বিজ্ঞানীরা তাৎক্ষণিকভাবে গবেষণা শুরু করেছেন বৃটেনে শিশুদের মধ্যে নতুন রূপের (নিউ ভ্যারিয়েন্ট) করোনাভাইরাসের প্রভাব নিয়ে । তারা শিশুদের মধ্যে আরও সহজে ছড়িয়ে পড়ার ইঙ্গিতগুলো তদন্ত করছেন। প্রমাণিত হলে এটি সংক্রমণ বৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য কারণ হতে পারে বলে তারা আশংকা করছেন।
ধারণাটি সরকারের নতুন এবং উদীয়মান শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস হুমকির পরামর্শদাতা ‘নিউ এন্ড ইমার্জিং রেসপাইরেটরি ভাইরাস থ্রেট এডভাইজারি গ্রুপ- NERVTAG‘ এর সদস্যদের থেকে এসেছে। NERVTAG হলো হেলথ অ্যান্ড সোসিয়াল কেয়ার (ডিএইচএসসি) অধিদফতরের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি, যারা চিফ মেডিকেল অফিসার (সিএমও) এবং মন্ত্রী, ডিএইচএসসি এবং অন্যান্য সরকারী বিভাগের মাধ্যমে পরামর্শ দেন। তারা বৈজ্ঞানিক ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং প্রশমন বিষয়ক পরামর্শ সরবরাহ করে থাকেন।
বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন নতুন রূপের করোনাভাইরাস সংক্রমণের বাড়তি ঝুঁকি এড়াতে কঠোর বিধিনিষেধ টিয়ার-৪ ঘোষণা দিয়েছেন। মহামারি মোকাবেলায় লন্ডন এবং সাউথ ইস্ট ইংল্যান্ডে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এসব এলাকায় বাইরে থেকে প্রবেশ না করার আহ্বান জানিয়েছেন বরিস জনসন।
এতে বৃটেন জুড়ে ১৭ মিলিয়ন মানুষের ক্রিসমাস বাতিল হয়েছে। নতুন ভাইরাসের খবরে ইউরোপ জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন দেশ বৃটেনের সাথে তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। এর মাঝেও প্রধানমন্ত্রী গতকাল বলেছেন, আমরা যদি সম্ভব হয় তবে জানুয়ারিতে স্কুল খুলতে চাই। নতুন রূপের ভাইরাস শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি বলে কোনও মতামত পাইনি।
অভিজ্ঞ মহলের মতে, প্রায় সর্বজনীনভাবে ভাইরাসটি শিশুদের জন্য কম ক্ষতিকর। তবে নতুন রূপের ভাইরাস কতটা ক্ষতিকর তা জানতে হবে। কারণ শিশুদের স্কুল সমূহ ব্যাপকভাবে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। করোনাভাইরাসের প্রথম ধাপে বড়দের তুলনায় শিশুদের সংক্রমিত করা কঠিন বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা ধারণা দিয়েছিলেন। তাদের একটি ব্যাখ্যা ছিল, ছোটদের প্রবেশদ্বার কম (এসিই ২ রিসেপ্টর)। ভাইরাসটি বড়দের দেহের কোষগুলিতে আলোর গতিতে সহজেই প্রবেশ করতে পারে।
নার্ভ্যাগ (NERVTAG) এবং ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের প্রফেসর ওয়েন্ডি বার্কলে বলেছেন, ভাইরাসের রূপান্তর এটা ছড়িয়ে পড়ার পথকে আরও সহজ করে তোলে। ফলে শিশুদের মাধ্যমে হয়ত বড়দের মাঝে ব্যাপক হারে সংক্রমিত হতে পারে। প্রফেসর বার্কলে আরো বলেছেন, শিশুরা এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে সমানভাবে সংবেদনশীল এবং তাদের মাধ্যমে আরও শিশুদের সংক্রমিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। করোনার নতুন রূপটি বোঝার কাজটি বজ্র গতিতে চলছে, অবশ্য এখনও অনেকটা অনিশ্চয়তা রয়েছে। এখন মনে করা হচ্ছে যে, নতুন রূপটি ভাইরাসের অন্যান্য রূপের চেয়ে ৫০% থেকে ৭০% দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
নার্ভ্যাগ এর সাথে সংশ্লিষ্ট এমআরসি সেন্টার ফর গ্লোবাল ইনফেকটিজ ডিজিজ অ্যানালাইসিসের অধ্যাপক নীল ফার্গুসন কীভাবে এবং কোথায় এটি ছড়িয়ে পড়ছে তার প্রাথমিক বিশ্লেষণে শিশুদের সংক্রামিত হওয়ার প্রবণতা বেশি রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি অবশ্য জোর দিয়ে বলেছেন, এই লিঙ্কটি নিয়ে তদন্ত চলছে এবং এখনও প্রমাণিত হয়নি।
ইতিপুর্বে প্রকাশিত রিপোর্টে করোনাভাইরাসে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা তুলনামূলক কম বলে জানা গিয়েছিল। তখন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন-ইউসিএল এবং লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন শিশুদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা এবং তাদের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া নিয়ে পরিচালিত গবেষণা থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনে এমনটি আশা করা গিয়েছিল।
গবেষণায় বলা হয়েছিল, কোন রোগীর সংস্পর্শ থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির তুলনায় শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৫৬% কম। অবশ্য শিশুরা কতটা সহজেই করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে সে বিষয়ে তেমন কোন পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তখন করোনাভাইরাস সংক্রমণের ৩১টি ক্লাস্টারের ওপর চালানো এক গবেষণায় দেখানো হয় যে, মাত্র তিনটি ক্লাস্টারে সংক্রমণ শিশুদের থেকে হয়েছে। অর্থাৎ শিশুদের থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর হার তখন কম দেখানো হয়েছে।
