বিশ্ববাসীর বৃটেনে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি নিয়ে উদ্বেগের শেষ নেই। উদ্বেগের জেরে বৃটেনের
সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিচ্ছে ইউরোপসহ বিশ্বের নানা প্রান্তের দেশগুলো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন এই ধরনটিতে পূর্বের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রমিত হয়। এই নতুন ধরন নিয়ে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা। প্রতিবেদনে ভাইরাসের নতুন ধরন সম্পর্কে ৬টি বড় কৌতূহলের জবাব দেয়া হয়েছে।

১. উদ্বেগের কারণ আছে কি?
অধিকাংশ বিজ্ঞানী এর জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন। কারণ এরই মধ্যে বৃটেনের দক্ষিণ ইংল্যান্ড ও এর পার্শ্ববর্তী কেন্ট শহরে নতুন করোনাতে আক্রান্ত ও হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে এ ভাইরাসের নতুন ধরনটি শনাক্ত হয়।

এরপর ৯ই ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে করোনা আক্রান্ত লোকজনদের মধ্যে ৬২ শতাংশই নতুন এ ধরনটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। অথচ মাত্র ৩ সপ্তাহ আগে এই হার ছিল ২৮ শতাংশ। এ নিয়ে লন্ডন ইমপেরিয়াল কলেজের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ পিটার ওপেনশো জানান, বিষয়টিকে এখনই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। আর একে মারাত্মক উদ্বেগের কারণ বলে জানিয়েছেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন পরিদর্শক শন ফিটজগারেল্ড।

২. উদ্বেগের আসল কারণ কি?
উদ্বেগের আসল কারণ হচ্ছে, করোনাভাইরাসের নতুন এ ধরনটি খুব দ্রুত এক দেহ থেকে অন্য দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন, শনাক্ত হওয়ার পর এটি অন্তত ২৩ বার নিজের রূপ পরিবর্তন করেছে। বৃটেনে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে তাদের মহামারি মোকাবিলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। পাশাপাশি এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে বৈশ্বিক পরিসরেও। সুতরাং মারাত্মক ছোঁয়াচে, দ্রুত রূপ পরিবর্তন এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার ভয় থেকেই এটি বৈশ্বিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৩. নতুন ধরনের বিরুদ্ধে কি ভ্যাকসিন কার্যকর?
নতুন ধরনের করোনার বিরুদ্ধে ফাইজার ও বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন কার্যকর বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।  তারা বলছেন, যে ধরনের ভ্যাকসিন বাজারে আসছে তাতেই এই ধরনটি মোকাবিলায় যথেষ্ট রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মায় মানব শরীরে। বৃটিশ লিসেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ক্লিনিক্যাল ভাইরোলজিস্ট জুলিয়ান টাং জানান, নতুন এ ধরনটিতে আমরা প্রোটিনের এমন কোনো পরিবর্তন পাইনি যা বিদ্যমান ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা হ্রাস করতে পারে।  সুতরাং বর্তমানে দেশটিতে যে ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে সেটি নতুন এ ধরন মোকাবিলায় কার্যকর হবে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে।

৪. পরীক্ষাকে ফাঁকি দিতে পারে?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কতিপয় ক্ষেত্রে নতুন এ ধরনটি পরীক্ষাকে ব্যাহত করতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে ফলস রিপোর্ট বা মিথ্যা ফলাফল বলা হয়ে থাকে। বৃটেনের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষার ক্ষেত্রে তারা ফলাফলের রকমফের লক্ষ্য করেছেন। এটি প্রোটিনের পরিবর্তন ও মিউটেশনের জন্য হয়ে থাকে।

৫. উল্লেখযোগ্য আর কোনো ধরন আছে?
সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, ডেনমার্ক ও অন্য দেশগুলোতেও করোনার নতুন নতুন ধরনের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে এখনো পর্যন্ত এর কোনো ধরনেই প্রাণঘাতী বা ভ্যাকসিন এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়নি।

৬. এর উৎপত্তি কি বৃটেনেই?
বিজ্ঞানীরা জোর দিয়ে বলছেন, করোনার নতুন এ ধরনের উৎপত্তি বৃটেনেই। তারা আরো বলছেন, করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের উহানে হলেও শনাক্ত হওয়া নতুন ধরনটি বৃটেনেই মিউটেশনের মাধ্যমে নতুন রূপে সংক্রমিত হচ্ছে। বিশ্বের অন্য কোথাও এখনো এর উচ্চ সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031