সরকার অনলাইনে নিবন্ধনের বাইরে আপাতত করোনার ভ্যাকসিন বিতরণের চিন্তা করছে না। করোনা ভ্যাকসিন পেতে হলে অনলাইনে নিবন্ধন করে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে যেতে হবে। সারা দেশে টিকা প্রয়োগের জন্য এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৩০০ কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের অগ্রগতি বিষয়ক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয় ও এটুআই প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণে আগ্রহীদের অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য একটি ওয়েবসাইট প্ল্যাটফরম নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

এ ছাড়া বিতরণ কাজের জন্য ভিন্ন একটি প্ল্যাটফরমের চিন্তাও করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে দেশের বাইরের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের প্রস্তাব আসে বৈঠকে। এতে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে বলে ধারণা পাওয়া যায়। ব্যয় কমাতে আইসিটি বিভাগকে দায়িত্ব দেয়ারও পরামর্শ আসে বৈঠকে। আগামী ১০ই জানুয়ারির মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনাও জমা দিতে বলা হয়েছে আইসিটি বিভাগকে।
সূত্র জানায়, ভ্যাকসিন বিতরণ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে অনলাইনে কিছু বিশেষ তথ্য প্রদান করতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের জন্য ভ্যাকসিন গ্রহীতাকে অবশ্যই তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর কিংবা জন্মসনদ নম্বর ব্যবহার করতে হবে। সকল ব্যক্তিগত তথ্য প্রদানের পর সফলভাবে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে তার মোবাইলে একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রদান করা হবে। ওই নম্বর নিয়ে ভ্যাকসিন গ্রহীতাকে তার জন্য বরাদ্দকৃত কেন্দ্রে যেতে হবে। সেখানে ভেরিফিকেশনের পর ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইসিটি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ভ্যাকসিন বিতরণ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে হলে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা জন্মসনদ নম্বর বাধ্যতামূলক করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াটি জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত হলে খুব সহজেই ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের শনাক্ত করা যাবে।
এদিকে করোনার ভ্যাকসিন প্রয়োগে ৬ হাজার ৩০০টি কেন্দ্র চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এসব কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে- উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, জেলা সদর ও জেনারেল হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতাল, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, সিটি করপোরেশন হাসপাতাল, ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়, আরবান প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সরকারি ডিসপেনসারি, ১০ থেকে ২০ শয্যার সরকারি হাসপাতাল, মা ও শিশু হাসপাতাল, পুলিশ হাসপাতাল, বন্দর হাসপাতাল, সচিবালয় ক্লিনিক ও জাতীয় সংসদ স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) এবং মুখপাত্র ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, করোনার ভ্যাকসিন পেতে হলে অবশ্যই অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা কেন্দ্রে আসতে হবে। এজন্য সারা দেশে ৬৩০০টি কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে। যারা রেজিস্ট্রেশন করবে না তাদের বিষয়ে আপাতত বিকল্প কোনো চিন্তা নেই। প্রথম ধাপে এই পদ্ধতিতেই টিকা প্রয়োগ করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি কমিটি একটি জাতীয় পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। পরিকল্পনায় বলা আছে, করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণকারীর নিবন্ধন হবে অনলাইনে। এ সময় জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদের তথ্য যাচাই করা হবে। সব ভ্যাকসিন গ্রহীতা ভ্যাকসিন নেয়ার সময় সমান সুযোগ পাবে। বৃদ্ধ এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভ্যাকসিন নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা না হয় এমন কথা মাথায় রেখে ভ্যাকসিন বিতরণ কেন্দ্র স্থাপনের কথা ভাবা হয়েছে। তবে অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের বাইরে টিকা বিতরণের বিষয়ে পরিকল্পনায় কিছু বলা নেই।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031