গণতন্ত্রের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। লজ্জাজনক দিনের শেষটা হলো ঐতিহাসিক। জোসেফ আর বাইডেন জুনিয়রকে স্বীকৃতি জানালো মার্কিন কংগ্রেস। মার্কিন ইতিহাসে এটি অভিনব ঘটনা-তবুও অনেকেরই আশঙ্কা ছিল হার মানতে চাইবেন না ট্রাম্প। কিন্তু তিনি কতদূর যেতে পারেন সে ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন না কেউই। সত্যকে অস্বীকার করে গেছেন জোর গলায়। উস্কানি দিয়ে গেছেন ক্রমশ। তার চূড়ান্ত পরিণতিতেই হামলা হলো ক্যাপিটল ভবনে।
গণতন্ত্রে জনতার রায়ই শেষ কথা। কিন্তু কথিত গণতান্ত্রিক বহু নেতা তা মানতে চান না। তাদের সিলসিলায় পরাজয় বলতে কোনো শব্দ নেই। ক্ষমতাই তাদের রাজনীতির শেষ কথা। ডনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই অস্বীকৃতি জানান জনরায় মানতে। দাবি করেন, ভোটে কারচুপি হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেয় ফোর্থ স্টেট। মিডিয়া সাফ জানিয়ে দেয়, ট্রাম্পের এই দাবির কোনো ভিত্তি নেই। এমনকি আগে তার পক্ষে থাকা গণমাধ্যমও সত্যের পক্ষে অবস্থান নেয়। সব ভোট গণনা করা যাবে না-ট্রাম্প হাজির করেন এমন উদ্ভট আর্জি। নির্বাচনী কর্মকর্তারা নাকচ করেন তা। নিজ দলের বহু নেতাও অবস্থান নেন তার বিপক্ষে। আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে দেখি, প্রাদেশিক পর্যায়ের নির্বাচনী কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্টের মুখের ওপর কীভাবে না বলে দেন। সর্বোচ্চ পর্যায়ের অন্যায্য চাপকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। আদালত ঘিরে আশায় বুক বেঁধে ছিলেন ট্রাম্প। ভেবেছিলেন তার নিযুক্ত বিচারকরা তার পক্ষে থাকবেন। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। আইনি লড়াইয়েও হেরে যান তিনি। তার নিয়োগ করা অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার, যাকে তার বিশ্বস্ত লোক বলে মনে করা হতো তিনিও প্রমাণহীন অভিযোগ আমলে নেননি। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও সাড়া দেননি ট্রাম্পের আহ্বানে। ক্যাপিটল ভবনে হামলার বিরুদ্ধেও দ্ব্যর্থহীন অবস্থান নেন মার্কিন আইন প্রণেতারা। চার সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ, বিল ক্লিনটন, জিমি কার্টার ও বারাক ওবামা হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের তাগিদ দেন। এমনকি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোও ট্রাম্পের ক্ষমতার দিকে না তাকিয়ে রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রকে বেছে নেয়।
গত কিছুদিনে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যা মার্কিন গণতন্ত্রের ইতিহাসে বাজে দৃষ্টান্ত হিসেবেই থেকে যাবে। তবে গণতন্ত্রকে সবসময়ই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আর মার্কিন মুল্লুকে শেষ পর্যন্ত সে পরীক্ষায় উতরে গেছে গণতন্ত্র।
