আমি আমার স্যুট পাল্টে জিনস এবং চাক টেইলার্সের পোশাক পরলাম। আমার লস অ্যানজেলেস অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার পথে আমি এক টিন বিস্কুট একটি উৎসবের রাঙানো রিবনে আচ্ছাদিত করে সঙ্গে নিলাম। একটু দম নিয়ে আমি রওয়ানা হলাম ডগের বাসার দিকে। যেতে যেতে আমি ভাবছিলাম প্রথম মুহূর্তগুলো কীভাবে কাটবে? আমার মাথার মধ্যে ঘুরছিল কীভাবে এই সময়টাতে সঠিক কাজটি করা যায়। বিস্কুটের টিনটি আমার পাশের সিটেই রেখেছিলাম যা আমার অবস্থার নীরব সাক্ষ্য দিচ্ছিল। বাচ্চারা কি ভাবছে এই বিস্কুট সত্যিই খুব মজাদার নাকি অদ্ভুত রকমের। রিবন একটু বেশিই লাগানো হয়েছিল।

রিবন সত্যিকার অর্থেই বেশি লাগানো হয়েছিল।

কিন্তু কোল এবং এলা খুব একটা আতিথেয়তাপূর্ণ ছিল না। তারাও আমার মতোই আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছে। আমরা অল্প সময়ই কথা বললাম। এর পরপরই ডগের কারে চড়ে ডিনারের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লাম। ডগ এবং আমি দু’জন মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম বাচ্চারা যেখানে খেতে যেতে পছন্দ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমরা সেখানেই যাবো। তারা প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়েতে অবস্থিত রিল ইনে তাদের পছন্দের সি ফুডের রেস্তরাঁয় যেতে চাইলো। সেখানটায় যেতে প্রায় এক ঘণ্টার মতো সময় লেগেছে। এই চলার পথে আমাদের একে-অন্যের সঙ্গে একান্তে কিছু কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছিল। কোল তার পছন্দের মিউজিক অফিসিয়ানাডো বাজাচ্ছিল এবং তার সবশেষ কিছু ভ্রমণ আমার সঙ্গে শেয়ার করার জন্য উত্তেজিত ছিল। আমি তার কাছে রয় আয়ার্স সম্পর্কে শুনতে চাইলাম। আমি জানতে চাইলাম, তাকে সে চেনে কিনা?
আমি গানে ফিরলাম, ‘এভরিবডি লাভস দ্য সানশাইন। সানশাইন। ফকস গেট ডাউন ইন দ্য সানশাইন।’
তুমি কি তাকে জানো?
আমি অবশ্যই তাকে জানি।
আমরা গানটি একে অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছিলাম।
আমরা উপকূল ধরে যখন নৈশভোজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি তখন জানালার পাশ দিয়ে নানা দৃশ্য পেছনে চলে যাচ্ছে। আর ৪ জনে মিলে গান গাইছি। রিল ইন ছিল সাধারণ মানের কিন্তু খুবই পরিপাটি। আমরা ট্রে হাতে নিয়ে কাউন্টারে গিয়ে খাবারের অপেক্ষায় রইলাম। সেখানকার দেয়ালে ব্ল্যাকবোর্ডে নানান সামুদ্রিক মাছ দিয়ে তৈরি মেন্যুগুলো লেখা রয়েছে। ক্যাশিয়ার আমাদের একটি নাম্বার দিলেন। যখন আমাদের পালা এলো আমরা ট্রেটা নিয়ে গেলাম একটি পিকনিক টেবিলে। এখান থেকে সমুদ্র দেখা যায়। তখন সবেমাত্র সূর্য বিদায় নিচ্ছিল। যখন আমাদের খাওয়া শেষ হলো তখন কোল এবং এলা বললো যে তারা কোলের স্কুলে যাবে সেখানে তাদের বেশ ক’জন বন্ধুর আঁকা ছবির প্রদর্শনী হবে। আমরা সেই অনুষ্ঠানে যেতে চাই কিনা তারা তা জানতে চাইলো।

আমি বললাম, অবশ্যই। আমি এমনভাবে বললাম যেন এটা বলাই স্বাভাবিক। বলার আওয়াজটি আমার কাছে দুর্দান্ত মনে হচ্ছিল। এর পরপর ডগ আমাকে ফিসফিস করে বললো, তারা তোমাকে পছন্দ করবেই। তারা আমাকে কোনো কিছুতেই আমন্ত্রণ জানায়নি। আমরা একসঙ্গেই স্কুলে গেলাম। এলা ছিল ঈশ্বর প্রদত্ত একজন শিল্পী। সে আমাদেরকে প্রদর্শনী ঘুরিয়ে দেখালো বিজ্ঞ বিশেষজ্ঞের মতো। সেখানে তাদের অনেক বন্ধুও ছিল। শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে গল্প গুজব করে, মজা করে আমরা সময় কাটালাম। ডগ কৌতূক করে বললো, ঐ রাতটাতে আমি তাদের জীবনধারার সঙ্গে মিশে গিয়েছিলাম পুরোপুরি। কিন্তু আমি মনে করি, এটা আরো যথার্থ হবে যদি বলি সম্পর্কের জালে জড়িয়ে গেলাম। কোল এবং এলা আমার জীবনের ভেতর ঢুকে গেল।
কমালা হ্যারিসের অটোবায়োগ্রাফি
‘দ্য ট্রুথ উই হোল্ড’ বই থেকে

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031