একুশের সেরা সাফল্য উনিশের হাত ধরে এলো ক্রীড়াঙ্গনে । ভারতকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতল বাংলাদেশ।

ব্যর্থতার মিছিল যেন শেষ হবার ছিল না। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ব্যর্থ টাইগাররা। প্রথম রাউন্ডের বাধা পাড়ি দিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলেও সেখান থেকে কোনো জয় ছাড়াই বাড়ির পথ ধরলেন তারা। পুরো জাতির মন খারাপ হলো। তীর-ধনুক হাতে সরাসরি অলিম্পিক খেলতে গেলেন রোমান সানা। বিশ্বজোড়া খ্যাতি পাওয়া আরচারকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করল বাংলাদেশ। টোকিও অলিম্পিকে ব্যর্থ হয়ে ফিরলেন রোমান।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মালদ্বীপ গেল ফুটবল দল। আশায় বুক বেঁধেছিল দেশের মানুষ। দীর্ঘদিন পর শিরোপা খরা না হোক অন্তত ফাইনাল খেলার আশা পূরণ হবে! কিন্তু তাও হলো না। আশার গুঁড়েবালি! সদ্য শেষ হওয়া এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হকিতেও আশা করেছিল সমর্থকরা। আশরাফুল ইসলামরা ফাইনাল না খেলুক, নিদেনপক্ষে দুয়েকটা জয় কিংবা ড্র উপহার দিতে পারবেন হয়তো! সে আশাও পূরণ হলো না।

ব্যর্থতার মিছিল লম্বা থেকে আরও লম্বা হচ্ছিল। কিন্তু আর কত মেনে নেওয়া যায়! পত্রিকা অফিসে ফোন করে নিজেদের ক্ষোভ ঝাড়েন সমর্থকরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে ‘ পোস্টমর্টেম’ করেন ক্রিকেট-ফুটবলের। কিন্তু কিছুতেই যেন পিছু ছাড়ছিল না পরাজয়ের লজ্জা! অবশেষে গভীর রাতের অন্ধকারে চোখ ধাঁধাঁনো আলো নিয়ে দৃশ্যপটে হাজির ফুটবলের মেয়েরা। ‘ঘর-সংসার সামলানো’ মেয়েদের কী কাজ ফুটবল মাঠে!

ওদেরকে সন্তান পালন করতে দাও। রন্ধন শিল্পে হাত পাকাতে দাও। এসবই তাদের কাজে আসবে! এক দশক আগেও যারা ভুরু কুঁচকে এমনটা ভাবতেন নারী ফুটবলারদের নিয়ে, তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে বারবার দেখিয়ে দিচ্ছেন মারিয়া মান্ডারা। ২০১৮ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করেছেন তারা। অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করেছেন ২০১৭ সালে। সেই দলের অনেকেই ছিলেন গতকালের ফাইনালে। মারিয়া মান্ডা, আঁখি খাতুন, মনিকা চাকমা, রুপনা, অনাই মোগিনি, শামসুন্নাহার সিনিয়র, শামসুন্নাহার জুনিয়র, তহুরা খাতুন, রিপা, রিতুরা নিজেদেরকে মহামূল্যবান রত্ন হিসেবে প্রমাণ করলেন।

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সাধারণ দৃশ্য ছিল এমন; মহা উৎসাহে সদলবলে আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখতে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে হাজির হন দর্শকরা। টিকিট কিনতে খরচ করেন অর্থ ও অনেকটা সময়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ম্যাচ শেষ হওয়ার অনেকটা আগে বাড়ির পথ ধরেন তারা। দলের পরাজয়ের ইঙ্গিত পেলে কেই বা কষ্ট করে থাকতে চায় মাঠে! অথচ গতকাল কমলাপুর স্টেডিয়ামে শীতের কুয়াশা ছিল। ধুলো ছিল বাতাসে। প্রচ- ভিড়ের কারণে পরিবেশ ছিল গুমোট। কিন্ত এ সবের কে পাত্তা দেয়। প্রিয় দলের সাফল্য, প্রিয় বাংলাদেশের জয় দেখার জন্য আরও কত ত্যাগই না স্বীকার করা যায়!

হাজারো দর্শক ম্যাচ শেষ হওয়ার পরও গ্যালারি ছাড়েননি। তারা ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে মারিয়া মান্ডাদের বিজয়োৎসবে শামিল হয়েছেন। যাদের সুযোগ ছিল, গ্যালারির কাঁটাতারের পাশে এসে জানিয়েছেন অভিবাদন।

ফ্লাড লাইটের আলো অফিশিয়ালি বন্ধ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দর্শকরা মাঠে ছিলেন। বিজয় মিছিল করতে করতে বাড়ি ফিরেছেন তারা।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031