প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা, সিআরআইয়ের ভাইস চেয়ারপারসন ও অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ হোসেনউন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে তরুণদের সব জায়গায় সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তরুণদেরকে আগামীর জন্য প্রস্তুত হতে বলেছেন তিনি।
রবিবার সন্ধ্যায় সেন্টার ফর রিসার্স অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইয়াং বাংলা আয়োজিত তিন দিনের সাত পর্বের সিরিজ ‘লেটস টক’ অনুষ্ঠানের সমাপনী পর্বে এ কথা বলেন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন।
বঙ্গবন্ধুর নাতনী সায়মা তরুণদের উদ্দেশে বলেন, আমরা চাই তরুণরা যেন আমাদের দেশের জন্য কাজ করে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
তরুণ বয়স থেকেই দেশের ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কীভাবে একটি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হয়েছিলেন সে কথা তুলে ধরেন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল।
সায়মা বলেন, ‘উনার (বঙ্গবন্ধু) কিন্তু পলিটিকস দিয়ে জীবনের শুরু হয়নি। উনি কোনো বড় প্রতিষ্ঠান নিয়ে শুরু করেন নাই। ওগুলো পরে এসেছিল। ওনার জীবনে আগে কাজ ছিল, নিজের কমিউনিটিতে একটা গ্যাপ দেখেছিলেন সেটা নিয়ে কাজ করেছেন। আর ওখান (কমিউনিটি) থেকে উনি উঠে এসেছিলেন।’
কম বয়সী হলেই কম জানবে এমন চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনার আহ্বান জানিয়ে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) দূত সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বলেন, ‘কমবয়সী হলে কম জানবে.. এটা কিন্তু ঠিক না। কমবয়সী হলেও অনেকে অনেক জানে, পথ দেখিয়ে দিতে পারে। এটা আমাদের দেশের ইতিহাসেই আছে।’
কম বয়স থেকেই নিজেকে গড়ে তোলা যায় তার অন্যতম উদাহরণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর নাতনি বলেন, ওনার (বঙ্গবন্ধু) লিডারশিপ কোয়ালিটি তৈরি হয়েছিল ওখান থেকে, ফ্রম হিজ ইয়ুথ, ফ্রম হিজ কমিউনিটি অ্যাক্টিভিজম। ওনার নিজের কিছু মোরাল ভ্যালুজ ছিল। ওনার কিছু ড্রাইভ ছিল, ওই কম্পাসটা ওনি ফলো করেছেন। এমন না যে উনি বাধা ফেইস করেননি। অনেক বাধা ফেইস করেছেন। কিন্তু তারপরেও সুযোগ উনি করে নিয়েছিলেন এবং ওখান থেকে ওনার লিডারশিপ কোয়ালিটি তৈরি হয়েছিল। ওই কারণে কিন্তু আমরা শেষমেশ জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। উনি ওখান থেকে শিখে এসেছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুতরাং খুব কম বয়স থেকে এ জিনিসগুলো শেখা দরকার এবং আমরা যদি চাই, আমাদের দেশ উন্নতি করবে তাহলে আমাদের ইয়ুথদের এ সুযোগুলো তৈরি করে দেওয়া আমাদের সবার জন্য দায়িত্ব। ’
তরুণদেরকেও আগামীর জন্য নিজেদের প্রস্তুত করার পরামর্শ দিয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বলেন, ‘একটা বড় জিনিস, যেটা নিয়ে কথা হল, এডুকেশন সেক্টর। আমাদের এডুকেশনের যে ধারা আছে, কিসের জন্য ইয়ুথকে লেখাপড়া শেখাচ্ছি, স্কুলে দিচ্ছি, তারা কি তাদের জন্য রেডি কি না, তারা ওখানে কী শিখছে? জাস্ট লেখাপড়া শিখছে, না ভ্যালুজ শিখছে? কীভাবে অ্যাসেন্স অব ন্যাশনালিজম, কীভাবে দেশের জন্য কন্ট্রিবিউট করবে, কীভাবে কমিউনিটি এনভলভমেন্ট হবে? এই বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ, আর এই জিনিসগুলো করা উচিৎ। ’
তরুণদের একসেস দেওয়া প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘একসেস- যেই কিছু করতে চায় একসেস চায়। এই একসেসটা দিতে হবে। একসেসটা শুধু মুখে বললে হবে না প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দিতে হবে। সেই একসেসটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। ’
অষ্টম পঞ্চবাষির্কী পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার আগে পর্যালোচনা করে নিজেদের মতামত দিতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, আমাদের সামনে অষ্টম পঞ্চমবার্ষিকী পরিকল্পনা রয়েছে। ওয়েবে আছে। সেখানে তরুণ যারা রয়েছেন তাদের বলবো ক্রিটিসাইজ করুন, প্রস্তাব দেন, তারা সাহসী প্রস্তাব দেন। আমরা আমাদের পরিকল্পনায় আপনাদের মতামতও অন্তর্ভুক্ত করব। ’
আগামীর জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে তরুণদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন বিশ্ব দেখা যাচ্ছে। আমাদের তরুণদের অবশ্যই প্রস্তুতি নিতে হবে। ’
তরুণদের অপ্রতিরোধ্য উদ্যোম ও শক্তির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘ইতালিতে হ্যানিবল নামে একজন সেনাপতি ছিলেন। আল্পস পর্বতমালা পার হতে গিয়েছিলেন। সেখানে বলা হয়েছিল কোনো রাস্তা নাই। তখন তিনি তার সহযোগীদের বলেছিলেন আইদার ফাইন্ড ওয়ান, ওর মেইক ওয়ান। আমাদের তাই করতে হবে। আমাদের সামনে আল্পস আছে, উই উলফ ফাইন্ড ওয়ান ওর মেইক ওয়ান। ’
শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইয়ংবাংলার আহ্বায়ক নাহিম রাজ্জাক। গত তিন দিনে এই সিরিজ লেটস টকের মাধ্যমে ইয়াং বাংলা আনুমানিক ১০ লাখ তরুণদের সঙ্গে কানেক্ট হতে পেরেছে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নবনীতা চৌধুরী।