গাড়ির লম্বা লাইন। ঢাকার রাস্তা দেখে বুঝা কঠিন। মানুষের ঘা ঘেঁষে হাটছে মানুষ। বাজারে, চায়ের দোকানে সরব উপস্থিতি। কারো মাস্ক আছে, কারো নেই। কেউ আবার থুতনিতে মাস্ক পরে আছেন। অদ্ভুত এক পরিস্থিতি। কে বলবে মৃত্যুর কাফেলায় প্রতিদিন নতুন নতুন নাম যোগ হচ্ছে।
শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
কাকতালীয় কি না
কে জানে, রোববার বাংলাদেশে দুটি বড় ঘটনা ঘটেছে। দু’ মাসের কিছু বেশি সময়
‘সাধারণ ছুটি’ শেষে সবকিছু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাভাবিক করা হয়েছে।
সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলেছে। সচল হয়েছে বন্ধ দোকানের কপাট। সেদিনেই কি
না করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। একদিনে ৪০ জন মানুষ চলে
গেলেন। বলে রাখা ভালো এটা সরকারি হিসাব।
সে যাই হোক অনেকে বলছেন নতুন
এক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। কেউ কেউ এর নাম দিয়েছেন নিউ নর্মাল।
মেনে নেয়া ও মানিয়ে নেয়া। ভিডিওটি সিরিয়ার। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল
হয়েছিল। আকাশে বোমারু বিমান। বাবা ছোট শিশুকে শেখান কীভাবে বিমানের শব্দ
শুনলে হাসতে হবে। চার বছরের বাচ্চাটি ভালোভাবে আয়ত্ত করে তা। বোমারু
বিমানের শব্দ শুনলেই হাসে সে। কে না জানে পরাশক্তিগুলো কত ধরনের অস্স্রেরই
না ব্যবহার করেছে সিরিয়ায়। আসাদ আর বিরোধীরা দেখান নৃশংসতা। আর সাধারণ
আমজনতা নিজেদের মানিয়ে নিয়েছেন এরসঙ্গে। করোনার সঙ্গে এখন যেমন মানিয়ে
নেয়ার চেষ্টা করছেন সারা বিশ্বের মানুষ। একেক দেশে একেক মডেল। জীবন ও
জীবিকা বাঁচানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা। দেশে দেশে সরকারি পলিসি নিয়ে
সমালোচনা আছে। আছে সরকারগুলো জীবনকে কতটা গুরুত্ব দেয় সে প্রশ্নও।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের নতুন এই পরিস্থিতির সঙ্গে মিলিয়ে চলা শিখতে
হচ্ছে। যদিও মানুষ নিজে তার জীবনকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন
রয়ে যাবে। আবার অনেকের সামনে কোনো বিকল্পও নেই। একজন গার্মেন্ট শ্রমিকের
সামনে জীবনকে তুচ্ছ করে কাজে যোগ দেয়া ছাড়া বিকল্পই বা কি? ঢাকার
রাস্তায় সামাজিক দূরত্ব কেউ চাইলেই মানতে পারবেন না। সোশ্যাল মিডিয়ায়
প্রশ্ন ওঠেছে, বাংলাদেশই কি পৃথিবীর একমাত্র দেশ কি না যেখানে করোনাকালে
বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। গার্মেন্ট মালিকদের পর পরিবহন মালিকরাও দেখালেন
তারা কত ক্ষমতাবান। তাদের কাছে অসহায় জনগণ। বাসে যে কত লোক ওঠানো হবে
লোকে তা ঠিকই জানে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সবাই একমত, বাংলাদেশ বড়
ধরনের ঝুঁকিই নিয়েছে। আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা কোথায় গিয়ে ঠেকে কেউ
জানে না। বাংলাদেশ কখনো সেভাবে লকডাউন কার্যকর করতে পারেনি। টেস্টের
সংখ্যাও বাড়ানো যায়নি প্রয়োজন অনুযায়ী। ট্রেসিংও করা যাচ্ছে না যে
কারণে। এ কারণেই বিশেজ্ঞরা একযোগে বলছেন, আরো সময় নেয়া দরকার ছিল। হুট
করে সবকিছু খুলে দেয়া সঠিক হয়নি। অন্যদিকেও অবশ্য যুক্তি আছে। তাদের কথা
হলো অর্থনীতি বাঁচাতে হবে। না হয় করোনায় যতো মানুষ মারা যাবে, অভাবে
মারা যাবে তার চেয়ে বেশি মানুষ। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনা কোনো
রাজনৈতিক লড়াই নয়। এটি মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের মতকেই গুরুত্ব দেয়া
জরুরি। না হয়, পরণতি কী হতে পারে দেশে দেশে আমরা সেটা দেখছি।
এতোসব
হতাশার মধ্যেও কিছুটা আশার কথা বলেছেন বিজ্ঞানী বিজন কুমার শীল। তিনি মনে
করেন, বাংলাদেশের মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ইউরোপের মানুষের তুলনায়
ভালো। তার ধারণা দেশে ৩০-৪০ ভাগ মানুষ এরইমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে
গেছেন। এবং তারা সুস্থ হয়ে ওঠেছেন। বিজন কুমার শীলের আশা একমাসের মধ্যেই
পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই পরিস্থিতি আদৌ উন্নতি হবে
কি না, হলেও এরজন্য কতটা মূল্য চুকাতে হবে? দেশের হাসপাতালে কতগুলো আইসিইউ
বেড আছে তাতো সবারই জানা। মৃত্যু তো কেবল নিছক পরিসংখ্যান নয়, অসীম এক
বেদনার নাম। নাকি আমাদের যেমন সবকিছুর সঙ্গে অভ্যস্ত হতে হয়েছে তেমনি
অভ্যস্ত হতে হবে করোনায় মৃত্যুর সঙ্গেও? এই যাত্রার শেষ কোথায় কে জানে?
