বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মানসিকভাবে শক্তিশালী মনে হলেও শারীরিকভাবে ভালো নেই। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী কোভিড-পরবর্তী নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। শরীর একেবারে দুর্বল। কিডনি জটিলতার পাশাপাশি খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণের বাইরে। থেমে থেমে জ্বরও আসছে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গত ১২ অক্টোবর জ্বর আসায় খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার সঙ্গে হাসপাতালে আছেন ব্যক্তিগত স্টাফ ফাতেমা বেগম ও সুমি।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিএনপি চেয়ারপারসনকে এন্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে। তবে শারীরিক সমস্যা থাকলেও মানসিকভাবে তিনি বেশ শক্তিশালী।খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা জানান, কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। কিন্তু কয়েকটি পরীক্ষায় কিছু সমস্যা ধরা পড়ায় হাসপাতালে আরও থাকতে হচ্ছে। তিনি কিডনি সমস্যায় ভুগছেন। রক্তের হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্যে আবার থেমে থেমে জ্বর আসায় মেডিক্যাল বোর্ড এখনো উদ্বিগ্ন। এর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। এজন্য একাধিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হচ্ছে। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। খাওয়া-দাওয়াও খুবই পরিমাণমাফিক সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থারাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। এপ্রিলে তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। করোনা-পরবর্তী জটিলতায় আগের সমস্যা আবার নতুন করে দেখা দিয়েছে। জ্বর নিয়ন্ত্রণে না আসার অন্য চিকিৎসাও সেভাবে করানো যাচ্ছে না। তবে অক্সিজেন ছাড়াই শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। ঘুম কম হচ্ছে। দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য ওষুধে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

চিকিৎসকরা আরও জানান, খালেদা জিয়ার বয়স ও শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় নিলে দেশে নয়, এখন তার বিদেশে চিকিৎসা প্রয়োজন। একসঙ্গে অনেকগুলো রোগের চিকিৎসার জন্য যে ধরনের আধুনিক মেডিক্যাল সেন্টার দরকার, বাংলাদেশে সেটা নেই।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়ে তার ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়মিত আপডেট জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। মির্জা ফখরুল দুই দিন পরপর খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে গিয়ে দেখে আসেন। গত বুধবারও হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখে এসেছেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। উনার তো অনেকগুলো অসুখ আছে, সেইগুলোর পরীক্ষা করে নিয়মিত ওষুধ দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। কবে বাসায় ফিরতে পারবেন, তা তো নির্দিষ্ট করে এখনই বলা যাচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে তাকে বিদেশ নিতে হবে। দেশে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সম্ভব নয়।’

খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নতুন করে সরকারের কাছে আবেদন করা হবে কিনা জানতে চাইলে তার বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো দুবার আবেদন করেছি। তারপরও তো অনুমতি দেওয়া হয়নি। এবার তার (খালেদা জিয়া) সঙ্গে আমার কথা হয়নি। তার কী মতামত, সেটা না নিয়ে কিছু করা যাবে না। মতামত নেওয়ার পর এই (আবেদন) বিষয়ে চিন্তা করা যেতে পারে।’

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031