মানুষ ঘরে ঘরে করোনা উপসর্গ নিয়ে ভুগছে । জ্বর, সর্দি-কাশি, গলা ব্যথায় ভুগলেও অনেকে করোনার পরীক্ষা করাচ্ছেন না। যারা করাচ্ছেন তাদের করোনা শনাক্ত হলেও হাসপাতালে যাচ্ছেন কম। মানা হচ্ছে না আইসোলেশনের নিয়ম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব কারণে দেশে করোনার কতো রোগী রয়েছে তার প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি হিসাবে দৈনিক যে তথ্য দেয়া হয় তার চেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা বিষয়ক তথ্যেও বেশ গরমিল দেখা যাচ্ছে। তাদের তথ্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে হাসপাতালের সাধারণ ও আইসিইউ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা এবং খালি শয্যার যে তথ্য দেয়া হচ্ছে সেগুলোর চেয়ে বাস্তবে আরো বেশি রোগী ভর্তি। তবে করোনা রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে করোনা হাসপাতালের নানা অব্যবস্থাপনার কারণে তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে ইচ্ছুক না। কারণ অতীতে করোনা আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের অভিজ্ঞতা সুখকর না। ভর্তি জটিলতা থেকে শুরু করে চিকিৎসক, নার্সদের অসৌজন্যমূলক আচরণ, বিভিন্ন পর্যায়ের স্টাফদের অসহযোগিতাই এর একমাত্র কারণ বলে জানিয়েছেন পূর্বের চিকিৎসা নেয়া রোগীরা। এজন্য আক্রান্ত রোগীরা বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। শুধু চিকিৎসা নয়, করোনা টেস্ট নিয়ে ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে অনেকের উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা পর্যন্ত করাচ্ছেন না। উপসর্গ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করে সুস্থ হচ্ছেন। আর আক্রান্ত হয়ে যাদের অবস্থা একেবারে গুরুতর হচ্ছে তারাই মূলত হাসপাতালে যাচ্ছেন। এসব রোগীর অনেকেই আইসিইউ সাপোর্ট পাবার জন্য হাসপাতালে যাচ্ছেন। বিশেষ করে যাদের শ্বাসকষ্ট বা কিডনি, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা রোগীদের অবস্থা জটিল না হলে হাসপাতালে আসতে নিরুৎসায়িত করা হচ্ছে। অবস্থা গুরুতর হলে তবেই রোগীদের হাসপাতালে আসার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
এদিকে ঢাকার বাইরে করোনা রোগীদের চিকিৎসা ও পরীক্ষার ব্যবস্থা ভালো না হওয়াতে অনেকেই করোনা উপসর্গ নিয়ে স্বাভাবিক চলাফেরা করছেন। তারা করোনা পরীক্ষা তো করাচ্ছেন না উল্টো উপসর্গ নিয়ে ঘুরেফিরে অন্যদের সংক্রমিত করছেন। যারা পরীক্ষা করে পজেটিভ রেজাল্ট পাচ্ছেন তারাও চিকিৎসার জন্য কোনো হাসপাতালে যাচ্ছেন না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকাল পর্যন্ত এক হিসাবে দেখা গেছে, সরকারি কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের ১৬৯টি সাধারণ শয্যায় মাত্র ৪৫ জন রোগী ভর্তি আছেন। হাসপাতালটিতে ১২৪টি শয্যাই খালি আছে। এই হাসপাতালের ১৬টি আইসিইউ শয্যার সবক’টিতে রোগী ভর্তি।  কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ২৭৫টি শয্যায় রোগী ভর্তি আছে ২২৫ জন। শয্যা খালি ৫০টির মতো। কিছুদিন আগেও এই হাসপাতালের নির্ধারিত শয্যার চেয়ে বেশি রোগীর চাপ ছিল। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের ৬০টি শয্যার ৪০টিতে রোগী ভর্তি। এই হাসপাতালে ২০টি শয্যা খালি।  