যে কোনো একটি জাতির জন্য ভাষাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মায়ের ভাষায় শিক্ষা নিতে পারা এবং মায়ের ভাষায় কথা বলতে গেলে সহজে আমরা শিখতে পারি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন।

কিন্তু দুর্ভাগ্য যে ধীরে ধীরে অনেক ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। তারপরও সারাবিশ্বব্যাপী ভাষার যেই বৈচিত্র্য রয়েছে, তা সংরক্ষণ, তার চর্চা এবং বিকাশ একান্তভাবে প্রয়োজন।

রোববার ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক ২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি যখন আমরা আমাদের ভাষা দিবস হিসেবে ব্যবহার করছি, শহীদ দিবস হিসেবে পালন করে যাচ্ছি এবং ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমরা সেই সাথে সাথে সারাবিশ্বের সকল ভাষাপ্রেমীদের প্রতিও আমি শ্রদ্ধা জানাই।

মাতৃভাষায় শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই অন্য ভাষা শিখতে হবে, সেই সাথে সাথে মাতৃভাষাও আমাদেরকে শিখতে হবে।”

বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর ভাষাও যেন সংরক্ষণ করা যায় এবং তারা যেন সেই ভাষায় শিক্ষা নিতে পারে, সেজন্য সরকারের প্রচেষ্টার কথাও জানান শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে নিজ নিজ মাতৃভাষা সংরক্ষণ,পুনরুজ্জীবন, বিকাশ, চর্চা, প্রচার-প্রসারে অবদান রাখায় তিন ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠান ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক’ পান।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক ২০২১’ বিশিষ্ট নাগরিক ও তাদের প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় ভাষা আন্দোলনের সংগ্রামের পথ বেয়ে মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, “যার নেতৃত্বে এই ভাষা আন্দোলনের শুরু, আর ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা।

“ভাষা আন্দোলন থেকেই তিনি বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। এবং তারই নেতত্বে আমরা বিজয় অর্জন করি, স্বাধীন রাষ্ট্র পাই, স্বাধীন জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পাই।”

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এবার স্বশরীরে শহীদ মিনার যেতে না পারায় আক্ষেপও প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

ইউনেস্কোর বাংলাদেশ মিশনের প্রধান বিয়াত্রিস কালদুনও ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সচিব মো.মাহবুব হোসেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জীনাত ইমতিয়াজ আলী উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে মাতৃভাষা সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন, বিকাশ, চর্চা, প্রচার-প্রসারে অবদানের জন্য জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামসহ তিন ব্যক্তি এবং এক প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রথমবারের মত তুলে দেওয়া হল ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক’।

অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জাতীয় পর্যায়ে মাতৃভাষার সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন ও বিকাশে অবদানের জন্য ২০২১ সালের এই সম্মননা পেলেন।
এছাড়া জাতীয় পর্যায়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণে অবদানের জন্য খাগড়াছড়ির জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক পেয়েছেন।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উজবেকিস্তানের গবেষক ইসমাইলভ গুলম মিরজায়েভিচ এবং লাতিন আমেরিকার আদি ভাষাগুলো নিয়ে কাজ করা বলিভিয়ার অনলাইন উদ্যোগ অ্যাক্টিভিজমো লেংকুয়াস এ বছর বাংলাদেশ সরকারের এ সম্মাননা পেয়েছেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031