বেগম বিয়া শতবর্ষী বৃদ্ধ । তার ঠাঁই মেলেনি কোনো ঘরে। তিন দিন ধরে অবস্থান করছেন বাড়ির রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে। আগে ঘরের যে কোণে থাকতেন, সেখানে আপন ভাইপো মোটরসাইকেল রাখছেন। যার কারণে রোদ বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ার মধ্যেও থাকছেন রাস্তায়। ফেনী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের খলি জমদ্দারবাড়িতে শুক্রবার রাতে এমন অমানবিক দৃশ্য দেখা যায়।

তিন দিন ধরে এভাবে রাস্তায় থেকে গায়ের রং বিবর্ণ হয়ে গেছে বেগম বিয়ার। বাড়ির রাস্তায় সীমানা প্রাচীর থাকায় জীবজন্তুর হাত থেকে রক্ষা পেলেও মশার কামড় থেকে রক্ষা পাননি। খাবারও জোটেনি। এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক খাবার নিয়ে আসায় পেট ভরে খেয়ে দোয়া করলেন। বয়সের ভারে পরিষ্কার করে কথা বলতে পারেন না এই বৃদ্ধা।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মোস্তফা ও শাহ আলম জানান, বেগম বিয়ার বয়স প্রায় শত বছর। ৫০ বছর ধরে বাবার বাড়িতে বসবাস। পার্শ্ববর্তী এলাকা সোনাপুরে তার বিয়ে হয়েছিল। ছেলে-সন্তান না থাকায় সেখান থেকে চলে আসেন। একমাত্র ভাই রমজান আলীর সঙ্গে বসবাস। তিনিও মারা যান চল্লিশ বছর আগে। বাবার সম্পত্তি ভাইয়ের চার ছেলের কাছে বিক্রি করে দেন। শর্ত ছিল, তারা এই বৃদ্ধার আমৃত্যু ভরণ-পোষণ চালাবেন। কিন্তু এই বৃদ্ধা ভিক্ষা করে ও দান-অনুদান পেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এই রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার আর ঘরে ঠাঁই মেলেনি। তাকে বাড়ির রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মোতাহের হোসেন বলেন, স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসনের লোকজন দফায় দফায় বৈঠক করলেও ভাইপোদের কেউ এই বৃদ্ধাকে ঘরে নিতে রাজি হয়নি। গত তিন ধরে এভাবে খোলা আকাশের নিচে আছেন তিনি।

বর্তমানে বৃদ্ধার জায়গায় বসবাস করছে ভাইপো মো. দুলাল, মঈনুদ্দিন, জাফরউদ্দিন ও মো. ইব্রাহিম। মঈনুদ্দিন জানান, আমার ফুফু থেকে সম্পত্তি আমার মামা আমার মায়ের নামে কিনে দিয়েছেন। কোন শর্তে কিনে দিয়েছেন, কত টাকা দিয়ে কিনে দিয়েছেন, সে বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান মঈনুদ্দিন।

জাফরের স্ত্রী ফেরদৌস বলেন, আমার ফুফুশাশুড়ি প্রতিদিন ঘর নষ্ট করে রাখেন। আমাদের ঘরে জায়গা সংকুলান নেই। সেজন্য আমরা জায়গা দিতে পারছি না।

দুলালের স্ত্রী সেলিনা আকতার বলেন, তিনি ঘর নষ্ট করে রাখেন। ঘরের জায়গা নেই। এসবের কারণে ঘরে জায়গা দিতে পারিনি।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সহায়’-এর সভাপতি মনজিলা মিমি জানান, তিন দিন ধরে রাস্তায় থাকছে এমন খবর শুনে আমরা সেখানে গিয়ে দেখি বৃদ্ধার গায়ে মশা উড়ছে। মাটিতে শুয়ে আছেন। না খেয়ে আছে শুনে আমি খাবার কিনে দিয়েছি। উনি আগে যে ঘরে থাকতেন, সেখানে মোটরসাইকেল রাখায় তার থাকার জায়গা নেই। যার কারণে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।

ঘটনাস্থলে আসা পুলিশ কর্মকর্তা মনির হোসেন জানান, এভাবে তিন দিন ধরে রাস্তায় বসবাস করছে শুনে আমরা এসেছি। চেষ্টা করছি বৃদ্ধাকে বসবাসের সুযোগ করে দেওয়ার।

Share Now
March 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31