আর ১৬টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ৬টি শয্যা খালি আছে। সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের ৯০টি শয্যায় ২৮ জন রোগী ভর্তি। ৬২টি শয্যা খালি পড়ে আছে। এ ছাড়া ৬টি আইসিইউ শয্যার ২টি খালি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮৮৩টি শয্যায় ৫৯৫ জন রোগী ভর্তি। শয্যা খালি আছে ২৮৮টি। এই হাসপাতালের ২৪টি আইসিইউ শয্যার ১৯টিতে রোগী ভর্তি। খালি আছে ৫টি শয্যা। মুগদা জেনারেল হাসপাতালের ৩১০টি শয্যায় রোগী ভর্তি ১১৩ জন। খালি শয্যার সংখ্যা ১৯৭টি। আর ১০টি আইসিইউ’র সবক’টিতে রোগী ভর্তি। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০০টি শয্যায় ৯২ জন রোগী ভর্তি। মাত্র ৮টি শয্যা খালি আছে হাসপাতালে। তবে করোনা রোগীদের জন্য এই হাসপাতালটিতে কোনো আইসিইউ ব্যবস্থা নাই। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের ২৫০টি শয্যায় ১১৪ জন রোগী ভর্তি আছে। ১৩৬টি শয্যা খালি। আর ১৫টি আইসিইউ শয্যার সবক’টিতেই রোগী। সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের  ১০টি শয্যার দু’টিতে রোগী ভর্তি। খালি আছে ৮টি শয্যা। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৪টি শয্যায় ১৪৫ জন রোগী ভর্তি আছে। খালি আছে ৮৯টি শয্যা। এ ছাড়া ১৬টি আইসিইউ শয্যার সবক’টিতে রোগী ভর্তি আছে।
বেসরকারি আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০০টি শয্যার ৪১টিতে রোগী ভর্তি আছে। শয্যা খালি আছে ১৫৯টি। ১০টি আইসিইউ শয্যার ৫টিতে রোগী ভর্তি। আসগর আলী হাসপাতালের ১৬৮টি শয্যায় ৩২ জন রোগী ভর্তি। শয্যা খালি আছে ১৩৬টি। ৩২টি আইসিইউ শয্যার ২৭টিতে রোগী ভর্তি। স্কয়ার হাসপাতালের ৭৪টি শয্যার ৩৭টিতে রোগী ভর্তি। শয্যা খালি ৩৭টি শয্যা খালি আছে। ২৫টি আইসিইউ শয্যার ১৪টি রোগী। ইবনে সিনা হাসপাতালেল ৩৬টি শয্যার ৩০টিতে রোগী ভর্তি। ৬টি আইসিইউ শয্যার ৫টিতে রোগী। ইউনাইটেড হাসপাতালেল ৬৫টি শয্যার ২৭টিতে রোগী। খালি আছে ৩৮টি শয্যা। ২২টি আইসিইউ শয্যার ৯টিতে রোগী ভর্তি। খালি আছে ১৩টি শয্যা। এভারকেয়ার হাসপাতালের ২৮টি শয্যার ২৪টিতে ভর্তি আছে রোগী। আর ২০টি আইসিইউ শয্যার ১৮টিতে। ইম্পালস হাসপাতালের ২৫০টি শয্যায় মাত্র ৩১ জন রোগী ভর্তি আছেন। আর শয্যা খালি ২১৯টি। ২৫টি আইসিইউ শয্যার ৯ টিতে রোগী ভর্তি থাকলেও খালি পড়ে আছে ১৬টি শয্যা। এ এম জেড হাসপাতালের ৫২টি শয্যায় ৩০ জন রোগী ভর্তি।  আর ২১টি আইসিইউ শয্যার ১১টিতে রোগী। বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের ৩০টি সাধারণ শয্যা ও ১২টি আইসিইউ শয্যার সবক’টিই রোগীতে পূর্ণ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) ও মুখপাত্র ডা. হাবিবুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, সংক্রমণ আগের চেয়ে অনেকটা কমতে শুরু করেছে। যখন সংক্রমণ বেড়েছিল তখন ১৫ শতাংশে উঠেছিল। তবে এখন সেটা কমে আট থেকে নয় শতাংশে নেমে এসেছে। এ ছাড়া রোগীদের অবস্থা যতক্ষণ পর্যন্ত গুরুতর না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তারা হাসপাতালে যায় না। বয়স যাদের ষাটোর্ধ্ব এবং করোনা ছাড়া অন্যান্য জটিল রোগ যাদের আছে তারাই কেবল হাসপাতালে যাচ্ছে। আর অন্যান্য করোনাকে সাধারণ জ্বর কাশির মতোই ভাবছে। তাই তারা বাড়িতেই থাকছে। তারা মনে করছে ১৪ দিন হাসপাতালে গিয়ে থাকার চেয়ে বাড়িতে থাকলে সুস্থ হয়ে যাবে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031