‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাজীবন দুঃখ ভোগ করল বাংলাদেশ শুধু কিছু বেইমান ও বিশ্বাসঘাতকের জন্য। আমরা সাধারণত মীরজাফর আলী খাঁর কথাই বলে থাকি। কিন্তু এর আগেও ১৫৭৬ সালে বাংলার স্বাধীন রাজা ছিল দাউদ কারানী। দাউদ কারানীর উজির শ্রীহরি বিক্রম-আদিত্য এবং সেনাপতি কাদলু লোহানী বেইমানি করে
মুঘলদের দলে যোগদান করে। রাজমাবাদের যুদ্ধে দাউদ কারানীকে পরাজিত, বন্দি ও হত্যা করে বাংলাদেশ মুঘলদের হাতে তুলে দেয়। এর পরও বহু বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এই বাঙালি জাত। একে অন্যের সঙ্গে গোলমাল করে বিদেশি প্রভুকে ডেকে এনেছে লোভের বশবর্তী হয়ে। মীরজাফর আনল ইংরেজকে,
সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করল বিশ্বাসঘাতকতা করে; সিপাহি বিদ্রোহ শুরু হয় ব্যারাকপুর থেকে। আবার বাংলাদেশে লোকের অভাব হয় না ইংরেজকে সাহায্য করার। ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত এই মাটির ছেলেদের ধরিয়ে দিয়ে ফাঁসি দিয়েছে এ দেশের লোকরাই সামান্য টাকা বা প্রমোশনের জন্য।পাকিস্তান হওয়ার পরও দালালি করার মতো লোকের অভাব হলো না, যারা সবকিছুই পশ্চিম পাকিস্তানে দিয়ে দিচ্ছে সামান্য লোভে। বাংলার স্বার্থ রক্ষার জন্য যারা সংগ্রাম করছে তাদের বুকে গুলি করতে বা কারাগারে বন্দি করতে এই দেশে সেই বিশ্বাসঘাতকদের অভাব হয়নি। এই সুজলা-সুফলা বাংলাদেশ এত
উর্বর; এখানে যেমন সোনার ফসল হয়, আবার পরগাছা আর আগাছাও বেশি জন্মে। জানি না বিশ্বাসঘাতকদের হাত থেকে এই দেশকে বাঁচানো যাবে কিনা!’
সূত্র : শেখ মুজিবুর রহমান, কারাগারের রোজনামচা, পৃষ্ঠা ১১১-১১২।
