যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজমান তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে । এর মধ্যে তাইওয়ানের কাছে ১৮০ কোটি ডলারের সামরিক অস্ত্র বিক্রি করছে যুক্তরাষ্ট্র। ফরেন মিলিটারি সেলস (এফএমএস) যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দু’সপ্তাহেরও কম সময় আগে এই অস্ত্র বিক্রি অনুমোদন দিয়েছে। বুধবার পেন্টাগনের ডিফেন্স সিকিউরিটি কো-অপারেশন এজেন্সি থেকে কংগ্রেসে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে তা সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু এই অস্ত্র বিক্রিকে কেন্দ্র করে পূর্ব এশিয়া কাঁপছে। অনলাইন ন্যাশনাল ইন্টারেস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, যেসব অস্ত্র তাইওয়ানের হাতে হস্তান্তর করছে যুক্তরাষ্ট্র তার মধ্যে রয়েছে জেনারেল এটমিক ড্রোন, ভূমিতে অবস্থানরত বোয়িংয়ের এন্টি-শিপ ক্ষেপণাস্ত্র হারপুন। এগুলো উপকূলীয় প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে ব্যবহার করা হতে পারে।

এসব অস্ত্র বিক্রি নিয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে কি রকম সম্পর্ক দাঁড়ায় তা সময়ই বলে দেবে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এ বছর তাইওয়ানের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক কি তা স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ করেছে বেইজিং। তারা তাইওয়ানকে একটি অবৈধ এবং বেরিয়ে আসা প্রদেশ হিসেবে দেখে থাকে। তাইওয়ানে ক্ষমতাসীন সরকারকে তারা স্বীকৃতি দেয় না। তাইওয়ানকে সামরিক শক্তি বাড়ানোর বিষয়ে কয়েক মাসে তেমন মুখ লাল করতে দেখা যায়নি চীনকে। তবে তারা তাইওয়ান প্রণালীতে তাদের নৌবাহিনীর উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছে। বার বার চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্স তাইওয়ানের এয়ার ডিফেন্স আইডেনটিফিকেশন জোনকে অবজ্ঞা করে ভিতরে প্রবেশ করেছে। চীনের যুদ্ধপিপাসু রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় এ নিয়ে হুমকি প্রকাশ করে সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছে। তবু চীনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে তাইপে।
কিন্তু তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি করাতে বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনা আরো প্রবল হবে। দীর্ঘ সময় ধরে ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য তাইওয়ানকে প্রতিরোধের ফার্স্টলাইন হিসেবে দেখা হয়। এর মধ্যে সেখানে চীনের সামরিক আগ্রাসন ও সম্প্রসারণকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই তারা তাইওয়ানের কাছে প্রায় ২০০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে নোটিফিকেশন দেয়ার পর কংগ্রেসে মার্কিন আইন প্রণেতাদের ৩০ দিন সময় দেয়া হয়। অস্ত্র বিক্রি নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি থাকলে এ সময়ের মধ্যে তা জানাতে পারেন। কিন্তু তাইওয়ানের  প্রতিরক্ষার জন্য কংগ্রেসের উভয় পক্ষের সমর্থন আছে। তাই এই অস্ত্র বিক্রি নিয়ে সেখানে কোনো আপত্তি উঠবে বলে মনে হয় না। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, তার দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে এবং তাইওয়ান প্রণালীতে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রির প্রতিবাদ এরই মধ্যে জানিয়েছে বেইজিং। যুক্তরাষ্ট্রের আইন, যেমন তাইওয়ান রিলেশন্স অ্যাক্ট, এটি কংগ্রেসে পাস হয়েছে ১৯৭৯ সালে। তাইওয়ানের রাজধানী তাইপের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতে হলে এই আইনটি প্রয়োজন হয় ওয়াশিংটনের জন্য। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে এফএমএস কর্মসূচির মাধ্যমে এমন ব্যবস্থায় অস্ত্র বিক্রি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে যেসব সামরিক অস্ত্র কিনছে তাইওয়ান তার মধ্যে রয়েছে ১১ টি লকহিড মার্টিন হাই মবিলিটি রকেট সিস্টেম ট্রাকভিত্তিক রকেট লঞ্চার। এর দাম ৪৩ কোটি ৬১ লাখ ডলার। এ ছাড়া আছে ১৩৫টি এজিএম-৮৪এইচ স্ট্যান্ডঅফ ল্যান্ড এটাক মিসাইল এক্সপ্যান্ডেড রেসপন্স মিসাইল। এর সঙ্গে রয়েছে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। এগুলো সরবরাহ দেবে বোয়িং কোম্পনি। এর আনুমানিক মূল্য ১০ লাখ ৮ হাজার ডলার। এগুলো আসলে রিমোট কন্ট্রোলড মিসাইল। যদি মূল টার্গেটকে ধ্বংস করা হয় তাহলে অন্য টার্গেটে এগুলো আবার ব্যবহার করা যায়। বিক্রি করা হচ্ছে ৬টি এমএস-১১০ রেসি এক্সটারনাল সেন্সর পড। এগুলো তৈরি করেছে কলিন্স এরোস্পেস। আনুমানিক মূল্য ৩৬ কোটি ৭২ লাখ ডলার।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031