আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার পেলেন বাংলাদেশি কিশোর সাদাত রহমান সাইবারবুলিং বা অনলাইনে হয়রানি থেকে শিশু-কিশোরদের রক্ষায় অ্যাপ তৈরি ও এর মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার প্রচেষ্টার স্বীকৃতি স্বরূপ । সাইবার বুলিং বন্ধে সামাজিক সংগঠন গড়ে তোলার পাশাপাশি সাদাত যে অ্যাপ চালু করেছেন তার নাম ‘সাইবার টিনস’।

নেদারল্যান্ডসের হেগে শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে নড়াইলের ১৭ বছর বয়সী সাদাতের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই অনলাইনে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে সাদাতকে এই পুরস্কার দেন। খবর বিবিসি।

শিশু অধিকার নিয়ে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার ঘোষণা করে নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক কিডসরাইটস ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা। এর আগে সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থানবার্গের মতো অনেকেই এ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা এই পুরস্কারের জন্য আবেদন করতে পারেন।

কিডস রাইটসের বিশেষজ্ঞ কমিটি ৪২টি দেশের ১৪২ জন প্রতিযোগীর মধ্যে সাদাতকে এ বছরের পুরস্কারের জন্য বিজয়ী ঘোষণা করেছেন বলে সংগঠনটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে।

সাদাতকে সবার জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করেছেন নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী মালালা ইউসুফজাই।

এক ভার্চ্যুয়াল বক্তব্যে বাংলাদেশি কিশোরকে নিয়ে মালালা বলেন, সে বিশ্বজুড়ে তরুণ-তরুণীদের সাইবার বুলিং বন্ধ করতে এবং তাদের সম্প্রদায়ে সমবয়সীদের যারা মানসিক সহিংসতায় ভুগছে তাদের সহায়তা করার আহ্বান জানাচ্ছে। সাদাত একজন সত্যিকারের পরিবর্তনকারী।

জানা যায়, সাদাত রহমানের তৈরি অ্যাপের নাম ‘সাইবার টিনস’। এর মাধ্যমে পরিচয় গোপন রেখে একদল স্বেচ্ছাসেবকের কাছে অনলাইনে হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ জানানো যায়। পরে ওই স্বেচ্ছাসেবকরাই প্রয়োজনবোধে পুলিশ বা সমাজকর্মীদের কাছে যান। এছাড়া কিশোর-কিশোরীদের অনলাইন নিরাপত্তার বিষয়ে শিক্ষা দেয় এই অ্যাপ।

সাইবারবুলিংয়ের শিকার হয়ে এক কিশোরীর মৃত্যুর খবর সাদাতের হৃদয়কে গভীরভাবে নাড়া দেয়। এধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে সেই উদ্দেশ্যেই ‘সাইবার টিনস’ অ্যাপ তৈরির চিন্তা মাথায় আসে তার। সাদাতের নিজ জেলা নড়াইলে ১ হাজার ৮০০ জনের বেশি কিশোর-কিশোরী বর্তমানে এই অ্যাপ ব্যবহার করছে।

অ্যাপটি চালু হওয়ার পর থেকে ৩০০ জনেরও বেশি ভুক্তভোগীকে সেবা দেয়া হয়েছে এবং অভিযোগের ভিত্তিতে অন্তত আটজন নিপীড়ককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারে অর্থমূল্য হিসেবে এক লাখ ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় এক কোটি টাকা) পেয়েছেন সাদাত হোসেন। এই অর্থ সাইবারবুলিং-রোধী অ্যাপটি বাংলাদেশজুড়ে ছড়িয়ে দেয়ার কাজে খরচ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

নিজেকে সাইবারবুলিংয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত সৈন্য উল্লেখ করে এ লড়াই চালিয়ে যেতে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন সাদাত।

তিনি বলেন, “আমি একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করি। এবং আমি খুবই সাধারণ একটি ছেলে। আমি যদি সাইবার বুলিং থেকে কিশোর-কিশোরীদের রক্ষা করতে পারি তাহলে অন্যরা কেন পারবে না?”

এই অর্জনে সাদাতকে অভিনন্দন জানিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন নড়াইলের আরেক কৃতি সন্তান বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031