দেশের ৫১ বিশিষ্ট নাগরিক কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের মামলা, হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন তারা।

রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তারকৃত লেখক মুশতাক আহমেদ দীর্ঘ ২৯৫ দিন কারাবাসের পর অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কারাগারে আটক অবস্থায় লেখক মুশতাকের এই মৃত্যুকে আমরা রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড বলে মনে করি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই রাষ্ট্রীয় হত্যাকা-ের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সভা-সামাবেশ ও আন্দোলন চলাকালীন সময়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সংগঠনগুলোর মশাল মিছিলে পুলিশ ন্যাক্কারজনকভাবে আক্রমণ চালায়। এসময় কমপক্ষে ৩০ জন আন্দোলনরত অধিকার কর্মীকে আহত এবং সাত জন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অপরদিকে, খুলনার পাটকল শ্রমিক নেতা ও শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক রুহুল আমিন এই আন্দোলনের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ কর্মসুচি ঘোষণা করলে খুলনার ডিবি পুলিশের  একটি দল রাতে তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রুহুল আমিনের নামে অন্যায্য, অসমীচীন ও নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয় এবং খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাকে দুই দিনের রিমান্ডে দেন।

এছাড়া ঢাকার শাহবাগে মশাল মিছিল থেকে আটককৃত ৭ শিক্ষার্থীর নামে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে একটি নিবর্তনমূলক মামলা শাহবাগ থানায় করা হয় এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০০-১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই ঘটনায় আমরা সাধারণ নাগরিকবৃন্দ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। আমরা এই মামলা হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিবৃতিদাতারা ঔপনিবেশিক শাসন আমলের অপরাধ আইন দ-বিধি-১৮৬০ ও নিপীড়নমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো দানবীয় আইন ব্যবহার করবার পরিপ্রেক্ষিতে, নাগরিক সমাজ প্রতিনিধিরা তীব্র প্রতিবাদের সাথে পাঁচটি দাবি পেশ করেছেন।

বিবৃতিতে সই করেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনু মুহাম্মদ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, লেখক রেহনুমা আহমেদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এর প্রধান নির্বাহী ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আলোকচিত্রী শহিদুল আহমেদ, শিক্ষক ও অধিকার কর্মী সি আর আবরার, সামাজিক কর্মী, নারীবাদী এবং পরিবেশবাদী খুশি কবীর, নারী অধিকার আন্দোলন কর্মী ফরিদা আক্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৌভিক রেজা, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আদিলুর রহমান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস, অধিকার কর্মী নাসিরুদ্দিন এলান, মানবাধিবার কর্মী নুর খান প্রমুখ।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031