কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনার বিস্তার বন্ধ করতে পূর্ণ লকডাউন প্রয়োজন বলে মনে করে । জীবন ও জীবিকার সামঞ্জস্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করে সারাদেশে আক্রান্ত ও ঝুঁকির মাত্রার ভিত্তিতে যতটা বড় এলাকায় সম্ভব জরুরি লকডাউনের পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।

করোনাভাইরাসের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির নবম সভা শেষে থেকে বুধবার এমন সুপারিশ আসে। সভায় হাসপাতালের সেবার পরিধি বাড়ানোসহ পাঁচটি সুপারিশ করে তা দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে ১৭ সদস্যের এই কমিটি।

কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদ উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সামাজিক বিচ্ছিন্নকরণ নিশ্চিত করতে ‘পূর্ণ লকডাউন’ প্রয়োজন।

৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২৬ মার্চ থেকে অফিস আদালত ও যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে লকডাউনের বিধিনিষেধ শুরু হয়। ঘোষণা করা হয় সাধারণও ছুটিও। কয়েক দফা ছুটি বাড়ানোর পর ৩১ মে থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদে প্রায় সবকিছুই ‘সীমিত’ আকারে খুলে দেয়া হয়।

স্বাস্থ্যবিধি এবং দূরত্ব রাখার নিয়ম মেনে বিধিনিষেধ শিথিলের কথা বলা হলেও মানুষ ঝুঁকি নিয়ে কাজে যাচ্ছে। এতে করোনার সংক্রমণ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। মহামারির ওই অবস্থায় যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া লকডাউন তোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতীয় কমিটির কয়েকজন সদস্যও প্রশ্ন তোলেন।

এরপর ১ জুন সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় সংক্রমণ বিবেচনায় বিভিন্ন এলাকাকে লাল, হলুদ ও সবুজ এলাকায় ভাগ করে এলাকাভিত্তিক বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী ঢাকার পূর্ব রাজাবাজার এলাকা মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে।

গতকাল জাতীয় কমিটির সুপারিশে বলা হয়, চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা ব্যাপকহারে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী মারা গেছেন। এ হারে আক্রান্ত হতে থাকলে ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সুষ্ঠু চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকলে স্বাস্থ্যসেবা প্রবলভাবে ব্যাহত হবে। তাই হাই-ফ্লো অক্সিজেন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদানসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য আলাদা হাসপাতাল চালু করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে সব হাসপাতালে হাই-ফ্লো অক্সিজেন থেরাপির প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে চালু করার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সুপারিশ করেছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

এর আগে এই প্রসঙ্গে কমিটি যে পরামর্শ দিয়েছিল সে লক্ষ্যে হাই-ফ্লো অক্সিজেন থেরাপির ব্যবস্থা সব হাসপাতালে চালু ও সম্প্রসারণ করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়কে পুনরায় জানানো হয়।

অন্য সুপারিশে কমিটি বলেছে, কোভিড-১৯ নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে সবসময় রোগী পূর্ণ থাকছে। জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শে ইতোমধ্যে সব হাসপাতালে পৃথক এলাকা ঠিক করে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীর চিকিৎসা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যেসব হাসপাতালে এ সিদ্ধান্ত এখনও বাস্তবায়ন হয়নি সেসব হাসপাতালে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পাশাপাশি কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও বাড়ানো দরকার বলেও জানায় কমিটি। আর এজন্য বক্ষব্যাধি হাসপাতাল বা এরকম অন্য যে কোনও উপযুক্ত হাসপাতাল শিগগিরই চালু করা দরকার।

কমিটির শেষ সুপারিশে বলা হয়, সরকার করোনা টেস্টের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি করতে সফলতা দেখিয়েছে। কিন্তু এখন পরীক্ষার মান উন্নয়ন ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। যতদিন সময় কমানো সম্ভব না হয়, পরীক্ষার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা না করে সন্দেহজনক রোগীর চিকিৎসা বা আইসোলেশন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031