গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে প্রথম করোনার ভ্যাকসিন নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন । গতকাল রাজধানীর ধানমণ্ডির গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ‘ক?রোনা টিকার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক আ?লোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ভ্যাকসিন বিষয়ে জনগণের আস্থা ফেরাতে আমি প্রস্তাব করছি, এই ভ্যাকসিন প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে নেবেন। তাহলে জনগণের আস্থা বাড়বে। উনি যেহেতু আমাদের নেত্রী, তাই ওনাকে দিয়েই আমাদের ভ্যাকসিনের যাত্রা শুরু হোক। দেশের মানুষকে জাতীয় পরিচয়পত্র ধরে করোনা ভ্যাকসিন দেয়ার আহ্বান জানিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর বড় অংশ দরিদ্র। তারা অনলাইন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত না। ফলে ভ্যাকসিনের জন্য অ্যাপসে নিবন্ধন করা তাদের জন্য কঠিন হবে।

অ্যাপস পূরণের জন্য আরেকটি দালাল পক্ষ তৈরি হবে। বিড়ম্বনা দূর করতে জাতীয় পরিচয়পত্র ধরে ভ্যাকসিন দিলে কাজ অনেক সহজ হবে। এছাড়া ভোটার তালিকা অনুযায়ী ডা. জাফরুল্লাহর নাম আসলে তিনি সবার আগে টিকা নেবেন বলেও জানান।

এ সময় অর্থমন্ত্রীর ভ্যাকসিন গ্রহণ প্রসঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমাদের অর্থমন্ত্রী প্রথম ভ্যাকসিন নিতে চেয়েছেন। তার প্রথমে ভ্যাকসিন নেয়ার প্রয়োজন নেই। তার থেকে প্রথমে তাকে অন্য একটা কাজ করে দিতে হবে। উনি বলেছেন, ৪৩ বিলিয়ন ডলার আমাদের বর্তমানে উদ্বৃত্ত রয়েছে। বিলিয়ন ডলার থেকে মাত্র আধা বিলিয়ন ডলার গবেষণা এবং ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য বরাদ্দ করে দেন। উনি এটা করলে আমরা নিজেরাই উৎপাদন করে সকলেই করোনার ভ্যাকসিন নিতে পারবো এবং পাশাপাশি অন্য দেশকেও সহযোগিতা করতে পারবো।

তিনি আরো বলেন, কথা ছিল ভারত যে দামে ভ্যাকসিন পাবে আমরাও সেই দামে পাবো। কিন্তু আমরা সেই দামে পাচ্ছি না। ১২শ’ কোটি টাকা বিনা টেন্ডারে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়া তো দুই কোটি টাকার মামলা থেকে রেহাই পাননি। সুতরাং আপনারাও যে ভবিষ্যতে ঝামেলায় পড়বেন না, সেই নিশ্চয়তা নেই। তাই আমি সাবধান করে দিচ্ছি এটি একটি অন্যায় এবং ভুল কাজ। সরকারের এ কাজ করা উচিত হয়নি।

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে আবেগে তাড়িত না হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি ও বিশিষ্ট ভাই?রোল?জিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ইমোশনাল হয়ে কোনো কাজ হয় না। ইমোশনাল হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। সরকার কী করছে? সরকার চেষ্টা করছে। আমরা যদি ভাবি সরকার চুরি করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে এটা ঠিক না।

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ডা. নজরুল বলেন, এখন যে ভ্যাকসিন জনগণকে দেয়া হচ্ছে সেগুলোকে বলা হয় ‘ফার্স্ট জেনারেশন’ ভ্যাকসিন। বৈজ্ঞানিকদের ভাষায় একে ভ্যাকসিনের ফোর্থ ট্রায়ালও বলা হয়। হাজার হাজার মানুষকে এই ভ্যাকসিন দেয়ার পর আবার বিশ্লেষণ করা হবে। তারপর সেকেন্ড জেনারেশন ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হবে। ফার্স্ট জেনারেশন ভ্যাকসিন আগে বড় আকারে ব্যবহার করা হতো না জানিয়ে তিনি বলেন, আগে হয়নি, কারণ সময় ছিল। এখন যেহেতু সময় নেই, তাড়াতাড়ি আমাদেরকে নিতে হবে। এজন্যই ফার্স্ট জেনারেশন ভ্যাকসিনই আমরা নিচ্ছি, সারা পৃথিবীর লোকই নিচ্ছে। এতে করে অনেক প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে, ইন্ডিয়াতে এতো লোক দিতে রাজি না। এই যে নরওয়েতে ২৩ জন বুড়ো লোক মারা গেছে। এমনটা হলো ফাইজারের ভ্যাকসিনে। তাহলে তো সাংঘাতিক ব্যাপার। আবার ইউকেতে বুড়ো মানুষদের দেয়া হয়েছে, একজনও মরেনি। তাহলে এসব নিয়ে অ্যানালাইসিস করতে হবে। ভয় পাওয়ার সঙ্গে ভ্যাকসিন না নেয়ার সম্পর্ক যে একেবারেই ক্ষীণ, সে কথা তুলে ধরে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, অনেক অন্ধকার রাতে কেউ নেই, তখন তো একটু ভয় লাগবে। কিচ্ছু কিন্তু নেই, তারপরও ভয় লাগে। ভয় পাওয়ার সঙ্গে ভ্যাকসিন না নেয়া হচ্ছে সাইকোলজিক্যাল ব্যাপার। আমরা মনোযোগী হবো বায়োলজিক্যাল ব্যাপারে, ফিজিক্যাল ব্যাপারে। সত্যিকারই আমাদের ক্ষতি হয় কি না সেটা দেখবো। ইপিআইয়ের যেসব ভ্যাকসিন সেগুলোর বয়স ১০ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত উল্লেখ করে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, যে কারণে সেগুলো সেরা। আর আমাদের এই যে করোনা ভ্যাকসিন সেগুলো কেবল যাত্রা হল, এক বছরও হয়নি। অনেক কিছু আমাদেরকে কনসিডার করতে হবে। ইমোশনাল হয়ে কোনো কাজ হয় না। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বাংলাদেশে ছয় ধরনের করোনাভাইরাস শনাক্তের দাবি করা হয়েছে, এসব ভাইরাসে নতুন আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনগুলো কাজ করবে কি না সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল অধ্যাপক নজরুলের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, এই ভ্যাকসিন কাজ করবে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে, সেখানে দেখা গেছে ভ্যাকসিনে মানুষের শরীরে নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি হিসেবে কাজ করবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জার্মানির কিউর-ভ্যাক নামে একটা ভ্যাকসিন কোম্পানি আছে, তারা করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে এখনো বাজারে আসেনি। তারা বলছে, করোনাভাইরাসে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ছয় মাস থাকবে। আর ফাইজার বলছে, এক বছর কার্যকারিতা থাকবে। এটা এখনো সঠিকভাবে বলা হয়নি। যদি পাঁচ মাসও কার্যকারিতা থাকে, আর এই সময়ের মধ্যে যদি সবাই ভ্যাকসিন নিতে পারি তাহলে তো আর ভাইরাস থাকবে না। আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ-এর ফার্মা?কোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সা?য়েদুর রহমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মহিবুল্লাহ খন্দকার, গণস্বাস্থ্যের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু প্রমুখ।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031