পুলিশ কুর্মিটোলা হাসপাতালের ইন্টার্নি চিকিৎসক ডা. সিরাজুম মনিরা সোমার হত্যার ঘটনায় তার সহপাঠী ডা. আজাদকে ঘিরে তদন্ত করছে । তদন্ত সূত্রের বরাতে জানা গেছে, সোমা এমবিবিএস পড়তে যান চীনে। চীনে একটি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস পড়তে গিয়ে ডা. এসএম রাকিবুল আজাদের সঙ্গে পরিচয় হয়। আজাদও ওই মেডিকেল কলেজে পড়াশুনা করতেন। ২০২০ সালের মার্চ মাসে তারা দুইজন এমবিবিএস পড়া শেষ করে দেশে ফিরেন। পরে তারা দু’জনই একসঙ্গে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ইন্টার্নশিপে যোগ দেন। চীনে ডাক্তারি পড়ার সময় যে তাদের সম্পর্ক শুরু হয়েছিল তা ঢাকায় আসার পরেও অব্যাহত ছিল। তারা ঢাকায় এসে খিলক্ষেতের একটি বাসায় দু’জন একসঙ্গে থাকতেন।

তবে তাদের মধ্যে বিবাহবন্ধনের কোনো প্রমাণ পায়নি পুলিশ। তারা লিভটুগেদার করতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ ও বাসার মালিক।

ডা. এসএম রাকিবুল আজাদ পুলিশের ৩ দিনের রিমান্ডে রয়েছে। সোমা হত্যার ঘটনায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তার তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করছে মামলার তদন্তকারীরা। তবে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে যে, সোমা ও আজাদের মধ্যে মনোমালিন্য হওয়াকে কেন্দ্র করে বা আজাদের দ্বিতীয় প্রেমকে কেন্দ্র করে খুনের ঘটনা ঘটতে পারে।

গত ২৫শে জানুয়ারি সকালে খিলক্ষেতের নামাপাড়ার ১৯৬/২ নম্বর বাড়ির চারতলার ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে সোমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় তার দুই হাত ও গলায় কালো স্কচটেপ দিয়ে প্যাঁচানো ছিল। এ ঘটনায় নিহতের বাবা আতাউর রহমান বাদী হয়ে ডা. এসএম রাকিবুল আজাদকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় পুলিশ ডা. আজাদকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করলে আদালত তাকে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খিলক্ষেত থানার এসআই মো. মোফাখ্‌খারুল ইসলাম মানবজমিনকে জানান, ‘আজাদ এখন পুলিশের রিমান্ডে আছেন। আমরা নিহতের বাসা থেকে বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করেছি। আলামতগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। আজাদ ও সোমার মধ্যে মনোমালিন্য থেকে এ হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে। এ ছাড়া দ্বিতীয় প্রেমকে ঘিরে এ হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে বলেও আমাদের ধারণা। আমরা তদন্ত অব্যাহত রেখেছি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চীনে ডাক্তারি পড়ার সময় আজাদ ও সোমার পরিচয় হয়। এরপর থেকেই তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের দু’জনের মধ্যে কথা ছিল যে, ঢাকায় ইন্টার্নি করে তারা বিয়ে করবে। আর ৩ মাস হলেই তাদের ইন্টার্নি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, তার আগেই সোমা খুন হয়েছেন। করোনার মধ্যে তারা ঢাকার করোনার বিশেষায়িত হাসপাতাল কুর্মিটোলা হাসপাতালে রোগীদের সেবা দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, ডা. আজাদ পুলিশি রিমান্ডে দাবি করেছেন যে, ঘটনার দিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে হাসপাতাল থেকে ফিরে দরজা ভেঙে বাসায় ঢুকেছেন। এরপর তিনি দেখতে পেয়েছেন যে, সোমার মুখমণ্ডল পলিথিন দিয়ে প্যাঁচানো। তার দুইহাত ও দুই পা স্কচটেপ দিয়ে বাঁধা ছিল। এরপর তাকে কোলে নিয়ে আজাদ অজ্ঞান হয়ে পড়েন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জ্ঞান ফিরে বিষয়টি তিনি বাড়িওয়ালাকে জানান। তবে তার এ কথায় বিস্তর ফারাক রয়েছে বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

সূত্র জানায়, ডা. আজাদের সঙ্গে কুর্মিটোলা হাসপাতালের এক নারী চিকিৎসকের নতুনভাবে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। এটি জেনে ছিলেন সোমা। এতে তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটির সৃষ্টি হয়। সোমা তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু, আজাদ তাকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছিলেন না। এ বিষয়ে বাড়িওয়ালা ফাহাদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, দুইরুমের ওই বাসাটি স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে তারা ভাড়া নেন। দু’জনেই নিজেদের চিকিৎসক পরিচয় দেন। মাঝে-মধ্যে ঝগড়া-ঝাঁটি লাগতো।  তিনি জানান, পুলিশ যখন লাশ উদ্ধারে আসেন, তখন দরজা খোলা ছিল। দরজা ভাঙা বলতে ছিটকিনি ওঠানো ছিল।
নিহতের বাবা রাজশাহীতে প্রাণিসম্পদ বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তা আতাউর রহমান জানান, লন্ডনে চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চ শিক্ষা নেয়ার স্বপ্ন ছিল সোমার। করোনার মধ্যে তার মেয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে কাজও করেছে। কিন্তু তার আগেই রাকিব আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। মেয়ে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031