আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতিতে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন ।  দেশে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসকদের বিরুদ্ধে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকারাবদ্ধ। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি পরিচালিত হবে।

ক্ষমতা নেয়ার পর এই প্রথম প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট সফর করেন। এসময় প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ছিলেন নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিনকিন ।

প্রেসিডেন্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার ঐতিহ্যগত মিত্রদের গুরুত্ব দেয়া সহ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার ও বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক  শ্রদ্ধা ও মর্যাদাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করবে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব মঞ্চে আবার পদার্পণ করেছে এবং বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তিনি বলেন, আমাদের সামনে রয়েছে বিশাল সব চ্যালেঞ্জ। বৈশ্বিক সার্বজনীন অধিকার প্রতিষ্ঠা ও আইনের শাসনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন হবে আমাদের শক্তির ভিত্তি। যদিও এই মূল্যবোধের অনেক বিষয়  সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাপের মুখে রয়েছে।

আমরা নিজেরাও এর জন্য লড়াই করছি। তিনি বলেন, আমেরিকা তার জোট পুনর্গঠন করতে মনোযোগী হবে। জোট  হচ্ছে আমাদের বড় সম্পদের মধ্যে একটি। কূটনৈতিতে নেতৃত্ব দেয়া মানে জোট ও অংশীদারদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন চায়না সম্পর্কে বেশি কিছু না বলেই উল্লেখ করেছেন, চায়নার অর্থনৈতিক পীড়নকে মোকাবিলা করা হবে। মানবাধিকারের ওপর চায়নার আক্রমণ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাদের নেতিবাচক দৌরাত্ম্যকে যুক্তরাষ্ট্র মোকাবিলা করবে বলে তিনি বলেন। ইরানের সাথে পারমাণবিক সমঝোতাসহ ইসরাইল-প্যালেস্টাইন বিরোধ নিয়ে কোন বক্তব্য প্রদান করেননি প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

পররাষ্ট্র দপ্তরে উপস্থিত ও নানাপ্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেয়া কূটনীতিকদের উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস ক্ষমতা নিয়ে দৃঢ়তার সাথে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান। কাজের মাধ্যমে জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন কিভাবে হবে, এ বিষয়কে প্রাধান্য দেয়ার জন্য তাঁরা মার্কিন কূটনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানান।

স্টেইট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা কর্মচারীদের উদ্দেশে দেয়া ২০ মিনিটব্যাপী বক্তব্যে বাইডেন তাঁর পূর্বসূরির সকল নীতি ঝেড়ে ফেলার ইঙ্গিত দেন। ইয়েমেন যুদ্ধকে একটি মানবিক বিপর্যয় আখ্যা দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেন যুদ্ধে আক্রমণাত্মক সকল সমর্থন বন্ধ করবে। তাঁর প্রশাসন এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি দ্বন্দ্ব ও চলমান বিরোধ নিরসনে একজন কূটনৈতিককে নিয়োগ দেবে। তিনি বলেন, জার্মানিতে মার্কিন সেনাদের পুনঃমোতায়েন বন্ধ করা হবে। বাইডেন মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানান। তিনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শিগগিরই ফিরে যেতে সামরিক জান্তার প্রতি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরই নানা ফন্দি করে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর অন্যতম ছিলো, বছরে বছরে মাত্র ১৫ হাজার শরণার্থী গ্রহণের সীমা নির্ধারণ করে দেয়া। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা কারণে বিতাড়িত হওয়া লোকজনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে মানবিক আশ্রয় গ্রহণের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে।

যুক্তরাষ্ট্র রিফিউজি গ্রহণের বার্ষিক কোটা বৃদ্ধি করবে বলে জানান প্রেসিডেন্ট। কি পরিমাণ রিফিউজি আমেরিকা প্রতি বছর গ্রহণ করবে তা তিনি উল্লেখ করেন নি। চলতি অর্থ বছরে ট্রাম্প প্রশাসন মাত্র ১৫ হাজার রিফিউজি সংখ্যা নির্ধারণ করেছিল। তবে বাইডেন এই সংখ্যা ১লাখ ২৫ হাজারে বর্ধিত করতে ইচ্ছুক বলে জানা গেছে। তাঁর প্রশাসনে এই সংখ্যা যাই নির্ধারণ করুক এক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অনুমোদন লাগবে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031