ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আফগানিস্তান পরিস্থিতিকে বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িয়ে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন । আজ বুধবার সিরিজ বোমা হামলা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মসূচি শেষে দুপুর দেড়টায় সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ওই কক্ষে তালা দেন।

এছাড়াও গতকাল বিকেলে ৪টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আসিফ নজরুলকে ঢাবি থেকে চাকরিচ্যুতসহ দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে তার কুশপুত্তলিকাদাহ করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। পরে এই সংগঠনটির নেতাকর্মীরা তার অফিসে তালা লাগিয়ে দেন। কক্ষে তালা লাগিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা। আজ বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে তার কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা।

উল্লেখ্য, গত ১৬ আগস্ট অধ্যাপক আসিফ নজরুল তার ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কাবুল বিমানবন্দর ধরনের দৃশ্য বাংলাদেশেও হতে পারে’ লিখে পোস্ট দেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অধ্যাপক আসিফ নজরুলের কক্ষে অতিরিক্ত দুটি তালা ঝুলছে এবং তার কক্ষের দরজায় ও দেয়ালে ‘জামায়াত-শিবিরের এজেন্ট আসিফ নজরুলের বিচার চাই’, ‘আইএসআই’র পেইড এজেন্ট আসিফ নজরুলের বিচার চাই’, ‘দেশদ্রোহী আসিফ নজরুলের বিচার চাই’, ‘জঙ্গিবাদের মদদদাতা আসিফ নজরুলের বিচার চাই’, ‘তালেবানদের দালাল আসিফ নজরুলের বিচার চাই’ লেখা পোস্টার লাগানো রয়েছে।

আসিফ নজরুলের স্ট্যাটাসের প্রতিক্রিয়ায় সিরিজ বোমা হামলা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল শিক্ষক নামের কলঙ্ক। গণপিটুনি দিয়ে আসিফ নজরুল গংদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি থেকে বিতাড়িত করা হবে। তিনি (আসিফ নজরুল) এর আগেও এক বক্তৃতায় বলেছেন, কেউ শিবির করলে কী হয়েছে? শিবির হলেই তাকে মারতে হবে? আমরা বলতে চাই, কোনো ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখে না। শিবির করলেই তাকে মারতে হবে।’

লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘শিক্ষক জাতির বিবেক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে আমরা দেশপ্রেম, প্রগতিশীলতার চর্চা শিখেছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই অগণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য ছাত্রলীগের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে রাজপথে থাকেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল শিক্ষক নামের কলঙ্ক। তিনি বিভিন্ন সময় জামায়াত-শিবির এবং জঙ্গি বাহিনী নিয়ে উসকানিমূলক কথাবার্তা বলেন। তালেবানি আদর্শপুষ্ট বিএনপি-জামায়াতের দালালি করার জন্য এই শিক্ষক ফেসবুকে দুঃসাহস দেখিয়েছেন।’

প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে এই আসিফ নজরুলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত করার ব্যবস্থা করুন। আপনারা যদি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন, তাহলে আমরাই দায়িত্ব হাতে তুলে নেব। আমরা জানি কীভাবে এদের শায়েস্তা করতে হয়। এর থেকে অনেক বড় রাঘববোয়ালরা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছেন। সুতরাং দুঃসাহস দেখানোর কোনো অবকাশ নেই। আমরাই তাদের রুখে দাঁড়াবো।’

কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ও অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে যেকোনো মূল্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। আসিফ নজরুলকে উদ্দেশ করে আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘আমরা শিক্ষকদের সম্মান করি। কিন্তু আপনি (আসিফ নজরুল) বারবার সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য বাসায় বসে ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্য দেন। আপনার যদি পাকিস্তানে যাওয়ার ইচ্ছা থাকে, তাহলে পাসপোর্ট করে পাকিস্তান চলে যান। দেশের উন্নয়নের বিপক্ষে অবস্থান না নিয়ে নুরু গং, শিবির গং ও জঙ্গিগোষ্ঠীর পক্ষে অবস্থান নেন, তাহলে মনে রাখবেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ৫০ লাখ নেতাকর্মীর সংগঠন। বাংলাদেশে অবস্থান করে দেশের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মেনে নেবে না। আমরা যদি ধাওয়া করি- তাহলে পাকিস্তান পালানোর জায়গা পাবেন না’, বলেন তিনি।

ছাত্রলীগ সভাপতি আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন, ২০০৫ সালের এই দিনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সারা দেশের প্রত্যেকটি জায়গায় একযোগে বোমা হামলা করেছিল জঙ্গিগোষ্ঠী। আজ আমরা সেই দিনের হামলার ধিক্কার জানিয়ে কালো পতাকা মিছিল করেছি। জঙ্গিরা কেউ বাংলাদেশের জনগণ নয়। তাদের বাড়ি পাকিস্তান, তারা তালেবানের বন্ধু।’

এ বিষয়ে অধ্যাপক আসিফ নজরুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার যা বক্তব্য আমি তা আমার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দিয়েছি। আমার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো মহল থেকে যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হচ্ছে আমি তাতে বিস্মিত ও মর্মাহত। আমার স্ট্যাটাসে কাউকে উল্লেখ করে কিছু বলা হয়নি। এখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা বলা হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচনে বিজয়ী সরকার দৃঢ়ভাবে দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে বলে এ ধরনের মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়। এমন একটা কথা সম্ভাবনা হিসেবে আমার স্ট্যাটাসে বলার চেষ্টা করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশার সাথে উগ্রবাদ বা মৌলবাদকে উৎসাহিত করার কোনো সম্পক নেই। উগ্রবাদী ও মৌলবাদীরা বরং সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিপক্ষ হয়। আশা করি আমার বক্তব্য নিয়ে ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটবে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।’

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031