ঢাকা : নায়েই রান্দা, নায়েই খাওয়া, আবার নায়েই শোয়া। এভাবেই চইলত্যাছে আমগোরে জীবন।সিরাজগঞ্জ‘ আইজ ৮ দিন ধইর‌্যা নায়ের উপর আছি।  বানের পানিতে বাড়ি-ঘর ডুইবা গেছে, আশ্রয়কেন্দ্রেও থাকার জায়গা পাই নাই, কোনঠে যামু? তাই নাও ভাড়া নিয়া এহেনেই বউ, ছওয়ালপাল নিয়া কুনমতে বাইচা আছি।’

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার নতুন মাইজবাড়ীর চরে আধো ডুবো একটি ছোট্ট ওয়াপদার বাঁধের পাশে বেঁধে রাখা নৌকার উপর থেকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কথাগুলো বললেন জ্যোতি চাকলাদার।

তিনি বলেন, চরের একমাত্র উঁচা জায়গা আছিল এই ওয়াপদা রাস্তাটা। হেডাও অর্ধেক ডুইবা গ্যাছে। যে টুক্কা রাস্তা জাইগ্যা আছে, তার উপর কিছু জিনিসপত্র আর গরু-ছাগল বাইন্ধা রাখছি। গরুগুলানকেও খাইব্যার দিব্যার পাইরত্যাছি না। সাপ-পোকার ভয়ে রাতে ঘুম ধরে না। ছোট ছোট ছাওয়ালপাল নিয়ে দিনেও ভয়ে থাহি-কখন বানি পানির মধ্যে পইর‌্যা যায়। এভাবে আর কত দিন চইলবো আল্লায় জানে।

নৌকায় আশ্রয় নেয়া নয়ন আকন্দ, হযরত আলী, কালাম আকন্দ, রুস্তুম খা, আব্দুস সালাম, বাবলু, সাঈদ, ইসমাইল ও আলমানি আকন্দসহ আরও অনেকের সঙ্গেই কথা হয়।

তারা জানান, আট-নয় দিন ধরে যমুনার পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন মাইজবাড়ী, খাসরাজবাড়ী, চর বুরুঙ্গী, উজান মেওয়াখোলা, ভাটি মেওয়াখোলা, মাইজবাড়ী, ঢেকুরিয়াসহ চরাঞ্চলের অর্ধশতাধিক গ্রাম পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। প্রথম দিকে এ অঞ্চলের বানভাসীরা নিজ ঘরে বাঁশের মাচা তৈরি করে থাকার চেষ্টা করে। ধীরে ধীরে বাঁশের মাচাও ডুবে যায়। অনেকে নৌকায় মালামাল তুলে নিয়ে কাজিপুরের পশ্চিমাংশ, ধুনট, শেরপুর, বগুড়া কিংবা সিরাজগঞ্জ শহরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।

কিন্তু হতদরিদ্র মানুষগুলোর যাবার মতো পরিস্থিতি না থাকায় একটি নৌকা ভাড়া করে তিন-চারটি পরিবার নিয়ে কোনোমতে দিনাতিপাত করছেন।

হযরত আলী জানান, প্রতিদিন ৭ থেকে ৮শ টাকার করে নৌকা ভাড়া দিতে হয়। দিনমজুর এসব পরিবারের যা কিছু সম্বল ছিল তাও ফুরিয়ে যাবার পথে। কারও দুদিন, কারও একদিনের খাবার আছে। অনেকের খাবার সংকটের কারণে অন্যের কাছে ধার করতে হচ্ছে।

এত কষ্ট স্বত্বেও এইসব অঞ্চলে এখনও সরকারি-বেসরকারি কোনো ত্রাণ পৌঁছেনি বলে জানান, নৌকায় আশ্রয় নেয়া বানভাসী মানুষেরা।

নতুন মাইজবাড়ী এলাকার সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য লতা খাতুন জানান, অন্যান্য এলাকায় ত্রাণ দিলেও এ অঞ্চলে এখনো কিছুই দেয়া হয়নি। আমরা চাহিদা দিয়েছি। আশা করছি, দু-একদিনের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা চলে আসবে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031