ঢাকা : ভয়ংকর সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, ‘গরু কিনতে হাটে গিয়েছিলাম, সঙ্গে ছিল ভাগ্নে সালাম। তরতাজা ছেলেটা। তখনও কী জানি, বালাজানের তিন মাথার মোড়ের এই সাপ্তাহিক হাটটা সেরে আর বাড়ি ফেরা হবে না তার। আমাকেও যেতে হবে হাসপাতালে।’ ‘পায়ে অসহ্য ব্যথা, বাজারের মাঝখানে পড়ে রয়েছি। দূরে ভাগ্নেটা কাটা পাঁঠার মতো ছটফট করছে। তার মধ্যেই চোখে পড়ল ছেলে দুটিকে। একে অন্যের পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে গুলি চালাচ্ছে। ঠিক যেমন এত দিন সিনেমায় দেখেছি।’ এভাবেই আসামের কোকরাঝাড় বাজারে হামলার বর্ণনা দিলেন স্থানীয় এক ব্যবসায়ী।

স্থানীয় ব্যবসায়ী সোলেমান শেখের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, ‘টিভি অথবা রুপালি পর্দায় জঙ্গিহানার দৃশ্য দেখা এক কথা। বাস্তবে তার মাঝে পড়ে মনে হচ্ছিল, এমন অভিজ্ঞতা যেন আর কারও কখনও না হয়।’

তিনি জানালেন, ‘দুপুরে হাট তখন জমে উঠেছে। আমরা দুজনে কথা বলতে বলতে গরুর হাটের দিকে এগোচ্ছিলাম। হঠাৎ ভয়ঙ্কর শব্দে পায়ের তলার মাটি কেঁপে উঠল। কানে তালা লেগে যাওয়ার জোগাড়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শুরু হয়ে গেল হুড়োহুড়ি, প্রাণভয়ে ছুটতে শুরু করল সবাই। আমিও হেঁচকা টানে ভাগ্নেকে নিয়ে ছুটতে শুরু করলাম।’

সেনার পোশাকর পরা কয়েকটা ছেলে তার মধ্যে বড় বড় বন্দুক নিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করেছে। চোখের সামনেই লুটিয়ে পড়ল কয়েক জন। ছিটকে পড়ে গেলাম। ভাগ্নেটাও কিছু দূরে গিয়ে পড়েছে। প্রচণ্ড ছটফট করছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে ওর শরীর। ওর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলাম এক বার। কিন্তু পায়ের ব্যথায় তখন চোখে অন্ধকার দেখছি। এর মধ্যেই চোখে পড়ল ছেলে দুটোকে। পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে গুলি চালাচ্ছে তারা এবং চালাতে চালাতে গোল হয়ে অর্ধেকটা ঘুরে গেল। এর মধ্যেই দেখলাম আর এক জনকে। বোমা থেকে কিছু একটা খুলে ছুড়ে দিল হাটের মাঝে। তার পরেই জোর বিস্ফোরণ। আর গুলির যেন বিরাম নেই। এক নাগাড়ে গুলি চলছে তো চলছেই। ভাগ্নেটার জন্য কিছু করা দরকার। কিন্তু উঠে ওর কাছে যাব কী করে! এমন সময় কারা যেন আমাদের দুজনকে টেনে নিয়ে গেল দোকানের আড়ালে। তখনও গুলি চলছে। আরও কত ক্ষণ চলবে কে জানে! এ কথা ভাবতে ভাবতেই মনে হল উল্টো দিক থেকেও গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। তা হলে কি পুলিশ আর সেনাবাহিনী এসে গিয়েছে!

আধ ঘণ্টা পরে গুলির আওয়াজ থেমে গেল। তত ক্ষণে ভাগ্নেটা নেতিয়ে পড়েছে। হই হই করে লোকজন সালামকে গাড়িতে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেল। কিছু ক্ষণ পরে আমাকেও নিয়ে গেল কোকরাঝাড় হাসপাতালে। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে বললেন, গুলি পা ছুঁয়ে চলে গিয়েছে। তবে বড় বিপদের আর আশঙ্কা নেই। কিন্তু সালাম তো চলে গেল। এখনও চোখ বন্ধ করলে দেখতে পাচ্ছি, রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে ও কাঁপছে। চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে বারবার।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031