প্রথমবারের মতো যখন আমি নতুন কোনো দেশে বেড়াতে যাই তখন আমি চেষ্টা করি সেখানকার সর্বোচ্চ আদালত দেখতে। এই আদালতগুলোতে এক ধরনের ভাস্কর্য থাকে যেটি শুধুমাত্র একটি বিচারালয় নয়, একটি বার্তা দেয়ার জন্য নির্মিত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি, দিল্লির সুপ্রিম কোর্ট ভবনটির স্থাপত্যশৈলী নির্মিত হয়েছে ন্যায়বিচারের প্রতীকী অর্থে। জেরুজালেমে ইজরাইলি আইকনিক সুপ্রিম কোর্ট ভবনটি তৈরি হয়েছে সরল রেখায়, যার অর্থ হচ্ছে আইনের প্রকৃতি অপরিবর্তনীয়। একইসঙ্গে সেখানকার বক্রাকৃতির দেয়াল ও গ্লাস বিচারের মানবিকতাকে প্রতিনিধিত্ব করে। এই ভবনগুলো যেনো কথা বলতে জানে।
একইভাবে তৈরি করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট ভবন। আমার যতদূর মনে আছে, এই ভবনটি বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর সুপ্রিম কোর্ট ভবন।
আমাকে কোর্টরুমে আমার আসনে নিয়ে আসা হলো। কারণ সুপ্রিম কোর্ট ভবনের ভেতরে ছবি তোলা বা ভিডিও ধারণ করা নিষিদ্ধ। এর ফলে দেশের বেশির ভাগ মানুষই সুপ্রিম কোর্টের ভেতরের দৃশ্য কখনও দেখতে পায় না। আমি নিজেও কখনও দেখিনি। আমি চারিদিকে তাকিয়ে দেখছিলাম সুন্দর গোলাপি মার্বেল, সিলিংয়ের বৈচিত্র্যময় কারুকার্য এবং সামনে থাকা নয়টি খালি চেয়ার। আমি ভাবার চেষ্টা করছিলাম এই দেয়ালের ভেতরে বসে কত ইতিহাস রচিত হয়েছে। তবে সুপ্রিম কোর্ট গেটিসবার্গের মতো কোনো জাদুঘর নয় যেখানে কোনো ইতিহাস সংরক্ষণ করে রাখা হবে। এখানে ইতিহাস জীবন্ত থাকে। যেখানে প্রতিটি সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে একটি করে পাতা রচিত হয়।
সকাল দশটার ঠিক কিছুটা পরেই নয়জন বিচারক আদালত কক্ষে প্রবশে করে তাদের আসনে বসেন।
আদালত কক্ষে প্রবেশ করে প্রধান বিচারপতি বললেন, আজ সকালে মামলা নং ১২-১৪৪ হোলিংওয়ার্ত বনাম প্যারির বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এটি প্রপোজিশন ৮-এর বিরুদ্ধে একটি মামলা। ২০০৮ সালে পাস হওয়া একটি ব্যালট ইনিশিয়েটিভ-এর অধীনে ক্যালিফোর্নিয়ায় সমলিঙ্গের বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়। তারপর অনেকদিন কেটে গেছে। উদারতার ঘাঁটি হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়া পরিচিত ছিল। কিন্তু ২০০০ সালে এখানকার ভোটাররা একটি বিলের পক্ষে ভোট দেয়। এতে বলা হয় বিয়ে শুধুমাত্র বিপরীত লিঙ্গের দু’জন মানুষের মধ্যে বিয়ে হতে পারে। এটি পরিবর্তন করতে আমরা বছরের পর বছর ধরে রাস্তায় ব্যালট বাক্সে এবং আদালতে লড়াই করি। এমনকি আমার স্কুলে পড়ুয়া ভাতিজি মিনাও সক্রিয় হয়ে ওঠে। আমার মনে পরে আমি একদিন স্কুল থেকে মিনাকে বাড়িতে নিয়ে আসতে যাই আমাকে একজন জানায় মিনা শিক্ষার্থীদের একটি বৈঠকে রয়েছে। আমি যখন তার ক্লাসে যাই তখন আমি দেখি মিনা তার বন্ধুদেরকে নতুন আইন সম্পর্কে বলছে, এটি কোন গৌরবের বিষয় নয়, এটি একটি দুঃস্বপ্ন।
২০০৪ সালে ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে সান ফ্রান্সিসকোর মেয়র গ্যাভিন নিউসম সমলিঙ্গের বিয়ে অনুমোদন দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেন।
কমালা হ্যারিসের অটোবায়োগ্রাফি
‘দ্য ট্রুথ উই হোল্ড’ বই থেকে
