পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন (টিকা) যথাসময়ে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন। সোমবার বিকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যকার শীর্ষ বৈঠকের সিদ্ধান্ত এটি। টিকা নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে তার প্রেক্ষিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকাকে আশ্বস্ত করে বলেছে, ‘ইটস এ হাইয়েস্ট লেভেল কমিটমেন্ট, সো ইট উইল বি ইমপ্লিমেন্টেড’। কবে নাগাদ টিকা আসতে পারে- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী যেমনটা বলেছেন, আমরাও তা-ই বলছি, এটি চলতি মাসের শেষে আসবে। এতে কোন ব্যত্যয় ঘটবে না। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে গত ৫ই নভেম্বর প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে বেক্সিমকো ফার্মা। বেসরকারী পর্যায়ে চুক্তিটি হলেও এতে উভয় সরকারের সম্পৃক্ততা রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে বাংলাদেশে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাঠানোর কথা সিরাম ইনস্টিটিউটের।
উল্লেখ্য, সিরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আদর পূনাওয়ালার বরাত দিয়ে রোববার রাতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর আসে রপ্তানি শুরুর আগে আগামী দুই মাস তারা ভারতের স্থানীয় চাহিদা পূরণ করতেই জোর দেবে। ওই খবরে বাংলাদেশে ভারতীয় টিকা পাপ্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং উদ্বেগ তৈরি হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পূনাওয়ালার সেই বক্তব্যকে ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তর ‘প্রিমেচিউর কমেন্ট’ হিসাবে আখ্যা দিয়েছে। এ নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনার দাবি করে মন্ত্রী বলেন, দিল্লির দাবি পূনাওয়ালার বক্তব্য একান্তই তার ব্যক্তিগত। এটি ভারত সরকারের বক্তব্য নয়। দিল্লির ভাষ্য হচ্ছেÑ সর্বোচ্চ পর্যায়ের যে অঙ্গীকার রয়েছে তা বাস্তবায়ন অর্থাৎবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমতি সাপেক্ষে যখনই ভারতে টিকার প্রয়োগ হবে সঙ্গে সঙ্গে এটি বাংলাদেশও পাবে। মন্ত্রী জোর দিয়ে বারবার বলেন, টিকা নিয়ে দুচিন্তা অমূলক। বাংলাদেশ মাস্ট নট বি কনসার্নড। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে মন্ত্রী বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমরা আপডেট পেয়েছি। তারা আমাদের জানিয়েছে, আমাদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় যে চুক্তি হয়েছে সেটি পালন করা হবে। ওরা বলেছে ভ্যাকসিনের বিষয়ে অন্য ব্যান (নিষেধাজ্ঞা) থাকতে পারে। কিন্তু যেহেতু একদম উচ্চ পর্যায়, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে আলাপ করে এটা হয়েছে, কাজেই বাংলাদেশ প্রথম ভ্যাকসিন পাবে। কোনও ধরনের ব্যান এখানে কার্যকর হবে না।’ চুক্তিটি দুই দেশের সরকারের মধ্যে হয়েছিল কি-না? এমন প্রশ্নও আসে। জবাবে বলেন, এটি আমার জানা নেই। মন্ত্রী বারবার বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। দিল্লি বলেছে বাংলাদেশের এটি নিয়ে একদম উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। ভারতীয় ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরির কারণে অন্য কোনও জায়গা থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের পরিকল্পনা সরকারের আছে কি-না? জানতে চাইলে মন্ত্রী অবশ্য বলেন, আমরা বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখছি। এর আগে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশনার জানিয়েছিলেন, ভারত নতুন যে ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছে সেটি এখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পায়নি। এ বিষয়ে মন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, দিল্লি জানিয়েছেন তারা ভ্যাকসিনটি জরুরি ভিত্তিতে ভারতের কিছু নাগরিকের ওপর প্রয়োগ করছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ-ও বলেছে, বাংলাদেশে জন্য ভ্যাকসিন পাঠাতে রেগুলেটরি অনুমোদনের বিষয়টি পেন্ডিং আছে। মন্ত্রী বলেন, এ ক্ষেত্রেও আমাদের হাতে এখনও কিছু সময় আছে।