সততা, দক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে মেরিন গ্র্যাজুয়েটদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । তিনি বলেন, আমাদের ক্যাডেটরা আজ নতুন জীবনে পদার্পণ করবেন। সততা, দক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যাতে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। মনে রাখতে হবে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি।

গতকাল চট্টগ্রামস্থ বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে ৫৫ ব্যাচের ক্যাডেটদের মুজিবর্ষ গ্র্যাজুয়েশন প্যারেডে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী ৫৫ ব্যাচের ক্যাডেটদের মনমুগ্ধকর কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন।

অনুষ্ঠান থেকে তাকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী অনুষ্ঠানে পাসিং আউট ক্যাডেটদের মাঝে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণ পদক এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন পদক প্রদান করেন। চিফ ক্যাডেট ক্যাপ্টেন আবির মোহাম্মদ সালমান নূর সার্বিক বিবেচনায় সফল চৌকস ক্যাডেট হিসাবে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক লাভ করেন। অনুষ্ঠানে ক্যাডেটদের শপথ বাক্য পাঠ করান প্রতিষ্ঠানের কমান্ড্যান্ট মেরিন ইঞ্জিনিয়ার ড. সাজ্জাদ হুসেইন। এবারের ৫৫ ব্যাচে ১৯২ জনসহ এই মেরিন একাডেমি থেকে এ পর্যন্ত পাসিং আউট ক্যাডেটের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার দাঁড়িয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মেরিন একাডেমির লেকে দু’টি প্রশিক্ষণ বোটের কমিশনিং এবং পোস্ট-সি ক্যাডেট বণ্টকের (১২০ জন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন) নবায়ন করেন। প্রধানমন্ত্রী পাসিং আউট ক্যাডেটদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সমুদ্রচারণ বিষয়টা বেশ চ্যালেঞ্জিং, খুব কঠিন একটা দায়িত্ব। কিন্তু দায়িত্বটা পালন করার মতো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তোমরা কর্মক্ষেত্রে যোগ দেবে। তিনি বলেন, জাতির পিতার হাতে গড়া এই প্রতিষ্ঠানটি প্রায় মুমূর্ষু অবস্থায় সরকার পেয়েছিল। কাজেই তা উন্নত করার জন্য ব্যাপক কর্মসূচিও সরকার বাস্তবায়ন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি- সরকারি ৫টি ও বেসরকারি ৬টিসহ সমুদ্র-বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী, আমরা আরো চারটি মেরিন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছি। যা এ বছরই চালু হচ্ছে। তিনি বলেন, তার সরকার জাহাজ চলাচলে উচ্চতর শিক্ষার প্রবর্তনের জন্য ২০১৩ সালে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি’ প্রতিষ্ঠা করেছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর ছেলে-মেয়েদের জন্য শিক্ষার বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আওতায় তোমাদের বিদ্যমান তিন বছর মেয়াদি ব্যাচেলর অব মেরিটাইম সাইন্স পাস ডিগ্রি কোর্সকে, চার বছর মেয়াদি অনার্স কোর্সে উন্নীত করা হয়েছে। পাশাপাশি, প্রবর্তন করা হয়েছে ‘মাস্টার অব মেরিটাইম সায়েন্স’ ডিগ্রি কোর্স। শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে সর্বোচ্চ শিক্ষাটা গ্রহণ করা দরকার, সেভাবেই প্রশিক্ষিতও হতে হবে। তাই, সে সুযোগটা আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি। বিগত ১০ বছরে এই একাডেমির শিক্ষাদান ট্র্যাডিশনাল থেকে ডিজিটালে রূপান্তরিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্য মার্চেন্ট নেভি ট্রেনিং বোর্ডের স্বীকৃতিসহ অর্জিত হয়েছে নানাবিধ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তিনি বলেন, একাডেমির নটিক্যাল প্রশিক্ষণকে উন্নততর করার লক্ষ্যে, ২০১৯ সালে একাডেমিতে স্থাপন করা হয়েছে ‘নেভিগেশন সিমুলেটর’। পাশাপাশি, এ বছরই উন্নততর মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রশিক্ষণের স্বার্থে চলমান রয়েছে ‘ইঞ্জিন কন্ট্রোল সিমুলেটর’ স্থাপনের প্রক্রিয়া। অর্থাৎ এই একাডেমিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ আমরা দিতে যাচ্ছি যাতে আমাদের ক্যাডেটরা দেশে এবং বিদেশে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে। তিনি বলেন, একাডেমির প্রায় সাড়ে চার হাজার প্রশিক্ষিত ক্যাডেট দেশে ও বিদেশের সমুদ্রগামী জাহাজে সেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রতি বছরে আয় করে আনছে প্রায় ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলমান করোনাকালেও এই ধারা অব্যাহত রয়েছে।

তিনি মেরিন একাডেমির উন্নয়নের সরকার গৃহীত পদক্ষেপের উল্লেখ করে বলেন, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১৬৫ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো একাডেমির পতেঙ্গা-প্রান্তে দৃষ্টিনন্দন প্রবেশপথ নির্মাণ, দু’টি প্রশিক্ষণ বোটের কমিশনিং এবং পোস্ট-সি ক্যাডেট বণ্টকের নবায়ন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১-২০৪১ এই ২০ বছর মেয়াদি দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি এবং ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। অচিরেই বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত ও সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে ইন্‌শাআল্লাহ। আর ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ একটি দেশ।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031