প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল নিয়ে বিরূপ মন্তব্য না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল গণভবন থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে ডিজিটালি এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই এটা নিয়ে কথা বলছেন। আমি মনে করি, খুব বেশি কথা বলা বা এটা নিয়ে বেশি তিক্ততা সৃষ্টি করা উচিত না। মনে রাখতে হবে আমাদের ছোট ছেলেমেয়েরা, তাদের জীবনটার দিকে তাকাতে হবে। তারা যেন কোনোভাবেই হতাশাগ্রস্ত না হয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমনিতেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারছে না, এটা তাদের জীবনে বিরাট এক বাধা সৃষ্টি করছে। এরপর যদি আবার ফলাফল নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা হয়, এতেও কিন্তু তাদের ওপর মানসিক চাপ পড়বে। যারা এ ধরনের কথা বলছেন, তাদের আমি বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।

মহামারির মতো বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে কেন ফলাফল ঘোষণা করা হলো- তাও ব্যাখ্যা করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, একবার ভেবেছিলাম যে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হবে, অবস্থার পরিবর্তন হলে পরে আমরা পরীক্ষাটা নিতে পারবো। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, এটা কোনোমতেই বন্ধ হচ্ছে না, এমনকি নতুনভাবে সংক্রমণ শুরু হয়েছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করবে, তাদের পড়াশোনার পথ যেন নষ্ট না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এরকম একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে এই ফলাফলটা ঘোষণা করলাম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও একই পদ্ধতিতে ফলাফল ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া আমাদের দেশের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েই এই ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। আরেকটা বিষয় হলো, আমাদের শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে একটা বছর নষ্ট হয়ে যাক, সেটা আমরা চাই না। তাদের শিক্ষা জীবনটা চলমান থাক সেটাই আমরা চাই। সেই কারণেই আমরা ফলাফলটা ঘোষণা দিলাম। আশা করি, তাদের পড়াশোনা অব্যাহত থাকবে। মহামারির মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার সুরক্ষার কথা ভাবতে হচ্ছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, কোভিড সংক্রমণে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, শিক্ষক-শিক্ষিকারা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেয়ার জন্যই ব্যবস্থাগুলো আমরা নিতে বাধ্য হয়েছি। অনেকে সেন্টিমেন্টাল হচ্ছেন, কথা বলছেন পরীক্ষা নিতে। কিন্তু এগুলো করতে গিয়ে যদি কেউ সংক্রমিত হয়, তাহলে তার দায়-দায়িত্ব কে নেবে? যারা সমালোচনা করছেন এই পদ্ধতিতে রেজাল্ট দেয়ার কারণে, তারা নেবেন দায়িত্ব? নিশ্চয়ই তারা নেবেন না। তখন তারা নতুন করে আবার সমালোচনা শুরু করবেন। এটাই আমাদের সবচেয়ে দুর্ভাগ্য যে কিছু লোক থাকেই, যা কিছু করতে যান তাতেই একটা খুঁত বের করে। ফলাফলটা কি হবে সেটা তারা চিন্তাও করেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে আমরা খুব দ্রুতই স্কুল খুলে দিতে পারবো। করোনাভাইরাস আমরা যেভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখছি, সবাই যদি আরেকটু (স্বাস্থ্যবিধি) মেনে চলেন আমরা এটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবো এবং খুব দ্রুতই আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে পারবো। আমরা আশা করছি, হয়তো আগামী মার্চ-এপ্রিল মাস পর্যন্ত আমরা দেখবো। আমাদের দেশে এই মার্চ মাসেই ব্যাপকভাবে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। তবে আমরা ফেব্রুয়ারি মাসটা নজরে রাখবো, যদি অবস্থা ভালো থাকে পরবর্তীতে আমরা সীমিত আকারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেবো, আমাদের ছেলেমেয়েরা যাতে স্কুলে যেতে পারে সে ব্যবস্থা আমরা নেবো, এ ধরনের চিন্তাভাবনা আমাদের আছে। আমরা যত দ্রুত পারি এ ব্যবস্থাটা নেবো।
করোনাভাইরাসের টিকা যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও দেয়া হয় সেই নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এরই মধ্যে নির্দেশ দিয়েছি- আমাদের যারা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন, তাদের এই ভ্যাকসিনটা যাতে দ্রুত দেয়া হয়। তাছাড়া এটা সবচেয়ে বেশি দরকার, সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলা, করোনা মোকাবিলায় যা যা ব্যবস্থা আছে গ্রহণ করা। সেই সঙ্গে ভ্যাকসিন তো সবাই পেয়েই যাবেন, তার জন্য সবার মানসিকভাবে তৈরি থাকা।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031