বেড়েছে সামাজিক অস্থিরতা অতিমারীর কারণে দেড় বছর ধরে । কর্মজীবী মানুষের আয়-উপার্জন কমেছে। বেড়েছে মানুষের দারিদ্র্য। এসব কারণেই বৃদ্ধি পেয়েছে পারিবারিক সহিংসতা। সেই সঙ্গে বেড়েছে বিবাহবিচ্ছেদ। এক পরিসংখ্যানে এসেছে, ৭০ শতাংশ ডিভোর্সই নারীরা দিয়েছেন। তাই এর কারণ অনুসন্ধান প্রয়োজন বলে মনে করেন সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম।

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তাদের ভূমিকাবিষয়ক এক ভার্চুয়াল কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম আরও বলেন, ‘এ কথা সত্য যে, সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থা ও সামাজিক পরিস্থিতির সঙ্গে অপরাধপ্রবণতা বাড়ে-কমে। জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তাদের বক্তব্যে সাম্প্রতিককালে কী ধরনের সহিংসতা বেড়েছে, তা এসেছে। এ জন্য সামাজিক আন্দোলনের প্রয়োজন আছে, যে কাজ বেসরকারি সংস্থাগুলো করতে পারে।’

জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন গতকাল শনিবার সকালে এ কর্মশালার আয়োজন করে।

সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকারি লিগ্যাল এইড সেবার পরিধি আরও বৃদ্ধির চিন্তাভাবনা করতে হবে। এখানে আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে মনে হয়। এই সাপোর্টগুলো না দেওয়ার কারণে দেখা যায়, অনেক সময় সাক্ষ্য নষ্ট হয়ে যায় ও ভিকটিম নানাভাবে বিভ্রান্তিতে পড়ে। সুতরাং এই বিষয়গুলো ধীরে ধীরে লিগ্যাল এইডে এনে পর্যায়ক্রমে পরিধি বাড়াতে হবে।’ সরকারি আইনি সহায়তার বিষয়ে জনসচেতনতা ও প্রচারের ওপর জোর দিয়ে বিচারপতি বলেন, ‘পরিসেবা বাড়াতে হলে উপজেলা ও ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড কমিটির কার্যক্রমকে আরেকটু গতিশীল করতে হবে। প্রতিবন্ধীদের আইনি সহায়তায় প্যানেল আইনজীবীদের জন্য পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করা জরুরি। কেননা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে ডিল করা ও আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয়।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘৬৪টি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১ লাখ ২ হাজার ৬৬ জনকে আইনি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মামলায় সহায়তা করা হয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৬৮৭ জনকে। ৪৯ হাজার ৯২৭ জনকে বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তি সেবা দেওয়া হয়েছে। হটলাইনের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হয়েছে ১৭ হাজার ৩২৮টি। মোট ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৯৮ জনকে আইনি সহায়তা ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

সভাপতির বক্তব্যে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘লিগ্যাল এইড সার্ভিস প্রান্তিক ও দুস্থ মানুষের জন্য বিশেষ করে দুস্থ ও পরিত্যক্ত নারীর জন্য অত্যন্ত জরুরি। এর পরিধি আরও কীভাবে বাড়াতে ও কার্যকর করতে পারি, সবাইকে তা নিয়ে চিন্তা ও কাজ করতে হবে।’ নারীর ডিভোর্স দেওয়ার হার বৃদ্ধি প্রসঙ্গে শাহীন আনাম বলেন, ‘একজন নারী যখন ডিভোর্স দেন, তখন অনেক অসহায় অবস্থায় থেকেই দেন। তখন তার আর কোনো উপায় থাকে না। খুব গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে, কেন ডিভোর্সের হার বাড়ছে? এগুলো নিয়ে আলোচনা করা দরকার।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি সমন্বয়কারী রুমা সুলতানা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এতে বলা হয়, ২০২০ সালে কোভিড শুরুর পর দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে গেছে। বাংলাদেশে এ অবস্থা পর্যবেক্ষণে ফাউন্ডেশন মুঠোফোনে জরিপ করে। ৫৩ জেলায় গত বছরের এপ্রিল থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৫ হাজার মানুষের মধ্যে চলে এ জরিপ কার্যক্রম। জরিপে দেখা যায়, ৪৮ হাজার ২৩৩ নারী ও শিশু পারিবারিক ও অন্যান্য ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ নারী ও ৬৭ শতাংশ শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। রুমা সুলতানার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ১৯ জেলার জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা কর্মশালায় অংশ নেন ও বক্তব্য রাখেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031