নির্বিঘ্ন ভোটের পর ফল পরিবেশন কেন্দ্রে তুমুল উত্তেজনার মধ্যে নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতকে ৩৪৩ ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে । খবর বিডিনিউজের।
গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী এই ফল ঘোষণা করেন। তবে তার কয়েক মিনিট আগে আগে হৈ চৈয়ের মধ্যে কারচুপির সন্দেহের কথা বলেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষিত ফল অনুযায়ী, ১০৫ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০ ভোট। বিদায়ী মেয়র সাক্কু টেবিল ঘড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট। তৃতীয় স্থানে থাকা নিজাম উদ্দিন কায়সার ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ২৯ হাজার ৯৯ ভোট। ফল ঘোষণার সময় ফল পরিবেশন কেন্দ্রেই ছিলেন সাক্কু; রিফাত না থাকলেও তার এজেন্ট-সমর্থকরা ছিলেন উপস্থিত।
প্রথম কাজ দুর্নীতির শ্বেতপত্র দেওয়া : বিগত সময়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে যেসব দুর্নীতি হয়েছে প্রথমেই সেসবের বিরুদ্ধে শ্বেতপত্র প্রকাশ করবেন বলে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন নবনির্বাচিত মেয়র আরফানুল হক রিফাত। ফলাফল ঘোষণা সময় রিফাত নগরীর মনোহরপুরে তার বাসায় ছিলেন। পরে সাংবাদিকরা সেখানে গেলে তিনি তাদের সঙ্গে বিজয়-পরবর্তী প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
মেয়র হিসেবে নিজের কাজের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে রিফাত বলেন, আমি প্রথমে প্রাধান্য দেব, আগেও বলেছি, সিটি করপোরেশনে গত ১০ বছর যারা দুর্নীতি করেছে সব দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করব আমি। এটা আমার প্রথম দায়িত্ব। আমি কুমিল্লার মানুষকে কথা দিয়েছি। আমি কথা রাখব। কুমিল্লার মানুষের সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে, জলাবদ্ধতা ও যানজট। এই দুটি সমস্যার সমাধান করার জন্য আমি এক বছর সময় নেব। এক বছরের মধ্যে মানুষের এই দুর্ভোগ শেষ করব। তবে একজন প্রাক্তন মেয়র হিসেবে সাক্কু সাহেব যদি এগিয়ে আসেন তাহলে অবশ্যই তার ভালো কাজগুলোকে গ্রহণ করবেন বলেও জানিয়েছেন নবনির্বাচিত এই মেয়র।
তিনি আরও বলেন, আমি আওয়ামী লীগ করি। কিন্তু আমি নগর ভবনকে আমার দলীয় কার্যালয় বানাব না। আমি দল-মত নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য কাজ করব। সবার জন্য আমার দরজা খুলে রাখব। এটা আমার কমিটমেন্ট। নৌকার এ বিজয়কে জনগণ ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার বিজয় হিসেবে অভিহিত করে রিফাত বলেন, এ বিজয় আমাদের প্রয়োজন ছিল। মানুষ আমাকে যেভাবে মূল্যায়ন করেছেন আমি সারাজীবন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। তাদের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি আমি জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করব।
রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, কুমিল্লা সিটির ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ ভোটারের মধ্যে ১০৫ কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬৪ জন। এর মধ্যে বৈধ ভোট ১ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪৫টি। ভোট গৃহীত হয়নি ৩১৯টি। ভোটের হার ৫৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। অর্থাৎ মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান বাতিল হওয়া ভোটে সংখ্যার কাছাকাছি।
কুমিল্লা পৌরসভার চেয়ারম্যান সাক্কু সিটি করপোরেশন হওয়ার পর দুটি ভোটেই মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১২ সালের নির্বাচনে তিনি ৬৫ হাজার ৫৭৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। সেবার আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আফজল খান পেয়েছিলেন ৩৬ হাজার ৪৭১ ভোট। সেবার ভোটের হার ছিল ৭৫ শতাংশ। ২০১৭ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে প্রার্থী হয়ে ৬৮ হাজার ৯৪৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন সাক্কু; সেবার তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আফজল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা। বর্তমানে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সীমা সেবার নৌকা প্রতীকে পেয়েছিলেন ৫৭ হাজার ৮৬৩। সেবার ভোটের হার ছিল ৬৪ শতাংশ।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031