়ান লিখেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে একই রোগে বার বার ভুগতে হয় মানুষকে। যেমন ঠান্ডাজনিত রোগ, মানুষের শরীরে প্রতিরোধ তৈরি হলেও কিছুদিন পর তা কমে আসে। ফলে এই রোগে তারা আবার আক্রান্ত হয়।

ইয়ান তার লেখায় বেশ কয়েকজন গবেষকের সাম্প্রতিক গবেষণার উদাহরণ টেনেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া ইউনিভার্সিটির গবেষক স্ট্যানলি পারলম্যান বলেছেন, ক্ষতের বিরুদ্ধে শরীরেই যদি পর্যাপ্ত প্রতিরোধ তৈরি না হয় তাহলে ভ্যাকসিন আদৌ কী করতে পারে? বড়জোর তা এক বছর ঠেকিয়ে রাখতে পারে।

ভ্যাকসিন কার্যকর না হওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে ইয়ান দেখিয়েছেন এই ভাইরাসের ঘন ঘন জিন পরিবর্তন। কোভিড-১৯ এর জন্য দায়ী ভাইরাসের ‘স্পাইক’, এটির মাধ্যমে ভাইরাসটি মানবশরীরে প্রবেশ করে বার বার পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। ফলে কোনো একটি ভ্যাকসিন কখনো কাজে লাগলেও তার কার্যকারিতা শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন গার্ডিয়ানের এই বিজ্ঞান সম্পাদক।

ভ্যাকসিনের কারণে মানব শরীরে কী প্রতিক্রিয়া হয় তা নিয়ে আতঙ্ক রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, সার্স ও মার্স ভাইরাসের পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর প্রাণীরা মারাত্মক শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতায় পড়েছে বলে দেখা গেছে।

তিনি বেশ কিছু পরীক্ষার বিষয় টেনে বলছেন, ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলেও হয়ত এক বছরের জন্য শরীরে কাজ করবে। তারপর আবার করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকিও তৈরি হবে। তরুণরা ভ্যাকসিন নিয়ে বাইরে কাজ করতে পারলেও বয়স্কদের জন্য ঝুঁকি থেকেই যাবে।

ইয়ান তার নিবন্ধ শেষ করেছেন হংকংয়ের এক গবেষকের উদ্ধৃতি দিয়ে। সম্প্রতি ওই গবেষক বলেছেন, করোনা যাচ্ছে না। করোনাকে নিয়েই থাকতে হবে মানুষের। আর সে জন্য মাস্ক পরতে হবে নিয়মিত। বাইরের খাবার মোটেও চলবে না। অফিস আদালত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বার রেস্তোরাঁগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031