৪০ বছর আগে অচেতন করে পাকিস্তানে পাচার করা হয় তাকে।বাংলাদেশি শোভা। সেখানকার ডেরা ইসমাইল খান জেলায় এক বাড়িতে তার চেতনা ফেরে। সেখানে তার মতো আরো অনেককে রাখা হয়েছিল। এদেরকে বিক্রি করে দেয়ার জন্য সেখানে নেয়া হয়েছে। শোভাকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল মাত্র ১৩ হাজার রুপিতে। এই দামে তাকে কিনেছিলেন আফগানিস্তানের এক ব্যক্তি আবদুল হাবিব। শোভাকে বিয়ে করেন তিনি।

তারপর পাকিস্তানেই কেটেছে ২০ বছর। এরপর আফগানিস্তানের গজনীতে ২০ বছর কাটছে শোভার দিনকাল। কিন্তু তিনি ঢাকার দিনগুলোকে খুব মিস করেন। ফিরতে চান দেশে। দেখতে চান নিজের জন্মভূমিকে। কিন্তু তার সেই সামর্থ্য নেই। সচিত্র এ খবর দিয়েছে আফগানিস্তানের অনলাইন পাজওক। এতে বাংলাদেশি ওই নারীকে শুধু শোভা নামে অভিহিত করা হয়েছে। তার বাসস্থান ছিল রাজধানী ঢাকায়। বর্তমানে তিনি ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানের গজনীতে তার আফগান স্বামীর সঙ্গে সংসার করছেন। ঢাকায় অবস্থানকালে শোভার বিয়ে হয়েছিল। জন্ম নিয়েছিল দু’টি ছেলে। একজনের নাম জাকির হোসেন। অন্যজন মুজিবুর রহমান। শোভা বলেছেন, তার বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যে ঢাকায় স্বামী মারা যান। ফলে পারিবারিক সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তার ভাষায়, আমাকে আমার এক দেবর হুমকি দেয়। সম্পত্তির অংশীদারিত্ব থেকে বঞ্চিত রাখার কথা বলে। সে আরো জানায়, যদি সম্পত্তির অংশীদারিত্ব না ছাড়ি তাহলে তারা আমার সঙ্গে সবচেয়ে খারাপ আচরণ করবে। একদিন আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমার এক দেবর আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। এই নিয়ে যাওয়ার পথেই সে কিছু প্রয়োগ করে আমাকে অচেতন করে ফেলে। যখন আমার চেতনা ফেরে তখন নিজেকে আবিষ্কার করি পাকিস্তানের ডেরা ইসমাইল খানের একটি বাড়িতে। এরপর থেকে আর আমি আমার দেশ এবং সন্তানদের দেখা পাইনি।
তাকে যে বাড়িতে নিয়ে রাখা হয় সেখানে আরো নারী ছিলেন। শোভা বলেন, প্রতিদিন সেখান থেকে একজন বা দু’জন নারীকে বিক্রি করা হতো। একদিন আমার পালা এলো। গজনী প্রদেশের কারাবাগ জেলার একজন এলেন আমাকে কিনতে। আমাকে বিক্রি করা হলো ১৩ হাজার রুপিতে। তারপর ওই আফগান পুরুষের সঙ্গে আমি ২০ বছর কাটিয়েছি পাকিস্তানে। পরের ২০ বছর গজনীতে আছি।
শোভা জানান, আফগান এই পুরুষ তাকে বিয়ে করলেও তাদের কোনো সন্তান হয়নি। তারা সুখেই দিনযাপন করছেন। শোভার ভাষায়, আমার স্বামীর একটি দোকান আছে। তার আরো দু’জন স্ত্রী আছে। কিন্তু কারো কোনো সন্তান নেই।

এ অবস্থায় নাগরিক সমাজের চেষ্টায় তিনি তার এক ছেলে ও নাতিদের খুঁজে পেতে সক্ষম হন। শোভা বলেন, আমার ছোট ছেলে মারা গিয়েছে। তার ছেলেমেয়ে এখনো বসবাস করছে বাংলাদেশে। বড় ছেলে হোসেন থাকে সৌদি আরবে। তাদের পরিবারের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয় হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে। আমার ছেলে ও নাতিরা আমাকে দেখার জন্য পাগল হয়ে আছে। কিন্তু অর্থের অভাবে তারা আমার কাছে আসতে পারছে না। তাই তিনি সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন যেন, তাকে বাংলাদেশ সফরের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। তাহলেই তিনি তার ছেলে ও নাতিদের মুখ দেখতে পারবেন। তা না হলে তাদের সঙ্গে কখনো সাক্ষাৎ হবে না।

শোভার আফগান স্বামী আবদুল হাবিব বলেন, তিনি শোভাকে কিনেছেন পাকিস্তান থেকে। তার ভাষায়, পাকিস্তান তখন নারী কেনাবেচার বাজার। যারই অর্থ আছে, তিনিই সেই বাজার থেকে দু’জন বা তিনজন নারীকে কিনতে পারবেন। আমিও শোভাকে সেখান থেকে কিনেছি। প্রথমে সে নিকাহ করতে অস্বীকৃতি জানায়। তখন সে যাতে নিকাহতে রাজি হয় তাই আমি আরেকজন বাঙালি নারীকে নিয়ে আসি। এখন শোভা যদি বাংলাদেশে ফিরে যেতে চায়, তার নাতিদের সঙ্গে দিন কাটাতে চায়, তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। তাকে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার মতো অর্থ নেই আমার। এজন্য আমাদেরকে সাহায্য করা উচিত সরকারের।

রানা এসোসিয়েশনের প্রধান আসাদুল্লাহ মাজানখেল বলেন, শোভা তাদের এলাকায়ই বসবাস করেন। তার কথার সূত্র ধরে আমি সৌদি আরবে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করি তার ছেলে জাকির হোসেনকে খুঁজে পেতে। অবশেষে তাকে খুঁজে পাই। কিন্তু তার সেই ছেলের কাছে তাকে পাঠানোর মতো সম্পদ আমাদের নেই। এ জন্য আমরা ব্যবসায়ী এবং সমাজকল্যাণমূলক সংগঠনগুলোর কাছে সহায়তা চাই। তার ছেলে ও নাতিদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ করিয়ে দিতে চাই।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031